জুমবাংলা ডেস্ক : একটা মেটে আলুর ওজন ৭৩ কিলোগ্রাম (কেজি)! এতো বড় আকারের আলু দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন জনতা। যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়ির মধুমেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে সেই আলু।
শুধু বিশালাকার এই আলুই নয়, এ মেলায় দেখানো হচ্ছে ছয় ফুট উচ্চতার একটি মানকচু, যার ওজন ৩৭ কেজি। ২৫ কেজি ওজনের একটি মিষ্টি কুমড়াও রয়েছে সেখানে। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন পাঁচটি পেঁয়াজ প্রদর্শিত হচ্ছে, এদের ওজন এক কেজি, আছে দশ কেজি ওজনের একটি স্কোয়াশও।
এরকম বাহারি সব কৃষিপণ্য দেখতে সাগরদাঁড়ির মধুমেলায় ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক জনতা। এসব পণ্যের সঙ্গে সেলফি তুলছেন অনেকে। কেউ বা ভিডিও করছেন।
কৃষির প্রচার ও প্রসারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়ে এ ‘কৃষিমেলা’র আয়োজন করা হয়েছে। কৃষিমেলায় বিভিন্ন স্টলে শোভা পাচ্ছে কৃষকের উৎপাদিত তিন শতাধিক কৃষিপণ্য। যা মেলায় আগত দর্শনার্থীদের হৃদয় কেড়েছে।
কৃষিমেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ কেশবপুর উপজেলার মানচিত্র। যা তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন বীজ দিয়ে। যা দেখে উচ্ছ্বসিত সব বয়সী মানুষ।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তারই স্মৃতিবিজড়িত যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে চলছে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা। এর বাড়তি আকর্ষণ কৃষিমেলা। কৃষিমেলার স্টলগুলোতে আরও শোভা পাচ্ছে হাজারী কলার কাঁদি, মনোলোভা লাউ, মুলা, ওলকপি, ব্রোকলি, রঙিন বাঁধাকপি, বারোমাসি কাঁঠাল, পেঁপে হত্যাদি কৃষিপণ্য।
মধুমেলায় যারা আসছেন তাদেরকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করছে ভেতরের কৃষিমেলা। বলা চলে অন্যান্য স্টলের থেকে কৃষিমেলার স্টলগুলোতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি একটু বেশি। মানুষ নিজে যেমন এসব কৃষিপণ্য দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন তেমনি সন্তানদেরকেও নানা জাতের কৃষিপণ্যের সাথে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছেন।
মেলায় কেশবপুর উপজেলার সুজাপুর গ্রামের কৃষক দেবু দাস এনেছেন ৭৩ কেজি ওজনের মেটে আলু, টিটাবাজিতপুর গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম এনেছেন প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার ৩৭ কেজি ওজনের মানকচু, সাতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোরশেদুল ইসলাম এনেছেন ৪৫ ইঞ্চি বেড়ের ২৫ কেজি ওজনের মিষ্টি কুমড়া।
এছাড়া হাজরাকাটি গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের ১০ কেজি ওজনের স্কোয়াশ, আলতাপোল গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমানের পাঁচটিতে এক কেজি ওজনের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। এছাড়া বস্তায় আদা চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট ট্রাইকো কম্পোস্টসহ বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনী হচ্ছে মেলায়।
এবারই প্রথম যশোর থেকে সাগরদাঁড়িতে মধুমেলা দেখতে এসেছে শিক্ষার্থী আবির বিন হেলাল। ২৫ কেজি ওজনের মিষ্টি কুমড়া দেখে সে খুবই উচ্ছ্বসিত। আবির বলে, এবারই প্রথম মেলায় এলাম। এরকম একটা আয়োজন হতে পারে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না।
লামিয়া শারমিনের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়। স্বামী আসলাম হোসেনের সঙ্গে পুরো মেলা ঘুরলেন। বললেন, খুব ভালো লেগেছে। নানা জাতের ফসলের বীজ দিয়ে একটা উপজেলার মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। খুবই সুন্দর দেখতে।
দর্শনার্থীরা জানান, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে এমন আয়োজন এমনিতেই ভালো লাগে। তার ওপর এবার কৃষিমেলা বাড়তি আকর্ষণ হয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে কৃষিপণ্যের সঙ্গে মানুষ পরিচিত হতে পারছেন। সন্তানদেরকেও পরিচিত করানো যাচ্ছে।
আলতাপোল গ্রামের হালিমা খাতুন বলেন, আমরা টেলিভিশন, ইউটিউবে দেখি মানুষ অনেক কিছু খায়। এর কোনোটার নাম জানি, কোনোটার জানি না। সাধারণত এগুলো আমাদের এখানের অপ্রচলিত কৃষিপণ্য হিসেবে পরিচিত। আবার নিজেরাও খাচ্ছি কিন্তু নাম জানি না- এমন পণ্যও আছে। মেলাতে এসে এগুলোর অনেকের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কৃষিমেলায় মূলত কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও প্রযুক্তি স্থান পেয়েছে। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে মধুমেলার ভেতর এ কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শন মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
Fact-checking বিস্তৃত করতে সরকার সমন্বিত উদ্যোগ নেবে : তথ্য উপদেষ্টা
প্রসঙ্গত, যশোর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মধুমেলা শুরু হয়েছে ২৪ জানুয়ারি। আগামী ৩১ জানুয়ারি এটি শেষ হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।