আশাপাশে অনেকেরই ‘ডার্ক সার্কেল’ বা চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে তাদের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, ক্লান্তি বা ঘুমের অভাবের কারণে এমনটা হয়েছে। এ কারণে বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব সহকারে নিতে দেখা যায় না কাউকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চোখের নিচের কালো দাগ কখনো কখনো গভীর স্বাস্থ্য জটিলতার ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেয়ার পরও যদি চোখের নিচে কালো দাগ বা ছায়াযুক্ত ত্বক দেখা যায়, তবে তা উদ্বেগের বিষয়। তা শরীরের ভারসাম্যহীনতা বা অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো প্রতিফলিত করতে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, চোখের নিচের কালো দাগুলো কিডনি বা লিভারের কর্মহীনতা, রক্ত সঞ্চালনের দুর্বলতা, হরমোনের পরিবর্তন বা হজমের ব্যধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। কালো দাগের কারণ কী, তা বুঝে নিতে পারলে শনাক্ত করা যাবে―সমস্যা অস্থায়ী নাকি গুরুতর অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত।
ক্রমশ কালো দাগ থাকলে কিডনি, লিভারসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে:
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথে প্রকাশিত এক গবেষণায় পেরিওরবিটাল হাইপারপিগমেন্টেশনের (ডার্ক সার্কেল) প্রাদুর্ভাব ও মানসিক চাপ এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে এর সম্পর্ক পরীক্ষা করা হয়েছে।
কিডনি ফেউলিউর:
চোখের নিচে কালো দাগ স্বাভাবিকভাবে মুখকে ক্লান্ত ও প্রাণহীন দেখাতে পারে। চিকিৎসাশাস্ত্রে কিডনির দুর্বল কার্যকারিতা ত্বকের শুষ্কতা ও নিস্তেজতা বাড়ায় বলে বিশ্বাস করা হয়, বিশেষ করে চোখের নিচের কালো দাগ। কিডনি যখন দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে না, তখন শরীরের বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে থাকে এবং এ কারণে চোখের চারপাশে তরল ধরে রাখা ও রঙ্গক পরিবর্তন হয়ে থাকে। সময়ের সঙ্গে এটি ক্রমশ কালো হতে পারে।
তবে সব কালো দাগ কিডনি রোগের ইঙ্গিত দেয় না। মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কাজ, অনিয়মিত ঘুমের জন্যও চোখের নিচে কালো দাগ দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ মুখের ত্বকে রক্ত প্রবাহ এবং অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। এ কারণে ত্বকের রঙ অধিকতর খারাপ হতে পারে। কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ও কালো দাগ কমাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো ও চাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
লিভারের রোগ:
চোখের নিচে কালো দাগ দেখা দেয়া অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী লিভারের সমস্যার লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। দুর্বল লিভার রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ ফিল্টার করতে লড়াই করে, এ কারণে ত্বকের রঙ নিস্তেজ ও অসম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মানুষের চোখের নিচে কালো দাগ লক্ষণ করা যায়। লিভার ফুলে যায় বা চর্বিযুক্ত হলে, তখন এটি বিপাক ও টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহকে প্রভাবিত করে; এ কারণে চোখ ক্লান্ত দেখায়।
আবার লিভারের কার্যকারিতা তরল ধরে রাখা, রক্ত সঞ্চালনে পরিবর্তন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে চোখের নিচের অংশে ছায়া, ফোলাভাব ও সামগ্রিক ত্বকের নিস্তেজতা তীব্র করতে পারে। এ কারণেও চোখ ক্লান্ত দেখাতে পারে।
লিভারের রোগ ধারণা করা হলে কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। যাতে লিভার স্বাভাবিক হতে পারে। এ জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, যেমন- ডিম, মাছ, চর্বিহীন মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ করতে হবে, এসব লিভারের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। আর অ্যালকোহল গ্রহণ কমানো, প্রক্রিয়াজাত খাবার না খাওয়া এবং সক্রিয় থাকা ডিটক্সিফিকেশনে সহায়তা ত্বক ভালো করতে পারে।
অনিয়মিত মাসিক:
নারীদের ক্ষেত্রে চোখের নিচে কালো দাগ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা অনিয়মিত মাসিকের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, দুর্বল রক্ত সঞ্চালন ও শরীরে ঠান্ডা স্থবিরতা চোখের নিচে কালো দাগের সঙ্গে সম্পর্কিত। মাসিক যখন বিলম্বিত হয়, বেদনায়ক বা ভারী হয়, তখন রক্ত প্রবাহ সীমিত হতে পারে। এ কারণে মুখের ত্বকে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ কমে যায়। যা থেকে চোখ ভেতরে চলে যাওয়া, ক্লান্ত ও অকালে বৃদ্ধ দেখায়।
মাসিকের সমস্যা অব্যাহত থাকলে রক্তাল্পতা বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মতো অন্তর্নিহিত রোগগুলো বাদ দেয়ার জন্য একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো এবং আয়রন, ভিটামিন বি১২, ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করা রক্ত সঞ্চালন এবং ত্বকের রঙ উন্নত করতে ভূমিকা রাখতে পারে।
চোখের নিচের কালো দাগের চিকিৎসা:
চোখের নিচের কালো দাগের চিকিৎসা মূলত এর কারণের ওপর নির্ভর করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রার অভ্যাস উন্নত করার মাধ্যমে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো, মানসিক চাপ না নেয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখা হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ। আবার ফলমূল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন ও গোটা শস্যসমৃদ্ধ খাবার স্বাস্থ্যকর ত্বক ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া যেকোনো সমস্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে কালক্ষেপণ করা যাবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।