স্পোর্টস ডেস্ক : মন খারাপ হলে বা দুঃখ-কষ্টে-শোকে কাতর হলে কি করে মানুষ? কাঁদে (অবশ্য অধিক শোকে পাথর হলে কান্না বন্ধও হয়ে যায় অনেক সময়)। হাসিখুশি, আনন্দে বা সুখে থাকলে কি করে মানুষ? হাসে। ক্লান্ত, অবসন্ন, পরিশ্রান্ত হলে বা ঘুম পেলে কি করে মানুষ? ঘুমায় বা নিদ্রার কোলে ঢলে পড়ে। ক্ষুধা পেলে কি করে মানুষ? ভোজনপর্ব সমাধা করে (প্রবাদে আছে, ‘মানুষ বাঁচার জন্য খায়, খাওয়ার জন্য বাঁচে না’)। পরম প্রিয় এ ধরণীতে অবস্থানের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে কি করে মানুষ? ওয়ানওয়ে টিকেট নিয়ে যাত্রা করে পরলোকের উদ্দেশ্যে।
তেমনি এ ক্রীড়াভুবনের ক্রীড়ামঞ্চের অসংখ্য ক্রীড়াবিদ তাদের মেধার বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে, সামর্থ্যরে সীমানা পেরিয়ে, প্রতিভার স্ফূরণ ঘটিয়ে, সাফল্যের দ্যুতি প্রজ্বলন করে, স্বীয় নৈপূণ্যে সমুজ্জ্বল হয়ে, ভক্ত-দর্শক-সমর্থক-সমালোচক-বিশ্লেকদের মন মাতিয়ে, তাদের হৃদয়ের এক কোণে ঠাঁই পেয়ে যখন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে উপনীত হন, তখন তাদের ইচ্ছে না থাকলেও বিদায় নিতে হয় খেলার মাঠ ছেড়ে। গ্রহণ করতে হয় অবসর। তবে সব ক্রীড়াবিদই তাদের মনমতো অবসর নিতে পারেন না।
কেউ ইনজুরির আগ্রাসনের কাছে নতি স্বীকার করে, কেউ দলে জায়গা না পেয়ে, কেউ অনুজ্জ্বল পারফম্যান্সের কারণে অব্যাহত তীক্ষè সমালোচনার বাণে জর্জরিত ও বিদ্ধ হয়ে, কেউ বয়সের কারণে বাধ্য হন খেলার ভুবনে আর বিচরণ না করতে। ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। বিশ্বকাপ নিঃসন্দেহে ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার এবং এই টুর্নামেন্টে নিজ দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা প্রতিটি খেলোয়াড়ের স্বপ্ন। ইতোমধ্যেই বিশ্বের সেরা দলগুলোই বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে।
তবে আরলিং হাল্যান্ড, মোহাম্মদ সালাহ, মার্কো ভেরাত্তি এবং ডেভিড আলাবার মতো ফুটবলের ক’জন বড় তারকা তাদের নিজ নিজ জাতীয় দল যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২২ বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারবেন না। ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ, যা কাতারে অনুষ্ঠিত হবে, সম্ভবত শেষবারের মতো আমরা ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে কিছু আধুনিক দিনের গ্রেটদের দেখতে পাব। এমনই শীর্ষ ১০ ফুটবলার এই লেখার প্রতিপাদ্য বিষয়।
এডিনসন কাভানি (উরুগুয়ে) ॥ এডিনসন কাভানি তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। উরুগুয়ের এই খেলোয়াড় তার জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত ১৩৩ ম্যাচে ৫৮ গোল করেছেন। ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং, দৃঢ়তা এবং কখনও হার না মানা মনোভাবের জন্য বিখ্যাত। তার বয়স এখন ৩৫ বছর এবং এবারের বিশ্বকাপই সম্ভবত তার শেষ বিশ্বকাপ।
কাভানি হয়তো এবারই শেষবারের মতো ঘরোয়া ফুটবলে ইউরোপের মাটিতে খেলছেন (ইংলিশ ক্লাব ম্যান ইউর হয়ে)। বয়স বেড়েছে তার, কিন্তু তিনি নিজের সেরা দিনে এখনও বিপজ্জনক হওয়ার ক্ষমতা রাখেন গোলস্কোরার হিসেবে। নিশ্চয়ই তিনি কাতার বিশ্বকাপে নিজের সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করবেন।
লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে) ॥ কাভানির স্ট্রাইকিং পার্টনার লুইস সুয়ারেজও ৩৫ বছর বয়স্ক। ইউরোপ ছেড়ে নিজ দেশের ক্যারিয়ারের প্রথম ক্লাব নাসিওনালের হয়ে খেলছেন। দেশের হয়ে ১৩২ ম্যাচ খেলে ৬৮ গোলের মালিক, যা সর্বোচ্চ। আধুনিক যুগের সবচেয়ে ভাল স্ট্রাইকারদের মধ্যে একজন হিসেবে তাকে এক সময় বিবেচনা করা হতো। সুয়ারেজ এখন তার শীর্ষ বছরগুলো পার করে ফেলেছেন। সাম্প্রতিক মৌসুমে তার ফর্মও হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপই সম্ভবত ‘এল পিস্তলেরো’র শেষ বিশ্বকাপ।
এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (আর্জেন্টিনা) ॥ এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া গত এক দশকে আর্জেন্টিনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ইনজুরির কারণে তার অনুপস্থিতিকে ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা জার্মানিকে হারাতে ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ব্যাপকভাবে দেখা হয়। ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনালে লা আলবিসেলেস্তের জয়সূচক গোলটি করেন মারিয়াই।
