জুমবাংলা ডেস্ক : রংপুরে বেগুনের দামে ধস নেমেছে। এক মণ বেগুন বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়, তা দিয়ে মিলছে না এক কেজি চাল। তাই মনের দুঃখে বেগুন খাওয়ানো হচ্ছে গরুকে। কৃষকের শ্রমে ফলানো বেগুন রাজধানীতে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও কৃষক পাচ্ছেন মাত্র এক টাকা।
বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলার তেলিপাড়া এলাকার কৃষক আশরাফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে বেগুন।
কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, বেগুনের কেজি এক টাকা। এতে লাভ তো দূরের কথা, মজুরি তোলাই অসম্ভব। তাই বেগুন ছিঁড়ে জমিতেই ফেলে দিচ্ছি। কিছু গরুকে খাওয়ানোর জন্য বাড়িতে নিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, নিজের ৪০ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। শুরুতে দাম কিছুটা পেলেও রমজান থেকে বাজার মন্দা। এতে ৫০ হাজার টাকার মতো লোকসান হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য না থাকলে বেগুন বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা লাভ হতো।
আশরাফুলের মতো একই অবস্থা এলাকার বাকি কৃষকদের। তাদের মতে, এবার বেগুন চাষ করে উৎপাদন খরচই উঠছে না। এজন্য দায়ী অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থাপনা ও অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা।
সরেজমিনে কয়েকটি ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে প্রায় চার থেকে পাঁচ কেজি ওজনের বেগুন ধরেছে। দাম না থাকায় গাছেই বেগুন পচে যাচ্ছে। অনেকেই আবার ফ্রিতে বেগুন দিচ্ছেন।
তবে সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, দুর্গম এলাকা থেকে সবজি সংগ্রহ করে বাজারজাত করলে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যায়। ফলে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। কৃষকদের লাভবান করতে হলে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি করতে হবে বলে দাবি করেন তারা।
পাওটানা বাজারের বেগুন ব্যবসায়ী শমসের আলী বলেন, ছাওলা এলাকার দুর্গম চরের চাষিদের কাছ থেকে বেগুন কিনে বাজারে আনা পর্যন্ত পরিবহন খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থায় ওইসব এলাকা থেকে সবজি কিনে পুষিয়ে উঠতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। তাই সেখানকার উৎপাদিত ফসলের দাম একটু কম থাকে।
ছাওলা এলাকা থেকে মাত্র ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে বড় দরগা ও মাহিগঞ্জ বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজি দরে। বড়দরগা এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, পরিবহন খরচ, শ্রমিক খরচ, খাজনা মিলে কেনা দামের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি বিক্রি না করলে আমরাও ঘাটতিতে পড়ে যাব।
কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, বেগুন চাষিদের দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দিতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টানতে হলে এখনই নজর দিতে হবে বাজার ব্যবস্থাপনায়। আর সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা ও ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না করলে চাষিরা উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, এ বছর জেলায় দুই হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বেগুনের চাষাবাদ হয়েছে। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। প্রথমদিকে কৃষকরা আশানুরূপ দাম পেলেও শেষ সময়ে এসে কিছুটা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে সব জায়গার পরিস্থিতি এক নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।