লাইফস্টাইল ডেস্ক : ব্যাকটেরিয়ার ‘টক্সিন’ অর্থাৎ বিষকে বলা হয় বোটক্স। এই বিষ একধরনের ক্লসট্রিডিয়াম থেকে তৈরি। যা বাজারে ইনজেকশন আকারে পাওয়া যায়। টক্সিনের ঘনত্ব কমিয়ে আনার পর তবেই বাজারজাত করা হয় এটি। যাতে এটি ব্যবহারে মানবদেহের কোনো ক্ষতি না হয়।
বোটক্স ইনজেকশন নার্ভ থেকে আসা কেমিক্যাল সিগন্যালগুলো ব্লক করে দিয়ে থাকে। ফলে অধিকাংশ সময় পেশীগুলো সংকুচিত হয়। এটি বলিরেখা মসৃণ করে থাকে। এছাড়া ঘাড়ের খিঁচুনি, অত্যধিক মূত্রাশয়, ঘাম, চোখের সমস্য এবং অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আবার মাইগ্রেন সমস্যা রোধেও সহায়তা করে থাকে বোটক্স।
সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে অনেকেই দাবি করছেন, ২০ বছর বয়সে বোটক্স ব্যবহার করলে তাতে বলিরেখা হওয়া বন্ধ হয়। কিন্তু এটি সত্য কিনা এ নিয়ে নানা সংশয় রয়েছে। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ ব্যাপারে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্লাস্টিক সার্জারির অধ্যাপক ডা. আফশিন মোসাহেবি বলেছেন, হ্যাঁ, এটা সত্য যে বোটক্স অ্যান্টি বার্ধক্য হিসেবে কাজ করে।
এ অধ্যাপক বলেছেন, সূক্ষ্ম রেখা তৈরি শুরু হওয়ার আগে যদি মুখে বোটুলিনাম টক্সিন (বোটক্স নামে পরিচিত) ইনজেকশন দেয়া যায়, তাতে বলিরেখা বৃদ্ধি বা বিকাশকে ধীর করে দেয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, তার অর্থ এই নয় যে আপনার বোটক্স ইনজেকশন ব্যবহার করা উচিত বা করতেই হবে।
ডা. আফশিন মোসাহেবি বলেন, সাধারণত দুটি কারণে মুখে বলিরেখা হয়। একটি হচ্ছে মানবদেহের পেশীগুলো যখন নড়াচড়া করে, তখন পেশীগুলোর ওপর ত্বকের ভাঁজ বা ক্র্যাঞ্চ পড়ে। ঠিক একইভাবে যদি এক টুকরো কাপড়ের ওপর এমনটা হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত তা ভাঁজ পড়ে যায়। আর পেশীর ক্রমাগত নড়াচড়ার কারণে ত্বকের ওপর রেখা স্থায়ী হয়ে থাকা শুরু করে।
এছাড়া অন্য কারণ হচ্ছে ত্বকের ডার্মিস স্তর পাতলা হয়ে যাওয়া। যা সাধারণত বয়স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। বিশেষ করে সূর্যের সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে এমনটা। এই ডার্মিস স্তর যতটা সংবেদনশীল হয় বলিরেখাও তত বেশি হয়ে থাকে।
ডা. আফশিন মোসাহেবি আরও বলেছেন, বোটক্স ইনজেকশন বার্ধক্যের প্রথম স্তরের কারণগুলো মোকাবিলা করে থাকে। এটি ব্যবহারে প্রায় ছয় মাস মুখের পেশী অবশ থাকে। কুঁচকে বা ভাঁজ হয়ে যাওয়া ত্বকের রেখাগুলোকে কম দৃশ্যমান করে তোলে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, অনাবৃত ত্বকে বোটক্স নিয়মিত ব্যবহারে বলিরেখা তৈরি করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। আর এই ইনজেকশন স্থায়ী নিরাময় কোনো ওষুধ নয়। ত্বক যদি পাতলা হয় তবুও বলিরেখার বিকাশ হবে এবং এ অবস্থায় যদি ইনজেকশন নেয়া বন্ধ করেন, তাহলে ফের ত্বক স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
অর্থাৎ, এর সুফল পেতে দীর্ঘ সময় আপনাকে এই ইনজেকশন ব্যবহার করতে হবে।
বোটক্স ব্যবহারেও নিরুৎসাহিতের কথা বলেছেন এ অধ্যাপক। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টক্সিন, অর্থাৎ বিষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে হয়ে উঠে। এ কারণে বোটক্স ইনজেকশন শুরুতে যেভাবে কাজ করবে, পরবর্তীতে সেভাবে নাও কাজ করতে পারে। হয়তো বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষজন এ ব্যাপারে অনেক কিছু দেখে উৎসাহিত হয়ে থাকেন। যা আমরা এড়ানোর কথা বলে থাকি।
সবশেষ ডা. আফশিন মোসাহেবি বোটক্স ইনজেকশন ব্যবহার নিয়ে বলেছেন, এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই আপনার ত্বকের স্তরের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। আর যতটা সম্ভব সূর্যের তাপের বাইরে থাকা এবং ধূমপান করতে হবে। বিশ বছর বয়সে বোটক্স ইনজেকশন ব্যবহারের থেকে উন্নতমানের সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার হতে পারে বিকল্প ও ভালো পদ্ধতি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।