৩৪ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় ফরাসী ক্লাব পিএসজি ছেড়ে ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে যোগ দিয়েই চোটে পড়েছেন। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই চোট দীর্ঘায়িত হলে কাতার বিশ^কাপে না-ও দেখা যেতে পারে আর্জেন্টিনার হয়ে ১২২ ম্যাচে ২৫ গোল করা মারিয়াকে।
মার্কো রিউস (জার্মানি) ॥ মার্কো রিউস নিঃসন্দেহে তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড। দুর্ভাগ্যবশত, ইনজুরির কারণে জার্মান জাতীয় দলে তার সম্পৃক্ততা সীমিত ছিল। জাতীয় দলের হয়ে ৪৮ ম্যাচ খেলে ১৫ গোল করা রিউস বিশ্বকাপে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। তবে তিনি আশা করছেন, এবার কাতার বিশ^কাপ মাতাবেন। তবে ৩৩ বছর হয়ে যাওয়ায় এটিই হতে পারে তার শেষ বিশ^কাপ।
থিয়াগো সিলভা (ব্রাজিল) ॥ আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিশ্বমানের ডিফেন্ডারের অভাব নেই। কিন্তু তারপরও ৩৭ বছর বয়সী চেলসির সেন্টার ব্যাক থিয়াগো সিলভাই ব্রাজিলের ভরসার নাম। এটি সম্ভবত সিলভার শেষ বিশ্বকাপ। বিদায় নেয়ার আগে ব্রাজিলকে শিরোপা জেতাতে জানপ্রাণ দিয়েই খেলবেন ব্রাজিলের হয়ে ১০৭ ম্যাচ খেলে ৭ গোল করা সিলভা।
টমাস মুলার (জার্মানি) ॥ এবারের বিশ^কাপে জার্মানি ফেবারিট দল নয়। তারপরও তাদের আছেন টমাস মুলার নামের এক ফরোয়ার্ড, যাকে ইউরোপের ‘এ্যাসিস্ট কিং’ বলা হয়। অনেক ফুটবলবোদ্ধাই তাকে এই গ্রহের সবচেয়ে টেকনিক্যালি, ট্যালেন্ট এবং ইন্টেলিজেন্ট ফুটবলারদের মধ্যে একজন বলে বিবেচনা করেন। বায়ার্ন মিউনিখের এই ফরোয়ার্ডের বয়স ৩৩ প্লাস।
জাতীয় দলের হয়ে ১১৬ ম্যাচে যে ৪৪ গোল করেছেন, তার ১০টিই করেছেন বিশ্বকাপে। জার্মান ফুটবলপ্রেমীরা আশায় আছেন, কাতার বিশ^কাপেও নিজের বিশ^কাপ গোলসংখ্যা আরও বাড়িয়ে দলকে অন্তত ভাল একটা পর্যায়ে নিয়ে যাবেন মুলার।
করিম বেনজেমা (ফ্রান্স) ॥ ছয় বছর অনুপস্থিতির পর ২০২১ সালে ফ্রান্স জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনা হয় করিম বেনজেমাকে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দল ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন এই ফ্রেঞ্চম্যান, যার ফলে তিনিই ফিফা ব্যালন ডি’অর জিততে চলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ জন্যই ফরাসী ফুটবলপ্রেমীরা ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপে তার কাছ থেকে বড় কিছু আশা করছে। তবে জাতীয় দলের হয়ে ৯৭ ম্যাচে ৩৭ গোল এবং রিয়ালের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা বেনজেমার বয়স এখন ৩৪ বছর এবং এটাই সম্ভবত তার শেষ বিশ্বকাপ।
লুকা মদ্রিচ (ক্রোয়েশিয়া) ॥ লুকা মদ্রিচ ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ‘গোল্ডেন বল’ জিতেছিলেন। সেবার তিনি ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে তার দল শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের কাছে হেরে গিয়েছিল। কাতার বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার সময় লুকার বয়স হবে ৩৭। যা হোক, তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন এবং আবারও ক্রোয়েশিয়ার ত্রাণকর্তা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা) ॥ লিওনেল মেসি তর্কাতীতভাবে সর্বকালের সেরা ফুটবলার। রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। ১৯৯৩ সালের পর আর্জেন্টিনা আন্তর্জাতিক শিরোপা (কোপা আমেরিকা) জিতেছে তার নেত্বতেই। আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ও তিনিই ছিলেন। ৩৫ বছর বয়সী জাতীয় দলের হয়ে ১৬২ ম্যাচে ৮৬ গোল করা মেসি ৫১টি এ্যাসিস্টও করেছেন। বিশ্বকাপই অর্জন থেকে বাদ পড়া একমাত্র ট্রফি এবং তিনি এটি জিততে চাইবেন যা আমরা তাকে শেষবারের মতো টুর্নামেন্টে দেখতে পাব। তা ছাড়া টানা ৩৩ ম্যাচে অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনাও আছে দুর্ধর্ষ ফর্মে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো (পর্তুগাল) ॥ পুরুষদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১১৭ গোল (১৮৯ ম্যাচে) করে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। এই পর্তুগীজকে সবাই খুব মিস করবে যখন তিনি শেষ পর্যন্ত তার বুটগুলো ঝুলিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন। তার বয়স এখন ৩৭। এবং ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে তিনি খেলবেন, এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বিদায়বেলায় কাতারে পর্তুগালের জন্য তার সর্বস্বই নিংড়ে দেবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।