আরএম সেলিম শাহী : শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকোচায় সোমেশ্বরী নদীতে একটি রাবারড্যাম পালটে দিতে পারে ৫ হাজার কৃষকের ভাগ্যের চাকা।
এ নদীতে একটি রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি কৃষকদের দীর্ঘ দিনের। কিন্তু আজো তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে প্রতিবছর সুস্ক মৌসুমে সেচ সংকটে পরে শতশত কৃষক। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এ নদীর উপর একটি রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি উঠে কৃষকদের পক্ষ থেকে।
বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া যায়, জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে প্রতি বছর বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে পরতে হয় ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা,গুরুচরনদুধনই,
পানবর,জুকাকুড়া,আয়নাপুর, দুপুরিয়া,কারাগাঁও, বাগেরভিটা,দাড়িয়ারপাড়,কান্দুলী, জড়াকুড়া, কালিনগর, ধলি,গজারমারিসহ ১৫টি গ্রামের কৃষক।
উল্লেখ্য,সোমেশ্বরী নদীর উৎসস্থল ভারতে। নদীটি শ্রীবরদী উপজেলার খাড়ামুড়া ও বালিজুড়ী হয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলায় প্রবেশ করে।
এ নদীটির প্রবেশদ্বার শ্রীবরদীতে হলেও পুরো নদীটি বিস্তৃত ঝিনাইগাতী উপজেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রায় ৫ হাজার কৃষক ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করে থাকে।
শ্রীবরদী উপজেলায় আবাদ হয় ৬শ’ একর জমি। জানা গেছে, শ্রীবরদী উপজেলার ৬শ একর জমিতে বোরো আবাদ করতে সোমেশ্বরী নদীর উজানে বালিজুরিতে প্রতিবছর সুস্কমৌসুমে বাঁধ নির্মান করে নদীর গতিপথ বন্ধ করে দেয়া হয।
ফলে সেচ সংকটে পরে ভাটি অঞ্চলের ঝিনাইগাতী উপজেলার ১৫ টি গ্রামের শতশত কৃষক। ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামসহ কৃষকরা জানান, ঝিনাইগাতী উপজেলার ১৫টি গ্রামের শতশত কৃষকের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন বোরো আবাদ।
কারণ বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে ভাটি এলাকার শতশত একর আবাদি জমি পানিতে নিমজ্জীত হয়ে পরে । ফলে এসব জমিতে আমন আবাদ করতে পারে না কৃষকরা। তাই তাদের একমাত্র ভরসা বোরো আবাদ। সোমেশ্বরী নদীর উজানে বালিজুড়ীতে স্থানীয় কৃষকরা প্রতি বছর নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে নদীর গতি বন্ধ করে দিয়ে নদীর এ পানিতে শ্রীবরদী উপজেলায় বোরো আবাদ করে থাকে।
এতে সেচ সংকটে পড়েন ঝিনাইগাতীর প্রায় ৫ হাজার কৃষক। ব্যাহত হয় ভাটি অঞ্চলের কৃষকদের বোরো আবাদ। সোমেশ্বরী নদীর বালিজুড়ীতে যে বাধটি নির্মাণ করা হয়। ওই বাধের পানিতে ২ হাজার কৃষক বোরো আবাদ করে থাকে। আর ওই ২ হাজার কৃষকের সেচের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ভাটি অঞ্চলের ৫ হাজার কৃষকের সেচ সংকট সৃষ্টি করা হয়। এতে ব্যাহত হয় ভাটি অঞ্চলের বোরো আবাদ।
এ যেন ভাটি অঞ্চলের কৃষকদের মরার উপর খড়ার ঘাঁ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষকরা জানান, সোমেশ্বরী নদীর উজানে তাওয়াকুচা একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হলে দু’উপজেলার কৃষকদের সেচ সংকট সমাধান হবে।
এছাড়া সল্পমুল্যে রাবারড্যামের পানি সেচ কাজে ব্যাবহার করে দুই উপজেলার কৃষকরা অধিকহারে বোরো আবাদ করতে সক্ষম হবে। শ্রীবরদী উপজেলার রানিশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা ও ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন সোমেশ্বরী নদীর উপর একটি রাবারড্যাম নির্মাণের দাবি এলাকার কৃষকের দীর্ঘদিনের।
বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া গেছে। কিন্তু আজো তা বাস্তবায়িত হয়নি। ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, সোমেশ্বরী নদীতে রাবারড্যাম নির্মাণ করা হলে দুই উপজেলার কৃষকদের সেচ সংকটের সমাধান হবে। কৃষকরা পাবে সল্পমূল্যে রাবারড্যামের পানি। এতে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতীতে চাষাবাদের পরিধিও বাড়বে। কৃষি ক্ষেত্রে ঘটবে বিপ্লব।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি’র শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন কৃষকদের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে সোমেশ্বরী নদীর উপর রাবারড্যাম নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে রাবারড্যাম নির্মান করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।