জুমবাংলা ডেস্ক : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশার শিল্পী বেগম (৪০) সাত বছর আগে হঠাৎ মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। তখন তিনি নববধূ। মানসিক রোগে আক্রান্ত হবার পর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। সংসারে শিল্পী হয়ে পড়েন একা। ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে।
সেখানে তার মানসিক সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। তিনি সহসাই আক্রমণাত্মক হয়ে যেতেন। চলে যেতেন এদিক সেদিক।
উপায়ান্তর না পেয়ে পরিবারের সদস্যারা শিকলবন্দি করে ঘরে আটকে রাখতেন শিল্পীকে। সেই অবস্থায় তাকে পরিচর্যা করা হতো। শিকল খুললেই শিল্পী উধাও হয়ে যেতো বিধায় তারা তাকে শিকলে বেঁধে ঘরবন্দি করে রাখতেন। এভাবেই অন্ধকার ঘরে লোহার শিকলে বন্দি অবস্থায় শিল্পীর জীবনের দীর্ঘ সাতটি বছর কেটে যায়।
এ সময় বেশ কয়েকবার শিল্পীকে তার মা-বাবা, ভাই-বোন মিলে নানা জনের পরামর্শে দেখান ভণ্ড মোল্লা, কবিরাজ, সাধু সন্ন্যাসী। কিন্তু এদের অপচিকিৎসা আর প্রতারণার ফাঁদে পরে সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা তার অবস্থা দিনদিন আরও খারাপ হতে থাকে। এছাড়া তাবিজ, তেল পড়া আর যাদু ছাড়ানোর নামে তারা হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা।
অত:পর দুই মাস আগে সিলেট থেকে সুস্থ হওয়া একজন মানসিক রোগীর কাছ থেকে শিল্পীর অভিভাবকরা জানতে পারেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের স্নায়ু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ এনামের কথা। পরে তারা তাকে সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. সাঈদ এনামের কুলাউড়ার সাপ্তাহিক চেম্বার ‘ব্রেইন কেয়ার’-এ শিকলবন্দি অবস্থায় নিয়ে আসেন। শুরুতে সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. সাঈদ এনামের তত্ত্বাবধানে শিল্পীর ‘মানসিক রোগের’ আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চিকিৎসা শুরুর মাত্র তিন দিনের মাথায় শিল্পীর হাতে পায়ের শিকল খুলে দেন তার অভিভাবকরা। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হতে থাকেন। এ সময় ডাক্তারের চেম্বারে কথা হয় শিল্পী ও তার মার সাথে। তারা সাইকিয়াট্রিস্ট-এর প্রতি অশ্রুসিক্ত নয়নে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শিল্পীর মা নজিরূন বেগম জানান, শুধুমাত্র অজ্ঞতার জন্যে এতদিন তাদের মেয়ের সু-চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। মানসিক রোগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা তারা জানতেন না। গত ৭ বছরে ভণ্ড কবিরাজ, ভণ্ড মোল্লা সন্ন্যাসীর পেছনে খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা।
এ ব্যাপারে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাঈদ এনামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, শিল্পী গুরুতর ব্রেইন স্নায়ু ও মনোরোগ ‘সিজোফ্রেনিয়া’-তে আক্রান্ত ছিলেন। অসচেতনতায় তাকে দীর্ঘদিন শিকলবন্দি করে রাখার বিষয়টি দু:খজনক।
তিনি আরও বলেন, সিজোফ্রেনিয়া রোগ ভালো হয়। চিকিৎসা, ওষুধও এখন সহজলভ্য। প্রয়োজন কেবল সচেতনতা। আমাদের সমাজে মানসিক রোগ নিয়ে সচেতনতা কম। সচেতনতায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।