জুমবাংলা ডেস্ক : দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেলপথটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। শুরুর দিকে যদিও ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলবে কেবল একটিমাত্র আন্তঃনগর ট্রেন। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পটি নিয়ে রেলের একাধিক প্রস্তাব ও চিঠি পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। অথচ দেশের প্রধান পর্যটন শহরটির সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ স্থাপন হলে ঢাকা থেকে সরাসরি একাধিক ট্রেন, ট্যুরিস্ট ট্রেনসহ বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল রেলওয়ে। কোচ, ইঞ্জিন ও জনবল সংকটের কারণেই আপাতত তা আলোর মুখ দেখছে না বলে জানিয়েছেন রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে একাধিক সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ১০ মে প্রস্তাব চায় রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগ। এর পরই নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়ে সময়সূচি প্রণয়ন ও প্রস্তাব তৈরি করতে কাজ শুরু করে পরিবহন বিভাগ। পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে ঢাকা-কক্সবাজার পর্যন্ত একটিমাত্র ট্রেনের সময়সূচি তৈরি করে রেলভবনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট পর্যন্ত আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেনেরও প্রস্তাব দেয় পরিবহন বিভাগ। সর্বশেষ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি হওয়া ১৪৭টি মিটার গেজ কোচ দিয়ে নতুন ট্রেনগুলোর রেক-কম্পোজিশন সাজানো হচ্ছে।
রেলের দুই অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে দেয়া ট্রাফিক বিভাগের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আগামী সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি চালু হলে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সরাসরি দু-তিনটি ট্রেন পরিচালনার প্রয়োজন হবে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানীকৃত ১৪৭টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী নতুন কোচ দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে একটি, ঢাকা-সিলেট রুটে একটি নতুন নন-স্টপ ট্রেন চালুর বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বুড়িমারী-ঢাকা রুটে তিনবিঘা করিডোর ট্রেন ও ঢাকা-চিলাহাটি রুটে একটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনার বিষয়টিও বিবেচনাধীন। পাবনা-ঢাকা রুটে একটি আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনার জন্য জনগণের চাহিদা থাকলেও চালু করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে খুলনা-ঢাকা (ভায়া পদ্মা সেতু) ও রাজশাহী-ঢাকা (ভায়া পদ্মা সেতু) হয়ে একাধিক ট্রেন পরিচালনার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে ট্রেন সংখ্যা বাড়ানো হবে। ইঞ্জিন ও কোচস্বল্পতায় আপাতত সেগুলো চালু করা না হলেও কক্সবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলোয় ট্রেন সার্ভিস শুরু করতে প্রস্তাব চাওয়া হয় চিঠিতে।
পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের দপ্তর জানিয়েছে, ট্যুরিস্ট কার ক্রয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব, চাহিদা অনুযায়ী আশানুরূপ কোচ আমদানি না হওয়া, ইঞ্জিন আমদানি হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একাধিক ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে রেলওয়ে। মূলত শুরুতে একটি ট্রেন দিয়ে যোগাযোগ স্থাপনের পর পর্যায়ক্রমে সংকট নিরসন সাপেক্ষে ট্রেন সার্ভিস বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে রেলের অপারেশন বিভাগ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলমান রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ৮৪ শতাংশের মতো কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোলেও রেলপথমন্ত্রী সম্প্রতি কক্সবাজার সফরে গিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে এ পথে ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনের ঘোষণা দেন।
সশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করবে সরকার। একই সময়ে বহুপ্রতীক্ষিত ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথেও সরকার ট্রেন চালাতে চায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এগিয়ে এনে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস চালুর মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুফল দেখাতে চাইছে রেলওয়ে। তাই উদ্বোধনকালীন শতভাগ কাজ শেষ না হলেও শুধু ট্রেন চলাচলের উপযোগী করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হলেও বাণিজ্যিক ট্রেন সার্ভিস শুরু হতে আরো কয়েক মাস লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন রেলসংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া কোচ সংকট ও ইঞ্জিনস্বল্পতার কারণে চাইলেও অতিরিক্ত ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না। পর্যায়ক্রমে ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে সারা দেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে। রেলওয়েও দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস চালু করতে চায়। কেননা এটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ও সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট হবে। নতুন আসা কোচ দিয়ে ট্রেন সার্ভিস চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। উদ্বোধনের পর এক বা একাধিক ট্রেন চালানোর জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে শুরুতে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ট্রেন চালানো সম্ভব না হলেও পর্যায়ক্রমে ট্যুরিস্ট কার ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীর ট্রেন সার্ভিস বাড়ানো হবে।’
জানা গেছে, পূর্বাঞ্চলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিসের জন্য রেলভবনে দুটি সময়সূচি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী (ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন নং-১) ঢাকা থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে একটি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ট্রেনটি কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছবে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি পথে কক্সবাজার থেকে সকাল ১০টায় ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে। দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী (ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন নং-২) ঢাকা থেকে ট্রেনটি রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজারে পৌঁছবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি পথে একই ট্রেন কক্সবাজার থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছবে রাত ১০টায়।
রেলওয়েসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম প্রস্তাবে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছতে যাত্রার সময় লাগবে সোয়া ৯ ঘণ্টা এবং দ্বিতীয় প্রস্তাবে যাত্রার সময় হবে ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফৌজদারহাট দিয়ে এখনো বাইপাস রেলপথ নির্মাণ না হওয়ায় ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারে ট্রেন যেতে পারবে না। তাই চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে ইঞ্জিন পরিবর্তনজনিত কারণে ঢাকা-কক্সবাজারমুখী ট্রেনকে আরো অন্তত ১ ঘণ্টা সময়ক্ষেপণ করতে হবে। বিষয়টিকে রেলওয়ের অদক্ষতা ও ভুল পরিকল্পনা হিসেবে দেখছেন নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ একটি রেলপথ নির্মাণের শেষ পর্যায়ে এসেও রেলওয়ে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সরকারের এ সংস্থার অদূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণ এখনো সম্ভব হয়নি। কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস চালু হলে কয়েক দশকের মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু দিয়েই ভারী ট্রেন চলাচল করতে হবে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষ এ রেলপথের মাধ্যমে কক্সাবাজার ভ্রমণের জন্য মুখিয়ে রয়েছে। অথচ রেলপথ চালু হওয়ার পরও সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাবে দৃশ্যমান সুফল পাবে না এ পথের সেবাগ্রহীতারা।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।