জুমবাংলা ডেস্ক : গেল দু’বছর করোনার কারণে আম রপ্তানি করতে না পেরে লোকসান গুনেছেন মেহেরপুরের অনেক বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী। এ বছর করোনার প্রকোপ কমায় কিছু বাগান মালিক আম ব্যাগিং করেছেন। তবে বিদেশি ক্রেতাদের সাড়া মেলেনি। ফলে লোকসানের শঙ্কায় তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মেহেরপুরে এবার ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার টন। হিমসাগর, ল্যাংড়া, বোম্বাই, ফজলি, আম্রপালিসহ নানা জাতের আমের কদর রয়েছে দেশজুড়ে।
২০১৬ সালে ব্যাগিং শুরু হয় মেহেরপুরের আম। এ অঞ্চলে প্রায় ৪০০ বাগান মালিক রয়েছেন।
২০১৭ সালে ১৩০ জন চাষির প্রায় ৪ হাজার টন আম রপ্তানি করা হয়। ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিদরে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা আয় হয়। ২০১৮ সালে ১৮০ জন রপ্তানি করেন সাড়ে চার টন। ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজিদরে ৩৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করেন তাঁরা। ২০১৯ সালে ১৮০ জন চাষি ৪ হাজার টন আম রপ্তানি করেন। প্রতিযোগিতার কারণে আমের দাম কিছুটা কমে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়। ওই বছর ৩২ কোটি টাকা আয় হয়।
২০২০ সালে ১৯০ জন চাষি আম রপ্তানি করতে চুক্তিবদ্ধ হন। ওই বছর করোনার কারণে পুরো রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের চাষি শাহীন আলম জানান, প্রতিটি ব্যাগের বাজারমূল্য চার টাকা। প্রতিটি আম ব্যাগিং ব্যয় এক টাকা। পরিচর্যা, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করতে প্রতি কেজি আম উৎপাদনে বাড়তি খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। বালাইনাশক প্রয়োগ করে কেজিপ্রতি খরচ হয় চার থেকে পাঁচ টাকা। এত ব্যয়ের পরও আম বিদেশে পাঠাতে পারছেন না তাঁরা। এখন দেশের বাজারের ওপর নির্ভর করছে তাদের লাভক্ষতি।
রপ্তানিকারক প্রতিনিধি মফিজুর রহমান জানান, করোনার প্রভাব কেটে গেলে আম কেনার কথা ছিল। রপ্তানিকারকের সঙ্গে যোগাযোগও হয়। তাঁরা বলছেন, ‘বিদেশে চুক্তি করতে না পারায় এ বছর আম কিনছেন না।’
সদর উপজেলার পাটকেলপোতা গ্রামের আমবাগান মালিক রফিকুল আলম জানান, ২০১৭, ১৮ ও ১৯ সালে ব্যাগিং আম ইউরোপে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। করোনার কারণে ২০২০ সাল থেকে রপ্তানিকারকরা মেহেরপুর মাড়ায়নি। এ বছর করোনার প্রকোপ নেই ভেবে আম ব্যাগিং করেছেন চাষিরা। তবে রপ্তানির জন্য চুক্তি করতে পারেনি কৃষি বিভাগ। তাই দেশের বাজারেই নির্ভর করতে হচ্ছে তাঁদের।
বুড়িপোতা গ্রামের সিরাজ উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘আড়াই লাখ টাকা খরচ করে ১১০টি গাছের আম ব্যাগিং করেছিলাম। আশা ছিল অন্তত ১০ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। করোনা নিরাশ করে দিয়েছে। কপাল খারাপ, রপ্তানিকারকরা আম না কেনায় এ বছর বিদেশে পাঠাতে পারছি না।’
ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান খোকন বলেন, ‘মুকুলের সময় বাগান কিনে আম ভালো আসেনি। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছি। গাছে যে আম আছে তাতে বাজারে ভালো দাম না পেলে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. সামসুল আলম বলেন, এ বছর আমের ভালো ফলন হয়নি। আবার রপ্তানির সঙ্গে জড়িত কেউ কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। করোনার সময় রপ্তানিকারকদের খোঁজ মেলেনি। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে কাঁচামাল সংরক্ষণাগারের বিষয়ে। তাহলে কৃষকরা আমসহ নানান কাঁচামাল ইচ্ছেমতো বিক্রি করতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।