ধর্ম ডেস্ক : ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানব জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে ইসলামের দিকনির্দেশনা রয়েছে। সব ধর্মেই অর্থ উপার্জন ও প্রয়োজনে ভোগ করার অনুমতি প্রদান করেছে, তবে ইসলাম সম্পদ ভোগ করার ব্যাপারেও বিধিনিষেধ দিয়েছে। মানবজীবনের অপার নেয়ামত সম্পদে অতিরিক্ত ব্যয় ও অপব্যয় থেকে নিষেধ করেছে। যেহেতু অপচয়-অপব্যয় মানুষকে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন করে, তাই ইসলামি শরিয়ত তা কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশিমাত্রায় ব্যয় করার নামই অপচয়, যা আরবিতে ‘ইসরাফ’ বলা হয়। অন্যদিকে, অপব্যয় হচ্ছে সম্পদকে অবৈধ কার্যকলাপে ব্যয় করা, যাকে আরবিতে ‘তাবযির’ বলা হয়। (আত-তারিফাত জুরজানি রহ.) পৃষ্ঠা-২৪
সম্পদ আল্লাহর দেওয়া অপার নেয়ামত। তাই সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রে ইসলামি অনুশাসন মেনে চলা আবশ্যক। ইসলামি শরিয়তে যেমন কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি, তেমনি অপচয় ও অপব্যয়ের দুরারোগ্য ব্যাধি থেকেও বেঁচে থাকা জরুরি। অপব্যয় কত জঘন্য তা কুরআনের এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। আল্লাহতায়ালা অপব্যয়কারীকে শয়তানের ভাই আখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬, ২৭)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে ইবনে কাসিরে মুজাহিদ (রা.)-থেকে রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে ‘যদি মানুষ হক পথে তার সব মাল ব্যয় করে দেয় তবুও তাকে অপব্যয়কারী বলা হবে না আর যদি অন্যায়ভাবে এক মুঠ পরিমাণ মালও ব্যয় করে তবুও সে অপব্যয়কারীর অন্তর্র্ভুক্ত হবে’। প্রত্যেক মুমিনের আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা আবশ্যক। আর আল্লাহ অপব্যয়কারীকে ভালোবাসেন না। তাই মুমিন-মুসলমানের অপব্যয় থেকে বেঁচে থাকা একান্ত জরুরি। আল্লাহ বলেন, … এবং অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না’ (সূরা আল-আন’আম : আয়াত-১৪১)। কৃপণতা যেমন নিন্দনীয় বর্জনীয় তেমনি অপব্যয় করাও নিষিদ্ধ। তাই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা আবশ্যক।’ কুরআন মজিদে আল্লাহতায়ালা তার খাঁটি বান্দাদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন ‘আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে’ (সূরা ফুরকান : আয়াত-৬৭)। অপচয়-অপব্যয় থেকে বেঁচে থাকা জরুরি কারণ, হাদিসে আছে কেয়ামতে সম্পদের আয়-ব্যয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন ‘কেয়ামতের দিন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়ার আগে কোনো বান্দার পা-ই নড়বে না। তার জীবন সে কী সে ব্যয় করেছে, তার ইলম অনুসারে সে কী আমল করেছে, তার সম্পদ সে কোত্থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে আর তার শরীর কী সে নষ্ট করেছে?- (তিরমিজি, হাদিস-২৪১৭)।
অন্য হাদিসে আছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যা ইচ্ছা পানাহার কর এবং যা ইচ্ছা পরিধান কর, তবে শুধু দুটি বিষয় থেকে বেঁচে থাক, (এক) তাতে অপব্যয় অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি না হয় এবং (দুই) গর্ব ও অহংকার না থাকে (নাসায়ী : ২৫৫৯)। অপচয়-অপব্যয় না করে মিতব্যয়ী হলে আল্লাহতায়ালা বরকত দান করবেন এ প্রসঙ্গে নবি করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ব্যয় করার ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে সে কখনো দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত হয় না’
(মুসনাদে আহমদ-৪২৬৯)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।