জুম-বাংলা ডেস্ক : কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগরীকে দ্বিতীয় দফা ডুবে যেতে দেখল নগরবাসী। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ১৫ বছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কয়েশ কোটি টাকা ব্যয় করলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকার অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে চলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে জলাবদ্ধতার সাথে যানজট নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়িয়েছে বহুগুণ।
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজধানীতেও যে ভারী বৃষ্টি হবে সেই পূর্বাভাস আগেই দিয়ে রেখেছিল আবহাওয়া অফিস। অনবরত ঝরতে থাকা বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই। রাতভর বৃষ্টির পর সকাল এবং দুপুরেও অনবরত আশ্বিনের বৃষ্টি ঝরতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, অলিগলিতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। যার কারণে যানবাহনের গতি কমে বিভিন্ন সড়কে বেঁধে যায় যানজট। সব মিলিয়ে কাজের জন্য বাইরে বের হওয়া রাজধানীবাসীর যেন ভোগান্তির শেষ নেই। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা থাকায় নগরবাসীকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ঝরতে থাকা বৃষ্টি সহসাই বন্ধ হচ্ছে না; বরং আরো কয়েকদিন এমন প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তারা জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
টানা বৃষ্টির ফলে গতকাল রাজধানীর কাকরাইল, নয়াপল্টন, বিজয়নগর কালভার্ট রোড, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, বাসাবো মায়াকাননসহ বিভিন্ন সড়ক, মানিকনগর, মুগদা ৫০০ শয্যা হাসপাতালের সামনের সড়ক, গোপীবাগ, মৌচাক, খিলগাঁও, সিপাহিবাগ, মিরপুর, পল্লবী, ইসিবি, মালিবাগ, সায়দাবাদ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেটের নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগঁাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকা, নিউমার্কেট, শনিরআখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশের সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অনেক এলাকায় রাস্তা পেরিয়ে ফুটপাতও ডুবে গেছে। মতিঝিলের অনেক বড় বড় বাণিজ্যিক ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকে যায়।
রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগরের রাস্তায় প্রায় হাঁটু পানি জমেছে। এর মধ্যে যানবাহন চলাচলের কারণে সৃষ্ট ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে ফুটপাতে ও দোকানে। ওই রাস্তায় আসা পথচারী মফিজুর রহমান বলেন, পুরো রাস্তায় হাঁটু পানি জমেছে।
এর মধ্যে যখন যানবাহন চলাচল করছে সেই ঢেউ এসে আমাদের গায়ে আছড়ে পড়ছে। অনেক দোকানে পানি ঢুকে গেছে। আর বৃষ্টি তো চলছেই। সব মিলিয়ে আজ যারা কাজে বের হয়েছেন তারা খুব ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বনশ্রীর বাসিন্দা বাপ্পী সরদার অফিস পল্টনে। সকালে বৃষ্টিতে ভিজে পানির মধ্যেই বাসে করে তিনি অফিসে এসেছেন। ভেবেছিলেন বিকালে বাসায় ফেরার সময় ভোগান্তি কম হবে। কিন্তু রওনা দিয়ে দেখলেন কাকরাইল থেকে মালিবাগ এলাকায় অথই পানি। পারভেজ বলেন, কাকরাইল পর্যন্ত ঠিকভাবে আসতে পেরেছি। এরপর আর রিকশা, সিএনজি কিছুই যেতে চায় না। আর যারা যেতে চায়, তারা প্রায় তিনগুণ ভাড়া চাচ্ছে। বাসের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে এত ভিড় যে তাতেও ওঠার উপায় নেই। বাধ্য হয়েও বাড়তি ভাড়া গুনে বাসায় ফিরলাম।
মগবাজারের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, সকালে হাঁটুপানিতে রিকশা নিয়েই অফিসে গেলাম। বৃষ্টি কমায় ভেবেছিলাম বিকেলে পানি নেমে যাবে। কিন্তু আবার বাসায় ফিরলাম রিকশা করেই বাড়তি ভাড়া দিয়ে। রাজধানীর গুলিস্তান থেকে ছেড়ে আসা অনাবিল বাসের চালক শাকিবুর রহমান বলেন, গুলিস্তান থেকে পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, আবুল হোটেল, রামপুরা বাজার পুরো এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়ে আছে বৃষ্টির কারণে। বিভিন্ন রাস্তায় জলাবদ্ধতা থাকায় গাড়ি খুব ধীর গতিতে চলছে। অনেক রাস্তায় হাঁটু পানি জমেছে, মানুষ ও গণপরিবহন চলতে খুব ভোগান্তি হচ্ছে।
সরকারি চাল বিক্রি করে ভারতে পালানোর সময় খাদ্য কর্মকর্তা আটক
গাবতলী থেকে মহাখালী পর্যন্ত আসা বৈশাখী বাসের যাত্রী সাইদুল ইসলাম বলেন, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট আসার রাস্তায় পানি জমেছে। বৃষ্টিতে সকাল থেকেই মানুষ খুব ভোগান্তির মধ্যে আছে। এর মধ্যে এখানে জলাবদ্ধতার কারণে যানজট সৃষ্টি হতে দেখেছি।
ধানমন্ডি ২৭, নিউমার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতার বর্ণনা দিয়ে সেদিক থেকে আসা সিএনজিচালক সবুজ আলী বলেন, অনেক সড়কেই জলাবদ্ধতা হয়েছে। এর মধ্যে নিউমার্কেট এলাকা, ধানমন্ডি ২৭ এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটা সিএনজি ঠেলে নিয়ে যেতে দেখেছি। পুরো রাস্তায় যানজট আর মানুষের সীমাহীন ভোগান্তি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।