জুমবাংলা ডেস্ক : গত মে মাসে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রিমেলের স্মৃতি মুছে যেতে না যেতেই ধেয়ে আসছে আরও একটি প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়। বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি উত্তর আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
লঘুচাপটি ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করে ২৩-২৪ অক্টোবরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আর সৃষ্ট সেই ঘূর্ণিঝড় ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে আঘাত হানতে যাওয়া এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডানা’। এই নামটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের দেওয়া। আরবি ভাষায় এই শব্দের অর্থ ‘সুন্দর এবং মূল্যবান মুক্তা’। ভয়ংকর এই ঘূর্ণিঝড়টি দমকা হাওয়াসহ ১৪০ কিলোমিটার বেগে আগামী ২৪ অক্টোবর উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে দেশের সমুদ্রবন্দরের জন্য কোনো সতর্কসংকেত নেই। তবে লঘুচাপটি ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক এই লঘুচাপটি থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা করছেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় অংশে প্রভাব ফেলবে। এটি আগের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের মতো একই পথে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে ঘূর্ণিঝড় ডানার উপকূলে আঘাত হানার প্রবল আশঙ্কার কথা জানান।
তিনি লেখেন, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে যা ঘূর্ণিঝড় আকারে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার প্রবল আশঙ্কার রয়েছে। লঘুচাপটি সোমবার (২১ অক্টোবর) নিম্নচাপে, মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) নিম্নচাপ ও গভীর-নিম্নচাপে এবং বুধবার (২৩ অক্টোবর) পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রবল শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় ডানা বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত ১২টার পর থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে সরাসরি তীব্র ঘূর্ণিঝড় রূপে স্থলভাগে আঘাত করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি গতি প্রতি ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটা হতে পারে। আর স্থলভাগে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়াসহ ১৪০ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৭-৮ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বেশি উচ্চতার পানি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় উপকূলের জেলাগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, ১৯ অক্টোবর আন্দামান সাগরের কেন্দ্রে একটি চক্রাকার ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। ২০ অক্টোবর সকালে এটি উত্তর আন্দামান সাগরের দিকে চলে যায় এবং একই এলাকায় অবস্থান করে। এর প্রভাবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর আন্দামান সাগরসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ আরও জানিয়েছে, এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২২ অক্টোবর সকালে লঘুচাপ ও ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর এটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২৪ অক্টোবর সকালে উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাবে।
এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি যদি জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানে তবে খুলনা বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ৮ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
তবে ঘূর্ণিঝড়টি যদি ভাটার সময় উপকূলে আঘাত হানে সেক্ষেত্রে এ অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।