জুমবাংলা ডেস্ক : বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট। মাঝে বিজয় সরণি ও বনানী সিগনাল থাকার পরও মাত্র ১০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট আসা-যাওয়া করতে পারবেন ঢাকাবাসী। রাজধানীবাসীর জন্য এই অসাধ্য সাধন হবে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কল্যাণে।
ঢাকায় চলার চিরায়ত ধারণার বিপরীতে চোখের সামনে নিমেষেই গন্তব্যে পৌঁছানোর সুখচ্ছবি দেখাচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দর- এই পথটুকু যেতে যাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগে তাদের সামনে এক অসম্ভবকে সম্ভব করার হাতছানি।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনা রয়েছে কাওলা থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই চালু হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত। এ অংশে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। বাকি রয়েছে কিছু অংশের পিচ ঢালাই আর রোড মার্কিং।
তিন ভাগে করা হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। প্রথম পর্ব বিমানবন্দর থেকে বনানী। পরের অংশ বনানী থেকে মগবাজার আর শেষ ভাগ গিয়ে ঠেকবে কুতুবখালী। তবে এই দফায় প্রথম পর্ব আর দ্বিতীয় পর্বের কিছু অংশ অর্থাৎ তেজগাঁও পর্যন্ত কাজ শেষ প্রায় ৯৫ ভাগ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এ সড়কে যান চলাচলের আশা করছে কর্তৃপক্ষ। তাই আগস্টের মাঝামাঝি সব কাজ শেষ করতে চায় কর্তৃপক্ষ। শেষ মুহূর্তে চলছে পিচ ঢালাই ও রোড মার্কিংয়ের কাজ। এপাশে তৈরি হচ্ছে আপ ও ডাউন র্যামের কাজ, তৈরি হচ্ছে টোল প্লাজাও।
এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আকতার জানান, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যে অংশের উদ্বোধনের চিন্তা করা হচ্ছে, সে অংশের কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। এখন কিছু জায়গায় এক্সপানশন জয়েন্ট, র্যাম ডাউন, রোড মার্কিং এবং লাইটিংয়ের কাজ বাকি আছে। এগুলো অল্পদিনের মধ্যেই শেষ করা যাবে।
শতভাগ সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হলেও দুই মাস বাদেই ১০ মিনিটে কাওলা থেকে একটানে ফার্মগেট পর্যন্ত নিয়ে আসবে এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এই পথে বনানী, মহাখালী থাকবে ওঠানামর র্যাম। উঠতে হবে বিজয় সরণি থেকে আর নামা যাবে ফার্মগেটে।
সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের বড় প্রভাব হলো যারা বিমানবন্দর আসা-যাওয়া করবে, তারা দুটো র্যাম দিয়ে ফার্মগেট এসে নামতে পারবে এবং বিজয় সরণি থেকে উঠে সোজা বিমানবন্দর চলে যেতে পারবে। এর ফলে বিমানবন্দরের রাস্তায় যে জ্যাম হয়, সেটা অনেকাংশে কমে যাবে।
উড়াল এই সড়কে চলবে না থ্রি-হুইলার মোটরবাইক। কাওলা থেকে শেষ প্রান্তে টোল ১২০ টাকা আর অন্য যেকোনো প্রান্তে ১০০ টাকা। তবে এই স্বল্প যাত্রায় কিছু কম টোল নির্ধারণের প্রস্তাব থাকবে সেতু কর্তৃপক্ষের।
মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘এটা পিপিপির আওতায় হচ্ছে। তাই আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি যাতে টোলের পরিমাণ কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা যায়।’
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সড়ক আশীর্বাদ হয়ে আসছে এই নগরে। এই করিডোর গতি আনবে নগরে, বাঁচবে কর্মঘণ্টা। তবে ওঠানামার জায়গায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে জোর দেয়ার তাগিদ তাদের।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘যানবাহন আটকে না রেখে তারা যাতে সহজে চলে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এর ফলে নিচে অনেক জায়গা খালি হবে। যানজটের কারণে আমাদের কর্মঘণ্টার যে বিশাল একটি সময় নষ্ট হচ্ছে, সেটি এ করিডোরের মাধ্যমে লাঘব করা সম্ভব হবে।’
২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। মোট ব্যয়ের মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা (প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২৭ শতাংশ) বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। বাকি ব্যয় বহন করবে এ প্রকল্পের সহযোগী প্রতিষ্ঠান চায়না এক্সিম ব্যাংক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না।
মূল এলিভেটেড অংশের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিমি। প্রকল্পে ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কিমি দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিমি।
১ জানুয়ারি ২০২০ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ আগামী ৩০ জুন ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।