জুমবাংলা ডেস্ক : ডেঙ্গুতে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হলেও নারীর মৃত্যুহার বেশি। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছরের মোট মৃত্যুর ৫৭ শতাংশই নারী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুষ্টিহীনতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে নারীর মৃত্যু হচ্ছে বেশি। গতকাল মঙ্গলবারও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শেষ চব্বিশ ঘণ্টার যে তথ্য দিয়েছে, তাতে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ১৬ জনের মধ্যে ৯ জনই ছিলেন নারী। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম নাজিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ ব্যাংকের পাবলিক অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক কান্তা বিশ্বাস ও মেডিকেল ছাত্রী সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসাও রয়েছেন। নাজিয়া ও কান্তা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪১৮ জন। এটি ২৩ বছরের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৬২ জন। বাকি ১ হাজার ২৫৬ জন ঢাকার বাইরের। সর্বশেষ চব্বিশ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৬ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৪ জন ও ঢাকার বাইরের ২ জন।
জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন ৩৭ হাজার ৬৮৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২০১ জন। এই জুলাইয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫৪ জন। আক্রান্তের মধ্যে ৬৪ শতাংশ পুরুষ। নারী ৩৬ শতাংশ। মারা যাওয়া রোগীর ১১৪ জন নারী, ৮৭ জন পুরুষ। নারীর মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সমকালকে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। অন্তঃসত্ত্বা নারীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ ছাড়া আমার মনে হয়, নারীরা দেরিতে হাসপাতালে আসছে। ডেঙ্গু শনাক্তেও দেরি হচ্ছে।
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. খালেদা ইসলাম সমকালকে বলেন, পুষ্টির বিষয়ে নারীরা বেশ উদাসীন। এ ছাড়া রোগ হলেও চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না তারা।
বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর শয্যা
গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে নিয়ে এক বৈঠক শেষে সব সরকারি হাসপাতালে শয্যা বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীর প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য ১০০ থেকে ২০০ শয্যা বাড়াতে হবে।
আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাজিয়ার মৃত্যু
এদিকে, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম নাজিয়া সুলতানা মারা গেছেন। তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গত শুক্রবার তাঁর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। রোববার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। সেখানে দু’দিন থাকার পর তাঁর মৃত্যু হয়।
নাজিয়ার স্বামী বলেন, আমাদের ছয় বছর আগে বিয়ে হয়েছে। এর আগে নাজিয়া অন্তঃসত্ত্বা হলেও কয়েক মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে যায়। এবার অনাগত সন্তান ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল। ডেঙ্গু সেই স্বপ্ন চুরমার করে দিল। আমাকে একা রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নিল নাজিয়া। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বাণিজ্যমন্ত্রী শোকবার্তায় বলেন, নাজিয়া অত্যন্ত মেধাবী ও চৌকস কর্মকর্তা ছিলেন।
আড়াই বছরের কন্যা রেখে অনন্তযাত্রায় ব্যাংক কর্মকর্তা
ডেঙ্গুতে মারা গেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পাবলিক অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক কান্তা বিশ্বাস। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। কান্তা বিশ্বাস আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ২০১৯ সালে কান্তা বিশ্বাস সহকারী পরিচালক পদে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। তাঁর আড়াই বছরের কন্যা রয়েছে। এদিকে কান্তা বিশ্বাসের অকালমৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তাঁর সহপাঠী, সহকর্মী, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
মেডিকেল ছাত্রীর মৃত্যু
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। রাইসার স্বামী তানজিম বলেন, গত ১৮ জুলাই রাইসার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই তাঁকে প্লাজমা দেওয়া হয়।
২০ বছরের পর কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর
পরদিন তাঁর প্লাটিলেট তিন হাজার মিলিমিটারে নামে। পরে চিকিৎসকরা প্লাজমা না দিয়ে সরাসরি ওষুধ দেন। ২১ জুলাই তাঁর প্লাটিলেট কাউন্ট ২১ হাজার মিলিমিটারে উঠে আসে। তারপরও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।