আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ১২টি দেশের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। খবর বিবিসি’র।
দেশগুলো হলো- আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, নিরক্ষীয় গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন।
ঘোষণাটি ৯ জুন, সোমবার থেকে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ট্রাম্পের সাক্ষরিত এই ঘোষণাপত্রে আরো ৭টি দেশের নাগরিকদের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দেশগুলো হলো- বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরালিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনেজুয়েলা।
নিষেধাজ্ঞার এই তালিকা পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হলে তালিকা থেকে কোনো দেশকে বাদ দেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্প একইসঙ্গে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা না দিতে এক নির্বাহী আদেশেও সই করেছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেল জ্যাকসন বলেছেন, “আমাদের দেশে এসে আমাদের ক্ষতি করতে চাওয়া বিপজ্জনক বিদেশিদের হাত থেকে আমেরিকানদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।”
বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে এই মুখপাত্র বলেন, “এই সাধারণ বিধিনিষেধগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যক দেশের ওপরই দেয়া হয়েছে।”
যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের অভাব রয়েছে অথবা পরিচয়সহ নানা তথ্য সঠিকভাবে সরবরাহে ব্যর্থতা- এসব কারণের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব সময় আমেরিকান জনগণের স্বার্থ এবং তাদের নিরাপত্তার দিকটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই কাজ করবেন,” তিনি বলেন।
নতুন এই নিষেধাজ্ঞার বিস্তারিত জানাতে হোয়াইট হাউসের দেওয়া বিবৃতির শুরুতে, ২০১৭ সালে নিজের প্রথম মেয়াদে জারি করা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প। তখন এটিকে অনেক সময় ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’ বলা হতো।
নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের মানুষের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনা তখন বিভিন্ন আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল এবং অনেকবার সংশোধনও করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত এটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার রায় দিয়েছে।
শুরুতে ইরান, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং সোমালিয়ার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল হোয়াইট হাইজ। এরপর উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও চাদের জনগণকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ট্রাম্প আজ বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা “জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন কিছুকে আমাদের সীমান্তে পৌঁছাতে সফলভাবে বাধা দেবে”।
নিজের প্রথম মেয়াদের শুরুতে সাতটি মুসলিম-প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২০১৫ সালে তিনি যে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- “আসলে কী ঘটছে সে বিষয়ে আমাদের দেশের প্রতিনিধিরা বুঝতে না পারা পর্যন্ত মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে”, সেই ঘোষণারই ধারাবাহিকতা এটি।
এর ফলে ওই সময় বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার পর্যটক, অভিবাসী, ব্যবসায়ী এবং মার্কিন গ্রিন কার্ডধারীরা তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরেই অস্থিরতার মধ্যে পড়েন, কারণ বিমান সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত তথ্য বের করার চেষ্টা করে।
অনেককে মাঝপথে ফেরত পাঠানো হয় অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইটে উঠতে বাধাও দেওয়া হয়।
ওই সময় এই ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার’ বিরুদ্ধে প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে, নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসির মতো শহরে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন। নিষেধাজ্ঞার পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থানকারীরা বিমানবন্দরে বিক্ষোভের জন্য জড়ো হন।
পরে আদালতের রায়ে সাময়িকভাবে এই নীতিটি বন্ধ করা হয় এবং প্রশাসন একাধিকবার আদেশটি সংশোধন করে, বিভিন্নভাবে এর পরিধি পরিবর্তন, পরিমার্জন করে।
২০১৮ সালে, এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক হিসেবে রায় দেয়া নিম্ন আদালতগুলোর সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে, , ৫-৪ ভোটে নিষেধাজ্ঞাটি অব্যাহত রাখার অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
এর মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার অনুমতি মেলে, যা ট্রাম্পের জন্য একটি বড় জয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, ট্রুথ সোশ্যালে এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন।
যার শুরুতেই তিনি বলেছেন, কলোরাডোর সাম্প্রতিক হামলা, বিদেশি নাগরিকদের “সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই” না করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়ার “চরম বিপদ” এর চিত্র তুলে ধরেছে।
ট্রাম্প তাদের কথাও উল্লেখ করেছেন যাদের ‘অস্থায়ী ভিসার’ মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দেশটিতে থেকে যান।
“আমরা তাদের চাই না,” ভিডিওতে বলেছেন তিনি।
গত রবিবার কলোরাডোতে একজন ব্যক্তি, ইসরায়েলি জিম্মিদের সমর্থনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর আগুন বোমা হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি এবং তার পরিবার মিশরের নাগরিক।
যদিও ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় মিশরের নাম নেই।
রয়টার্সের হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা জেফ ম্যাসন বিবিসিকে বলেন, এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অবাক করার মতো কিছু নয় কারণ ট্রাম্প প্রশাসন আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তারা এটি নিয়ে কাজ করছে।
এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মতোই, যদিও এবারের নিষেধাজ্ঞায় আরও বেশি দেশকে যুক্ত করা হয়েছে।
ম্যাসন বলছেন, “প্রশ্ন হলো, এই সিদ্ধান্ত কি আদালতে টিকবে?” এবং এর দ্বারা প্রভাবিত দেশগুলোর জনগণের ওপরও বা এর কেমন প্রভাব পড়বে?
তিনি উল্লেখ করেন, একটি ঘোষণার মাধ্যমে এটি কার্যকর করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা একটি নির্বাহী আদেশের মতো এবং ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে যে এই ধরনের ব্যবস্থা কার্যকর করার এখতিয়ার তাদের আছে।
কিন্তু ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতো এবারও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু হবে বলেই মনে করেন ম্যাসন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।