জুমবাংলা ডেস্ক : ফরিদপুরের সালথায় এবার সিত্রাংয়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রোপা আমন চাষিরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তারা ক্ষেতের রোপা আমন ধান দ্রুত ঘরে তুলে পেঁয়াজ আবাদের দিকে নজর দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যে কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা।
আশানুরূপ ফলন না হলেও কৃষকদের সারা বছরের খাবার রোপা আমন নিয়ে উৎসবের ঘাটতি নেই। ফলন কেমন হয়েছে তা নিয়ে চিন্তাও করছে না কেউ। প্রতিটি গ্রামে গ্রামে চলছে নবান্নের উৎসব।
সম্প্রতি সরেজমিন উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠজুড়ে কৃষকরা দল বেঁধে রোপা আমন ধান কাটছেন। একদল ধান কাটছে, আরেক দল আঁটি বেধে তা মাথায় করে বাড়ির ওঠানে নিয়ে ফেলছেন। আবার কেউ কেউ মাঠ থেকে ধানের আঁটি ভ্যানযোগে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে বাড়ির নারীরাও বসে নেই। তারা মাঠের দিনমজুরদের খাবার সঠিক সময় পরিবেশন করে পাশাপাশি ওঠানে নিয়ে ফেলানো ধানের আঁটিগুলো খুলে শুকাতে দিচ্ছে। পরে সেগুলোর আবার মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করছেন।
এদিকে উপজেলার গ্রামাঞ্চলের ভিতর দিয়ে থাকা সড়কগুলো এখন কৃষাণ-কৃষাণীদের দখলে নিতে দেখা গেছে। কৃষাণ-কৃষাণীরা সড়কের উপর ধানের আঁটি শুকচ্ছে ও মাড়াই করছে। কোনো কোনো সড়কে নারীদের কুলা দিয়ে ধান উড়াতে দেখা যায়। এতে যান চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চালকদের। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। সড়ক ছাড়াও স্কুল এবং খেলার মাঠে ধান শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজ করতে দেখা গেছে।
তবে সড়ক ও খেলার মাঠ দখলের বিষয়ে কৃষকরা জানিয়েছেন, বাড়ির ওঠানে পর্যাপ্ত জায়গা ও রোদ না থাকার কারণে খোলামেলা জায়গায় বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
সালথা উপজেলার ভাওয়াল গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম বলেন, এবার ধানের ফলন তেমন ভালো হয়নি। বৃষ্টির পানিতে ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তার মধ্যে ৪৯ জাতের ধান মোটামুটি ভালো হয়েছে। প্রতি কাঠায় এক থেকে দেড় মণ পেয়েছি।
ইউসুফদিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছিলাম। এর মধ্যে সিত্রাংয়ের প্রভাবে ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে দুই বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আর বাকি দুই বিঘায় আনুমানিক ৩০ মণ ধান পেতে পারি। এতে আমার বছরের খাবার হয়ে যাবে; যা পেয়েছি এতেই সন্তুষ্ট। এখন ক্ষতির দিক চিন্তা না করে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলে পেঁয়াজ আবাদের দিকে নজর দিচ্ছি।
চিলেরকামদিয়া গ্রামের মতিয়ার মোল্যা বলেন, আমরা ধান কাটা শুরু করেছি। আমার চার বিঘা জমিতে ৫০ মণের মতো রোপা আমন ধান পেতে পারি। এতে শুধু বছরের খাবার হবে। এবার আর বিক্রি করতে পারব না। ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেঁয়াজ বেশি করে আবাদ করছি।
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জীবাংশু দাস বলেন, সালথায় ১১ হাজার ৫৭৭ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছিল। ইতোমধ্যেই কৃষকেরা ৯৫ শতাংশ জমির ধান কর্তন সম্পন্ন করেছেন। আর সিত্রাংয়ের প্রভাব খানিকটা পড়লেও সার্বিকভাবে ফলন আশানুরূপ হয়েছে। নবান্নের যে আমেজ এই হেমন্তে, তা কৃষকদের মাঝে আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।