জুমবাংলা ডেস্ক : জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, মানুষ চাইলে বিশ্বজয় করতে পারে। মানুষকে কেউ হারাতে পারে না। আল্লাহ আমাদেরকে জনসংখ্যা দিয়েছেন। এ জনসংখ্যা অনেক বড় সম্পদ। এটা আমাদের জন্য অভিশাপ না, আশীর্বাদ। আমাদের জনসংখ্যাকে যদি আমরা জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি আজকে বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে তার চেয়ে ২০ গুণ উন্নতির শিখরে চলে যাবে।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে যশোরে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এ কথা বলেন।
ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ‘মানব সম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। একটি দেশের মানুষের জ্ঞান, তাদের দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যায়, বাড়িয়ে দেশের উন্নয়ন করা যায় এটাই হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়নের মূল কথা। মানবসম্পদ হচ্ছে একটি দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী পুঁজি। প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদের চেয়েও দামি সম্পদ হচ্ছে মানবসম্পদ। আল্লাহপাক দয়া করে আমাদের এই মানবসম্পদ দিয়েছেন। এই মানুষগুলোকে সোনার মানুষ বানাতে হবে। মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। তাই মানুষকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। যথাযথভাবে তাদের গড়তে হবে।’
রসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনী থেকে মানবসম্পদ ব্যবহারের উদাহরণ টেনে আজহারী বলেন, আমরা যদি মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারি বাংলাদেশের চিত্র পাল্টে দিতে পারবো। প্রতিটি মানুষ অনন্য। যত্ন নিলে, যথাযথ পরিচর্যা করলে মানুষ বিশ্বজয় করতে পারে। আমাদের হাফেজ, ক্রিকেটার, তৈরি পোশাক শিল্প অনেক কিছু সেরা। আমাদের আরও অনেক কিছু সেরা আছে, কিন্তু আমরা তাদের পরিচর্যা করতে পারি নাই। মানুষের অসীম সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ইউনূস সরকারকে বলবো অল্প সময়ের জন্য আপনারা এসেছেন। সংস্কারও করতে হবে আবার নির্বাচন করতে হবে। সব সংস্কার হয়ত করতে পারবেন না। যতটুকু পারবেন এর মধ্যে আমাদের যে হিউজ ম্যান পাওয়ার, মানবসম্পদ এটাকে ডেভেলপমেন্ট করে যেতে হবে। আপনারা যেটা পারবেন না সেটাকে পরবর্তী নির্বাচিত গভর্মেন্টের কাছে রেখে যেতে হবে।’
প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যাপারে আজহারী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা বিদেশে কাজ করে। তাদের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের শ্রমিকদের শ্রমের দাম সবচেয়ে কম। তারা অ্যাম্বাসিতে গুরুত্ব পায় না, এয়ারপোর্টে গুরুত্ব পায় না। এই সরকার অবশ্য তাদেরকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের অদক্ষ শ্রমিককে যখন দুবাই পাঠায় অল্প বেতন পায়। ইন্ডিয়ানরা দক্ষ শ্রমিক পাঠায় বলে তারা তিন গুণ বেতন পায়। আমরা আমাদের শ্রমিককে আর অদক্ষভাবে পাঠাতে চাই না। দক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে রেমিটেন্সের বন্যা বইয়ে দিতে চাই।’
আজহারী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের টাকায় সচল থাকে আমার দেশের অর্থনীতির চাকা। তাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা পেয়েছিলাম ফ্রিডম ফাইটার মুক্তিযোদ্ধা আর আমার প্রবাসী ভাইয়েরা হচ্ছে রেমিটেন্স ফাইটার। আমাদের এই জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে। সরকার ও অভিভাবককে সন্তানদেরকে যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমাদের এই জনসংখ্যা জনসম্পদের রূপান্তরিত হবে। আমাদের সরকারের তত্ত্বাবধানে ১৮ কোটি জনগণ দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হোক এটাই আমরা চাই।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম দিয়ে আমাদের জীবন ও পরিবারকে সাজাতে হবে। কোরআন থেকে প্রেসক্রিপশন না নিলে জীবন সুন্দর হবে না, সমাজ ও রাষ্ট্র সুন্দর হবে না। কোরআনের প্রেসক্রিপশন অ্যাপ্লাই না করলে শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। এজন্য কোরআনের আইন চাই। সরকার যেন মানবসম্পদ উন্নয়নে যত্নশীল হয়। আল্লাহ যাকে যে যোগ্যতা দিয়েছেন সে যেন তা দিয়ে ইসলামের জন্য দেশের জন্য কাজ করি সেই প্রচেষ্টা চালানোর জন্য দোয়া করি।’
মাহফিলে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর আগে বক্তব্য রাখেন দেশবরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।
যশোর শহরতলীর পুলেরহাট এলাকায় এ মাহফিলের আয়োজন করে আদ্ দ্বীন ফাউন্ডেশন। তিনদিনের এ মাহফিলে ২০ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে বলে দাবি করেছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
মাহফিল সফল করতে নিরাপত্তার জন্য যশোর জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮৪৬ জন পুলিশ সদস্য এবং আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যগণ দায়িত্ব পালন করেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।