জুমবাংলা ডেস্ক : ২০০৫ সালের কোনো একদিন। মা শিশু ইয়াছমিন আক্তারকে বিছানায় রেখে পাশের বাড়িতে পানিতে আনতে যায়। তখন চৌকির পাশে থাকা কোরোসিনের বাতি থেকে মশারিতে আগুন ধরে যায়।
ওই আগুনে শিশু ইয়াছমিনের দুই পা দগ্ধ হয়। পরে ডাক্তারের পরামর্শে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়। রগ পুড়ে ডান পাও অনেকটা শীর্ণ হয়ে যায়। শুরু হয় শিশু ইয়াছমিনের জীবন যুদ্ধ। এভাবে বড় হতে থাকে ইয়াছমিন।
দিনমজুর বাবার অভাবের সংসার। কৃত্রিম পা লাগানোর সামর্থ্য নেই। ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটা শুরু শিশু ইয়াছমিন আক্তারের। যখন বড় হতে থাকেন, তখন তিনি দেখে তার আশপাশের শিশুরা খেলছে, স্কুলে যাচ্ছে। একটা পর্যায়ে তার মা-বাবাকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য বায়না ধরেন। মেয়ের অদম্য শক্তির কাছে হেরে গিয়ে ভর্তির করানো হয় স্থানীয় পশ্চিম গাংচিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এরপর জীবনের ২০টি বসন্ত পার হয়ে গেছে। ইয়াছমিন এখন দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ইয়াছমিন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের গাংচিল গ্রামের দিনমজুর নুর নবীর মেয়ে। ইয়াছমিন এক পায়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে নিয়মিত কলেজে যান।
দেড় বছর বয়সে এক পা হারিয়ে কঠিন সংগ্রামে দমে যাননি ইয়াছমিন। দরিদ্রতা আর শারীরিক অক্ষমতা জয় করে তিনি এখন জেলার সদর উপজেলার ড. বশির আহমদ কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগে পড়ছেন। প্রথমে ভর্তি হন স্থানীয় পশ্চিম গাংচিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে গাংচিল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বর্তমানে দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে প্রথমে স্থানীয় গাংচিল বাজারে যান।
পরে সেখান থেকে গাড়ি করে সাড়ে ১৩ কিলোমটিার দূরে পাশের উপজেলার ড. বশির আহমদ কলেজে ক্লাস করছেন নিয়মিত। কলেজ ছুটির পর গাড়িতে করে প্রথমে বাজারে, তারপর বাড়ি ফিরতেও তাকে হাঁটতে হয় দেড় কিলোমিটার পথ। এভাবে বয়ে চলেছেন জীবনের ভার। বছরে ৫ হাজার টাকা প্রতিবন্ধী সরকারি ভাতা পান। কিন্তু সরকারের এ সহযোগিতা একেবারে অপ্রতুল।
ইয়াছমিন আক্তার বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমি লেখাপড়া করছি। পড়ালেখা শেষ করে আমি শিক্ষক হতে চাই। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতায় একটি কৃত্রিম পা সংযোজন হলে আমার সংগ্রামটা সহজ হয়।’
ইয়াছমিনের বাবা নুরনবী বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুর। শত কষ্ট-যাতনা সহ্য করে হলেও মেয়েকে লেখাপড়া করাব।’
ড. বশির আহমদ কলেজের প্রভাষক এএইচ তানিম বলেন, ইয়াছমিন যেটা সম্ভব করে চলেছে তা সবার কাছে অনুপ্রেরণা ও দৃষ্টান্ত।
সূত্র ও ছবি : রাইজিংবিডি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।