স্পোর্টস ডেস্ক : খুলনা অনুর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবলারদের অনুশীলনের সময় ছবি তুলে অপ্রীতিকর মন্তব্য যোগ করে পরিবারকে দেখিয়ে অপদস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয়েছেন ওই কিশোরী ফুটবলার ও তার সতীর্থরা। আহত অবস্থায় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- মঙ্গলী বাগচি, হাজেরা খাতুন, জুঁই মণ্ডল এবং সাদিয়া নাসরিন। রোববার দুপুরে এ ঘটনায় সাদিয়া নাসরিন বাদী হয়ে বটিয়াঘাটা থানায় ছয় জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তারা হলেন- তেঁতুলতলা স্কুল মাঠ এলাকার আলাউদ্দিন (১৬), সালাউদ্দিন (২২), নুর আলম (৪৮), রঞ্জি বেগম (৪০), মনোয়ারা বেগম (৫৫) ও নুপুর খাতুন (২২)। নুর আলম নামের একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাদিয়া সাংবাদিকদের বলেন, অনুশীলনে গেলেই প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। অনুশীলনের ছবি তুলে এনে বাড়িতে আমার বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন। এতে বাবা-মা খেলতে যেতে নিষেধ করেন। মূলত এসব ছবি তুলে বাড়িতে না পাঠানোর অনুরোধ করলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালান।
বোটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাতরানো মঙ্গলী বাগচী বলেন, তার সঙ্গের আরেক নারী খেলোয়ারের প্রাকটিসের ছবি বিভিন্ন আত্মীয়দের কাছে ছড়িয়ে দেয়া এবং নানা বাজে মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় গ্রামের একটি পরিবার তাদের বেধড়ক মারধর করেছে।’
হামলার শিকার হাজেরা, জুই মণ্ডলসহ আরও কয়েকজন নারী খেলোয়ার বলেন, গ্রামের মাঠে কেন তারা হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলে, এটাই তাদের অপরাধ।’
মামলার এজাহারে জানা যায়, তারা স্থানীয় ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে’ নিয়মিত অনুশীলন করেন। এ কারণে তাকে প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের কাছ থেকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। গত বৃহস্পতিবার একাডেমিতে অনুশীলনের সময়ে নুপুর খাতুন ছবি তোলেন। পরে সেই ছবি সাদিয়ার বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে বাবা-মা তাকে বকাঝকা করেন।
শনিবার বিকালে ছবি তুলে বাবা-মাকে দেখানোর কারণ জানতে চান সাদিয়া। বিষয়টি নিয়ে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সাদিয়াকে গালিগালাজ করেন নুপুর। প্রতিবাদ করলে মারধর করেন। বিষয়টি বাবা-মা, ক্লাবের কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তাক ও অন্য খেলোয়াড়কে জানান। তারা সাদিয়াকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নুপুরের বাড়িতে যান। এতে নুপুরের পরিবারের লোকজন ক্ষুব্ধ হন।
পরে আলাউদ্দিন, সালাউদ্দিন, নুর আলম, রঞ্জি বেগম ও মনোয়ারা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে সাদিয়া, মঙ্গলী, হাজেরা ও জুই আহত হন। হামলার সময়ে সালাউদ্দিনের লোহার রডের আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান মঙ্গলী বাগচী। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এক মেয়ের মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ক্রীড়া সংগঠকরা। তারা বলেছেন, সারাদেশে যখন নারী খেলোয়ারদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উত্থান ঘটছে, তখন এধরনের হামলা ক্রীড়াঙ্গনে ভয়ানক ক্ষতি করবে।
এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক বোটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ শওকত কবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। পরে পুলিশ জানিয়েছে নুর আলম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। ফুটবলার খেলায় এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ খেলোয়াড়, তাদের স্বজন ও স্থানীয়রা। তার এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।