ধর্ম ডেস্ক : সামর্থ্যবান নারী ও পুরুষের জন্য হজ করা ফরজ। হজের মাধ্যমে সবাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। পুরুষের পাশাপাশি বহু নারী হজ করেন। নারীদের হজ যেন সত্যিকার ইবাদত হয়ে ওঠে এ জন্য আলেমরা নিম্নোক্ত পরামর্শগুলো দিয়ে থাকেন।
১. নিয়ত বিশুদ্ধ করা : নারী ও পুরুষ সবার জন্য নিয়ত বিশুদ্ধ করা আবশ্যক। কেননা নিয়তের ওপর আমলের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রতিদান নির্ভর করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই নিয়তের ওপর আমলের ফলাফল নির্ভরশীল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১)
২. প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান জানা : হজে যাওয়ার আগে নারীরা হজের সাধারণ এবং নারীদের জন্য বিশেষ বিধানগুলো জেনে নেবে।
এ ক্ষেত্রে অন্যের ওপর নির্ভর না করাই উত্তম। কেননা হজের সফরে ভুলত্রুটি হলে কাফফারা (প্রতিবিধান) দিতে হয়।
৩. সাজসজ্জা পরিহার করা : সাজসজ্জার প্রতি আকর্ষণ নারীর স্বভাবজাত। কিন্তু হজের সফরে সাজসজ্জা নিষিদ্ধ এবং তা হজের দাবি ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণও নয়।
৪. মাহরাম নিয়ে সফর করা : হজের সফরে নারীর সঙ্গে মাহরাম পুরুষ (যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ নয়) থাকা আবশ্যক। মাহরাম না থাকলে বা মাহরামের খরচ বহনের সক্ষমতা না থাকলে নারীর জন্য হজে যাওয়া আবশ্যক নয়।
৫. ইহরামের পোশাক পরিহার : নারী হাজির জন্য ইহরামের পোশাক পরিধান করা আবশ্যক নয়। সে মুখ খোলা সাধারণ পোশাক পরিধান করবে, এমনকি মাথাও ঢাকতে পারবে। বিজ্ঞ আলেমরা নারীদের সেলাইহীন ইহরামের পোশাক পরতে নিষেধ করেন। কেননা এতে আব্রু প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
৬. ঋতুচক্র বন্ধে ওষুধ সেবন : হজের সময় ঋতুচক্র বন্ধ রাখতে ওষুধ খাওয়া বৈধ। আধুনিক যুগের আলেমরা চিকিত্সকের পরামর্শক্রমে এমন ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। কেননা বর্তমান যুগে হজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
৭. নিজেকে আড়ালে রাখা : হজের সময় বিপুলসংখ্যক নারী ও পুরুষের সমাবেশ ঘটে। তাই নারী হাজিরা যথাসম্ভব পুরুষ থেকে দূরে থাকবে এবং নিজেকে আড়ালে রাখবে। এমন পোশাক পরবে না, যাতে শরীরের আকার-অবয়ব প্রকাশ পায়।
৮. ভিড় এড়িয়ে চলা : হজের মূল কার্যক্রমের সময় যথেষ্ট ভিড় তৈরি হয়। নারী হাজিরা সাধ্যমতো ভিড় এড়িয়ে চলবে। ভিড়ের সময় চেষ্টা করবে নারীদের সঙ্গে দলবদ্ধ হয়ে থাকতে।
৯. তালবিয়া নিচু স্বরে পড়া : তালবিয়া পাঠ হজের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। শরিয়তের বিধান হলো পুরুষ উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে এবং নারী নিঃশব্দে তালবিয়া পাঠ করবে।
১০. ইবাদতমুখর সময় কাটানো : হজের সময় নারী ও পুরুষ উভয়ে গল্প-আড্ডা পরিহার করবে। সময়গুলো আল্লাহর ইবাদত ও জিকিরে লিপ্ত থাকবে। বেশি বেশি তাওয়াফ ও তিলাওয়াত করবে।
১১. নারীদের সঙ্গে দলবদ্ধ থাকা : হোটেলকক্ষ ও তাঁবুতে অবস্থানের সময় নারীদের সঙ্গে দলবদ্ধ থাকাই উত্তম, বিশেষত যখন নিজের মাহরামের সঙ্গে অন্য পুরুষ একই কক্ষে বা তাঁবুতে অবস্থান করে। এ ছাড়া তাওয়াফ ও সায়ির সময়ও নারীদের সঙ্গে চলাচল করা উত্তম।
