জুমবাংলা ডেস্ক : প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত উপস্থিত হয়নি কেউ। পাশের একটি কক্ষের এক পাশের বেঞ্চে বসে আছে দুই শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা দুজনরই পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই কক্ষের অন্য বেঞ্চে বসে আছে চতুর্থ শ্রেণির দুইজন।
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী পাওয়া গেল মাত্র পাঁচজন।
অন্যদিকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছিল ১০ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে দশম শ্রেণির কেউ নেই। বাকি ক্লাসগুলোতে দুই থেকে তিনজন। এদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, বাংলা দেখে দেখে পড়তে পারে তবে ইংরেজি পড়তে পারে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার একটি দাখিল মাদরাসায় গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। তবে উপজেলা আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের বোড়াই গ্রামে ‘বোড়াই রাহিমা খাতুন দাখিল মাদরাসা’ নামের ওই মাদরাসায় শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ১৮ জন। শিক্ষকদের দাবি, মাদরাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা যথেষ্ট রয়েছে। তবে উপস্থিতি কম।
মাদরাসাটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদরাসাটি ১৯৮০ সালে স্থাপিত হয়ে পাঠদানের অনুমতি পায়। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৩ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে চলছে পাঠদান। যাদের মোট বেতন-ভাতা (মাসপ্রতি) তিন লাখ ৩২ হাজার ৯৭০ টাকা।
খাতা-কলমে মাদরাসার বর্তমান শিক্ষার্থী প্রায় ২৫০ জন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ধুকে ধুকে চলছে। এমপিও টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন মাফিক শিক্ষার্থী ম্যানেজ করে পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দিয়ে তাদেরকে পাস করানো হয়। মাদরাসার প্রত্যেক শ্রেণিতে ২৫/৩০ জন শিক্ষার্থীর নাম থাকলেও অধিকাংশ নামই ভুয়া। অন্য স্কুলে পড়ালেখা করছেন এমন শিক্ষার্থীর নামও আছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদরাসাটির জন্য জমি দান করেছেন আহম্মেদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আলি আকবরের মা। তার নামেই প্রতিষ্ঠা হয় মাদরাসাটি। চেয়ারম্যান নিজেই ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি। তার পরিবারের একাধিক সদস্য চাকরি করেন ওই প্রতিষ্ঠানে। সে কারণে চেয়ারম্যানের বিপক্ষের লোকজন তাদের সন্তানদের ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠান না।
এলাকার বাসিন্দা ইউপি সদস্য ফেরদৌস হোসেন বলেন, সভাপতির মায়ের দানকৃত জায়গার ওপর মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তার নিজের ভাই-ভাতিজাকে চাকরি দিয়ে পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে। ওই মাদরাসায় দিনের পর দিন কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলেও শিক্ষকরা ঠিকই বেতন উত্তোলন করছেন।
মাদরাসার (সুপার) শাহজাহান আলি বলেন, আগে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। কমিটির সভাপতির সঙ্গে গ্রামের লোকজনের বিরোধ থাকায় তাদের সন্তানদের এই মাদরাসায় পাঠাতে চায় না। দূরের কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো হয়।
মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও আহম্মেদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আলি আকবর বলেন, আমরা মাদরাসার জন্য জমি দান করেছি, যাতে এলাকার সন্তানরা পড়ালেখা শিখতে পারে। কিন্তু এলাকার লোকজন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাদের সন্তানদের মাদরাসায় পাঠায় না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমের বিষয়টি জানেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মোনোয়ারুল হাসান। তিনিও একবার পরিদর্শনে গিয়ে মাদরাসায় আটজন শিক্ষার্থী পেয়েছিলেন। সে সময় সতর্ক করা হয়েছিল সংশ্লিষ্টদের। মাদরাসা সুপার ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থী উপস্থিতি বৃদ্ধির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তারা গাফেলতি করেছেন বলে অভিযোগ শিক্ষা কর্মকর্তার।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পর্যাপ্ত না থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত থাকতে পারে না। আমরা আবারও তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ পাঠাব।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হায়াত বলেন, ওই মাদরাসার এমন নাজুক অবস্থার বিষয়ে কেউ আমাকে অবগত করেনি। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।