জুমবাংলা ডেস্ক : হঠাৎ করেই পঞ্চগড়ে কৃষকের উৎপাদিত শসার দাম পড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার শত শত কৃষক। রমজানের এই দুর্মূল্যের বাজারে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক পানির দরে তাদের উৎপাদিত শসা বিক্রি করছেন।
কৃষকরা বলছেন, এবার শসার বাম্পার ফলন ভালো হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ৬ বস্তা শসা বিক্রি করেও ৬৫০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পারছেন না তারা। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা শসা ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে দারুণভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।
এদিকে কোনো কোনো কৃষকের মজুরি খরচ উঠছে না বলে অনেকেই ক্ষেতের শসা তুলছেন না। ফলে অনেক শসা ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।
সামনে ঈদ তাই কৃষকের আশা ছিল ক্ষেতের উৎপাদিত শসা বিক্রি করে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে লাভের মুখ দেখবেন। কিন্তু রোজার মাসেও শসার দাম নেই, এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাষিরা।
মাত্র কিছুদিন পূর্বে যে শসা ক্ষেত থেকেই ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা দরে কিনে নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করত। এখন উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ওই শসা এখন দেড় থেকে ২ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। তাও আবার ক্রেতা মিলছে না। এ রকম অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন এলাকার শসা চাষিরা।
উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ের জমি শসাসহ বিভিন্ন সবজি আবাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তাই লাভের আশায় চাষিরা আগে থেকে সবজি উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর শসার আবাদ হয়। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলাতেও সরবরাহ করা হয় এখানকার শসা। বিগত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় পাইকাররা কৃষকের ক্ষেত থেকেই শসা কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠান। কিন্তু এবছর ন্যায্য দাম না পেয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকার চাষি ওবায়দুর রহমান জানান, এ বছর এক একর জমিতে শসার আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। অথচ উৎপাদিত শসা বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকাও পাওয়া যাবে না। বর্তমানে বাজারে যে দাম, তাতে মজুরি খরচই উঠছে না।
একই কথা বলেন গোয়ালপাড়া গ্রামের চাষি জসিমদ্দীন। তিনি বলেন, ৫০ কেজি ওজনের একেকটি শসার বস্তায় ১০০ টাকাও মিলছে না। শসার ফলন ভালো হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ৬ বস্তা বিক্রি করেও এক কেজি গরুর মাংস কেনার সাধ্য হয় না।
পঞ্চগড় বাজারের ব্যবসায়ী রাজু আহম্মদ বলেন, কয়েকদিন আগেই আমরা কৃষকের ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি শসা ৪৫ টাকা দরেও কিনেছি, সেই শসা এখন দুই টাকা করে কিনতে হচ্ছে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তখন মোকামে চাহিদা ছিল বেশি আর এখন চাহিদাও কম, উৎপাদনও বেশি হচ্ছে। মোকামে দাম বাড়লে কৃষকেরাও ভালো দাম পেত।
এ ব্যাপারে পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার সাদেক জানান, গত বছর এ জেলায় ২৬৫ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছিল। এ বছর তা কমে এসেছে ২১০ হেক্টরে। চাহিদার তুলনায় শসা বেশি উৎপাদন হওয়ায় দাম হঠাৎ পড়ে গেছে। তবে এভাবে যদি কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পান তবে আগামী মৌসুমে শসাসহ অন্যান্য সবজি উৎপাদনে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।