বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে নতুন যে স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এর মধ্যে অতিরিক্ত ওজন একটি। ওজন কমাতে সারা পৃথিবীতেই মানুষ নানা ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং এর পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরাও বসে নেই, তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিভাবে খুব সহজে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে ওজন কমিয়ে রাখার ওষুধ বা ব্যবস্থা আবিষ্কার করা যায়।
এই প্রচেষ্টারই অংশ হিসেবে মার্কিন বিজ্ঞানীরা একধরনের পিল আবিষ্কার করেছেন, যা সাধারণ পিলের মতোই পানির সাহায্যে পেটে চালান দিতে হবে।
ওজন কমানোর জন্য প্রত্যেক বেলা খাবারের আগে নতুন আবিষ্কৃত এ ওষুধ সেবন করতে হবে। এটা একটি কম্পন সৃষ্টিকারী পিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি মাল্টিভিটামিন আকারের একটি ক্যাপস্যুল তৈরি করেছে এবং ম্যাসাচুসেটসের পিলটি পাকস্থলীতে গিয়ে পড়লে তা সেখানে এক ধরনের সহনীয় কম্পন সৃষ্টি করবে এবং সেখান থেকে ব্রেইনকে সঙ্কেত দেবে যে, তার পাকস্থলী ভরে গেছে।
এ ধরনের সঙ্কেত পেলে আর কোনো খাবার গ্রহণ না করার জন্য ব্রেইন পাকস্থলীকে নির্দেশ দেবে। এর ফলে পেট ভরে গেছে বলে মনে করবে পিল গ্রহণকারী ব্যক্তি। এ ধরনের একটি রিপোর্ট ডেইলি মেইল অনলাইন প্রকাশ করেছে গত বছরের ডিসেম্বরে।
মানুষের সাথে শূকরের দেহের বেশ মিল রয়েছে। নিয়ন্ত্রিত একটি গ্রুপের তুলনায় পরীক্ষার জন্য বেছে নেয়া শূকরের পেটে খাবারের ২০ মিনিট আগে এমন ক্যাপস্যুল ভরে দিলে পরীক্ষায় শূকরগুলো গড়ে ৪০ শতাংশ খাবার কম খেয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। পিল বলা হলেও এটা একধরনের ডিভাইস।
এই ডিভাইসটি এখনো মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়নি; কিন্তু গবেষকরা বলছেন, পিল বা ডিভাইসটি মানুষের ক্ষুধা কমাতে অথবা ওজন কমাতে ব্যবহার করা যাবে। গবেষকরা বলেছেন, এই পিলটি পানি দিয়ে গিলে খেলে অর্থাৎ ডিভাইসটি ব্যবহার করলে বমি বমি ভাব হয় না অথবা বমি হওয়ার প্রবণতা থাকে না। ডায়াবেটিস কমানোর জন্য ঠিক একই ধরনের আরেকটি ডিভাইস আবিষ্কার করা হয়েছে। ক্ষুধা অথবা ওজন কমানোর নতুন এই ডিভাইসটিতে ডায়াবেটিসের ডিভাইস ওজেম্পিকের মতো বমি বমি ভাব হয় না।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ড. শ্রী নিভাসন বলেন, ওজন কমাতে চান অথবা বর্ধিত ক্ষুধা কমাতে চান এমন ব্যবহারকারীকে প্রতি বেলা খাবারের আগে এই ক্যাপস্যুলটা পানির সাহায্যে গিলতে হবে। এটা খুবই চমকপ্রদ যে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো যায় যা আমরা অন্যান্য ফার্মাকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্টে পাই। নতুন এই ডিভাইসটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ভাইব’। এটা এখনো সবার জন্য সহজলভ্য নয়; কিন্তু গবেষকরা বলছেন, ডিভাইসটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছাড়া হলে এটা সবার জন্য ব্যয় সাশ্রয়ী হবে। বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসার আগেই এটা মার্কিন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বীমা ছাড়া মার্কিন বাজারে এই ডিভাইসটির এক মাসের মূল্য পড়ে ৮০০ ডলার (৯৬ হাজার টাকা, এক ডলার ১২০ টাকা ধরে)।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই মুহূর্তে প্রতি বেলা খাবারের আগে ওজন কমাতে চান এমন ব্যবহারকারীর একটি নতুন পিল লাগে; কিন্তু ভবিষ্যতে ডিভাইসটির আধুনিকায়ন হলে এটা স্থায়ীভাবে পাকস্থলীতেই থাকবে এবং এটা ব্যাটারির সাহায্যে বাইরে থেকে চালানো যাবে।
একবার গিলে ফেলতে পারলেই ডিভাইসটি পাকস্থলীতে গিয়ে কম্পন শুরু করবে এবং ব্রেইনকে সঙ্কেত পাঠাবে যে, তার ক্ষুধা মিটে গেছে, আর খাবার লাগবে না। তখন ব্যবহারকারী এর চেয়ে বেশি খাবার খাবেন না এবং প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ স্বাভাবিকভাবে যে খাবার খান এই ডিভাইসটি পেটে গিয়ে পড়লে এর চেয়ে আরো কম খাবার খেলেই ব্রেইনকে সঙ্কেত পাঠাতে শুরু করবে যে, আর খাবার লাগবে না। এভাবে শরীর যখন প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার পাবে, তখন শরীরে আর অতিরিক্ত চর্বি জমবে না এবং ব্যবহারকারীর দৈহিক ওজন কমতে শুরু করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।