আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আপনি যে ভিডিওটি দেখছেন, এটি মাটির নিচে বিস্তৃত এক রহস্যময় শহর। হাজার বছর ধরে এই শহর মানুষের চোখের আড়ালে ছিল, কিন্তু একসময় এটি অন্য আট দশটি শহরের মতোই নানা কোলাহলে মুখরিত থাকত। সময়ের পরিক্রমায় যা হারিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ১৯৬৩ সালে এক ব্যক্তির ঘর সংস্কারের সময় তিনি হঠাৎই আবিষ্কার করেন এই অবিশ্বাস্য স্থাপত্য। যা তুরস্কের ডেরিনকুয়ু পাতাল নগরী নামে পরিচিত।
ডেরিনকুয়ু তুরস্কের কাপাডোশিয়া অঞ্চলের নেভশেহির প্রদেশে অবস্থিত। এটি কোনো প্রাকৃতিকভাবে গঠিত গুহা নয়, বরং মানুষের হাতে খনন করা একটি পাতাল শহর। এই শহরটি খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৭ম থেকে ৮ম শতাব্দীতে নির্মিত হয় এবং এটি তখনকার সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হত।
এটি প্রায় ২৫০ ফুট গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ধারণা করা হয়, এখানে একসময় প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানুষ এখানে আত্মগোপন করত—যেমন, শত্রুর আক্রমণ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়। শহরের ভেতরে অসংখ্য সুড়ঙ্গপথ, ৬০টির মতো গোপন দরজা এবং বাতাস চলাচলের জন্য নির্মিত শ্বাসনালী রয়েছে। এ শহরটি এতটাই জটিল যে, একজন সহজেই ভেতরে ঢুকে পথ হারিয়ে ফেলতে পারে।
এই পাতাল নগরী প্রথমে হিট্টাইটদের দ্বারা তৈরি করা হয় বলে ধারণা করা হয়, তবে পরে ফ্রিজিয়ান ও বাইজেন্টাইনরাও এটি ব্যবহার করে। আরব-বাইজেন্টাইন যুদ্ধের সময় যোদ্ধারা শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য এই গুহাগুলোতে লুকিয়ে থাকত। বাইজেন্টাইনদের পরাজয়ের পর, উসমানীয় সম্রাজ্যেল শাসকগণ এই শহরকে নিজেদের বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহার করে বলে কিছু ঐতিহাসিক সূত্রে উল্লেখ রয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, যখন উসমানীয় সাম্রাজ্য তার পতনের মুখে, তখন এই অঞ্চলের গ্রিকরা শহরটি ত্যাগ করে। ১৯২৩ সালে তুরস্ক-গ্রিস যুদ্ধের পর, ডেরিনকুয়ু শহর সম্পূর্ণ জনশূন্য হয়ে পড়ে। বহু বছর ধরে এটি ধ্বংসাবশেষ হিসেবে পড়ে ছিল, যতক্ষণ না ১৯৬৩ সালে এটি পুনরায় আবিষ্কৃত হয়।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে ছুটে যান এবং শুরু করেন গভীর গবেষণা। একে একে আবিষ্কৃত হয় শহরের অভ্যন্তরে থাকা আস্তাবল, তেলের ঘাঁনি, গুদামঘর, প্রার্থনাকক্ষসহ বিভিন্ন কাঠামো। এমনকি শহরের দ্বিতীয় তলায় খুঁজে পাওয়া যায় কিছু প্রাচীন সমাধি, যা বিশেষ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হত।
Huawei এর নতুন চমক, নতুন ফোনের Huawei Mate 70 সিরিজ হার মানাবে আইফোনকেও
১৯৬৯ সালে, ডেরিনকুয়ু শহরটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, যদিও এর কিছু বিপজ্জনক অংশ এখনো জনসাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এই প্রাচীন এবং রহস্যময় পাতাল নগরী প্রতিদিনই পর্যটকদের আকর্ষণ করে এবং এর প্রাচীন ইতিহাসের গোপন রহস্যগুলো এখনো অনেক গবেষণা ও মুগ্ধতার বিষয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।