জুমবাংলা ডেস্ক : দুজন আম ব্যবসায়ীর জন্য এবার রাজশাহীর ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ ৯ দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। নিজেদের বাগানের আম আগে পেকে যাওয়ার কারণে তারা কৃষি বিভাগকে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার এগিয়ে আনার অনুরোধ জানান। এদের একজন কৃষি বিভাগের নির্ধারিত তারিখের আগেই বাগানের আম নামিয়েছেন বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে।
শফিকুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের আম বাগান থেকে গত ৩ মে আম নামান। সেদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন এবং বাজারজাত মনিটরিং সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পরদিন ৪ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। যদিও ওই তারিখে রাজশাহীর বেশিরভাগ গাছেই পাকা আম দেখা যায়নি।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ফল গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তাসহ বাগান ইজারা নিয়ে আম উৎপাদন করেন এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী। আম পাড়ার সময় নির্ধারণে বিবেচ্য বিষয় কী ছিল জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন উল্লিখিত দুই ব্যবসায়ীর বাগানে আম পাকার উদাহরণ দেন। তিনি জানান, সরেজমিনে গিয়ে তারা দেখেছেন এ দুজনের বাগানে আম পেকেছে।
এ দুজনের একজন হলেন বাঘার পাকুড়িয়ার শফিকুল ইসলাম। তিনি আম রপ্তানিকারকদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি বাগান ইজারা নিয়ে নিজেও আম চাষ করেন। অন্যজন গোলাম মোস্তফা। বাড়ি চারঘাট উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে।
‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ শুরুর একদিন আগে ৩ মে শফিকুল স্থানীয় ‘চোরষা’ নামের গুটি আম নামান গাছ থেকে। এ জাতের ৩০০ কেজি আম ঢাকা পাঠান ইতালি রপ্তানির উদ্দেশ্যে। যোগাযোগ করা হলে শফিকুল বলেন, ‘আমার গাছের আম আগেই পাকে। তাই কৃষি বিভাগকে অনুরোধ করেছিলাম যেন আম পাড়ার সময় এগিয়ে নিয়ে আসা হয়। প্রশাসন আমার কথা শুনেছে।’
এ প্রসঙ্গে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমার বাগানের আম বৈশাখের ১০ তারিখ পার হলেই পেকে যায়। কিন্তু প্রশাসন আম পাড়ার সময় ঠিক করে আরো পরে। তখন আম বেচতে সমস্যা হয়। এ জন্য এবার অনুরোধ করেছিলাম যেন তারিখটা এগিয়ে আনা হয়। আমি ৪ তারিখে ৫০ মণ আম নামিয়ে রেখেছি। ৩-৪ দিন পর বাজারে পাঠাব।’
রাজশাহীতে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। গাছ থেকে পেড়েই বোটায় আঠা লেগে থাকা কাঁচা আম এনে চাষিরা এখানে বিক্রি করেন। শুক্রবার (৫ মে) যোগাযোগ করা হলে হাটের ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গুটি আম পাড়ার সময় শুরু হয়েছে। কিন্তু গাছে তো আম পাকেনি। এ কারণে দুই দিনেও হাটে আম আসেনি। সামনের সপ্তাহে অল্প অল্প করে গুটি আম আসা শুরু হবে। উন্নতজাতের আম হাটে আসবে আরও পরে।’
রাজশাহী-চাঁপাই এগ্রো ফুড প্রোডিউসারের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমার নিজের ৫০ বিঘা জমিতে আমবাগান আছে। ৪ মে আম নামিয়ে দেখেছি। একটা আমও ডাকর (পাকা) হয়নি। পাকতে আরও ১০ দিন লাগবে। এখনই গুটি আম নামানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে! প্রশাসন বলছে, গাছে পাকলেই কেবল আম নামানো যাবে। কিন্তু এ সুযোগে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ব আম নামিয়ে বাজারজাত করতে পারেন। প্রথমে যারা বাজারে যাবেন, তারা ভালো দাম পাবেন। আমরা পুষ্ট আম পরে বাজারে নিলে তখন আর ভালো দাম পাব না।’
গতবছর গুটি আম নামানোর সময় শুরু হয়েছিল ১৩ মে থেকে। সে সময়টা ঠিক ছিল উল্লেখ করে আনোয়ারুল হক বলেন, ‘গত বছর সময় ঠিক করার আগে সভায় আমাদের ডাকা হয়েছিল। এবার ডাকা হয়নি। মাঠ পর্যায়ে না গিয়ে কিংবা চাষীদের কথা না শুনেই দিন ঠিক করা হয়েছে।’
সময় নির্ধারণের সভায় চাষীরা ছিলেন কি না জানতে চাইলে মোজদার হোসেন বলেন, ‘সেরকম চাষী না; বড় বড় ব্যবসায়ী। বাগান ইজারা নিয়ে আম চাষ করেন- তারা ছিলেন। জেলা প্রশাসন তাদের ডেকেছিল।’
‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ এগিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যে চাষীর আম আগে পাকবে তিনি ক্যালেন্ডারের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই এগিয়ে আনাটা ঠিক হয়েছে।’
তবে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ আম চাষী, ব্যবসায়ী, ফল গবেষক এবং কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের মতামত নিয়েই দিন ঠিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ‘তারিখ এগিয়ে এলেও সমস্যা নেই। যে গাছের আম পাকবে কেবল সেই গাছেরই আম নামিয়ে বাজারে নেয়া যাবে। সময় চলে এলেও অপরিপক্ব আম পেড়ে বাজারে নেয়া যাবে না। প্রশাসন এটা নিশ্চিত করবে।’ মন্তব্য করেন তিনি।
ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এবার উন্নতজাতের অন্য আমগুলোর মধ্যে লক্ষণভোগ বা লখনা ও রাণীপছন্দ ২০ মে এবং হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৫ মে থেকে পাড়া যাবে। এছাড়া ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও ১০ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ পাড়া যাবে। আর ১০ জুলাই থেকে গৌড়মতি আম এবং ২০ আগস্ট ইলামতি আম আসবে বাজারে। এছাড়া বারোমাসি হিসেবে পরিচিত কাটিমন ও বারি আম-১১ সারাবছরই সংগ্রহ করা যাবে। নির্ধারিত সময়ের আগে আম বাজারে পেলে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
রাজশাহীতে এ বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৬টি আম গাছ রয়েছে। এবার জেলায় ৯৫ ভাগ গাছে মুকুল এসেছিল। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এবার বাগান বেড়েছে এক হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর হেক্টর প্রতি ১৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এ বছর মোট দুই লাখ ৫৮ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে। এর মধ্যে ৩০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানির আশা করছে কৃষি বিভাগ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।