১২. মানুষের চুল না খোলা : হজ ও ওমরাহ শেষ করার পর পুরুষের জন্য হলক করা এবং নারীদের জন্য সামান্য চুল ছাঁটার বিধান আছে। চুল ছাঁটার প্রয়োজন হলে নারীরা মাহরামের সহযোগিতা নেবে। অন্য পুরুষের সহযোগিতায় বা তাদের সামনে তা করবে না।
১৩. রাস্তার পাশে বিশ্রাম গ্রহণে সতর্কতা : হজের সফরে বহু নারীকে রাস্তার পাশে চাদর বিছিয়ে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। কখনো কখনো এর প্রয়োজনও হয়। তবে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। একান্ত অপারগ না হলে জনসমাগমের স্থানে নারীরা শুয়ে বিশ্রাম করবে না। আর যদি করতে বাধ্য হয়, তবে নিজেকে ভালোভাবে ঢেকে নেবে।
১৪. কেনাকাটায় সময় নষ্ট না করা : নারী ও পুরুষ কারো উচিত নয় হজের সফরে কেনাকাটা ও অনর্থক ঘোরাফেরায় সময় নষ্ট করা। কেননা হজের সফরের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। হয়তো জীবনে দ্বিতীয়বার তা আর পাওয়া যাবে না।
১৫. নেক সঙ্গী বেছে নেওয়া : সফরে নেককার সঙ্গী-সাথির গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা সঙ্গী ভালো হলে সফর শুধু আনন্দময় হয় না, বরং তা ফলপ্রসূও হয়। যেমন সফরে যদি একজন ইবাদতে মনোযোগী হয়, তবে তাকে দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়। এ জন্য সঙ্গী হিসেবে নেককার মানুষদের বেছে নেওয়া উত্তম।
১৬. বেশি বেশি দোয়া করা : দোয়া হজের সফরের গুরুত্বপূর্ণ আমল। হজের সফরে হাজিরা এমন অনেক স্থানে যান যেখানে দোয়া কবুল হয় বলে হাদিসে এসেছে। সুতরাং পুরো হজের সফরে এবং বিশেষ বিশেষ স্থানগুলোতে বেশি বেশি দোয়া করা আবশ্যক।
১৭. তাওবা করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) হজকে গুনাহ মাফের মাধ্যম বলেছেন। হাদিসের ভাষ্যমতে, হজ কবুল হলে ব্যক্তি নিষ্পাপ হয়ে যায়। সুতরাং হজের সফরে বেশি বেশি তাওবা করা এবং গুনাহ মুক্তির দোয়া করা আবশ্যক।
১৮. বেশি বেশি দরুদ পড়া : হজ মূলত নবী-রাসুলদের স্মৃতিচারণা করা। হজের সময় হাজিরা সেসব স্থানে যান এর প্রায় সবই মহানবী (সা.)-এর স্মৃতিধন্য। তাই হজের সফরে নবীজি (সা.)-কে স্মরণ করে তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পড়া আবশ্যক।
১৯. ছবি ও সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে থাকা : হজের সফরে ছবি তোলা ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করার মন্দ প্রবণতা দেখা যায় বহু মানুষের ভেতর। এই প্রবণতা যদিও পুরুষের ভেতরই বেশি। তবু নারীদের উচিত তা পরিহার করা। কেননা ইবাদতের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহর স্মরণ ও সন্তুষ্টি লাভ। তা প্রচার করে সুনাম কামাই করা মুমিনের উদ্দেশ্য হতে পারে না।
২০. দ্রুত ফিরে আসা : নারী-পুরুষ সব হাজি হজের পর যথাসম্ভব দ্রুত দেশে ফিরে আসবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কারো প্রয়োজন শেষ হয়, তখন সে যেন দ্রুত পরিবারে কাছে ফিরে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪২৯)
আল্লাহ সবাইকে হজে মাবরুর নসিব করেন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।