জুমবাংলা ডেস্ক : টানা ৬৪ ঘণ্টা সাইকেলের প্যাডেল মেরে ২০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ২ রাকাত জুমার নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মাগুরা জেলা থেকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর সদরের আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদে এসেছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ আবুল হোসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায় ওই বৃদ্ধকে দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা বয়সি মানুষ ভিড় করছেন। তরুণরা সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়।
এদিকে বুধবার আসরের নামাজের পূর্বে তিনি মসজিদে এসে পৌঁছান। এ সময় উপস্থিত ইমাম, মুয়াজ্জিন ও স্থানীয় মুসল্লিরা তাকে স্বাগত জানান।
জানা যায়, মাগুরা জেলার আঠারোখাদা গ্রামের আবুল হোসেন শেখ গত দুই সপ্তাহ আগে নান্দনিক কারুকার্য সম্পন্ন ও দৃষ্টিনন্দন আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখে সিদ্ধান্ত নেন এই মসজিদে এসে জুমার নামাজ আদায় করবেন। সেই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে সোমবার ফজরের নামাজ আদায় শেষে মাগুরা থেকে সাইকেল চালিয়ে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি এসে পৌঁছান। ব্যক্তি জীবনে বৃদ্ধ আবুল হোসেনের স্ত্রী, ৪টি পুত্র সন্তান ও ৫টি কন্যা সন্তান রয়েছে।
আবুল হোসেন শেখের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ফেসবুকে এই মসজিদের ভিডিও দেখি। দেখার পর থেকে মসজিদটা চোখে দেখার ও জুমার নামাজ আদায় করতে ইচ্ছা হয়। সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য সোমবার ফজর নামাজ পড়ে সাইকেল নিয়ে বের হই। আল্লাহ সহিসালামতে বুধবার আসরের সময় পৌঁছে দিয়েছেন। এখন সুস্থ আছি। রাস্তায় দুদিন কেটেছে, রাতযাপন করেছি। এখানে আসার পর সবাই আমাকে অনেক সমাদর করছেন। আল্লাহ চাইলে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে বাড়ির উদ্দেশ্যে আবারো সাইকেল চালিয়ে যাত্রা করব।
তিনি জানান, তার জীবনের শেষ ইচ্ছা বায়তুল্লাহ জিয়ারতে যাওয়ার। সেটা তো আর সাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে না।
বেলকুচি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিন হাসান রকি ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে বৃদ্ধ আবুল হোসেনের ২০৬ কিলোমিটার সড়ক পথে প্রচণ্ড শীতে বাইসাইকেল চালিয়ে মসজিদ দেখতে ও নামাজ পড়তে আসায় তাকে দেখতে যান। এ সময় জায়নামাজ, পাঞ্জাবি, ব্লেজারসহ উপহার সামগ্রী ও নগদ অর্থ দেন আবুল হোসেনকে।
এ বিষয়ে আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা গোলাম কিবরিয়া জানান, আবুল হোসেন ৮০ বছর বয়সে যেভাবে সাইকেল চালিয়ে সুদূর মাগুরা থেকে এখানে নামাজ পড়তে এসেছেন- আমি মনে করি এটা সম্ভব হয়েছে ইমানি শক্তি থাকার কারণে। ইমানি শক্তি না থাকলে এই বয়সে এত পথ শুধু সাইকেল চালিয়ে আসা সম্ভব হতো না। উনিসহ সবার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি আল্লাহ যেন সব মুসলমানের ইমানি শক্তি বাড়িয়ে দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুকুন্দগাতী গ্রামের শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী সরকার বেলকুচি পৌরভবন সংলগ্ন দক্ষিণে আড়াই বিঘা জমির ওপর তার ছেলে আল-আমান ও মা বাহেলা খাতুনের নামে আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তিনি নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৩০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে নয়নাভিরাম এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণে সময় লেগেছে চার বছর। শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫ জন শ্রমিক কাজ করেছেন।
রহমত গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার এ মসজিদ কমপ্লেক্সসহ বাহেলা খাতুন চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে বিনামূল্যে এলাকার অসহায় দুস্থ রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।