জুমবাংলা ডেস্ক : কচুয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মামুনূর রশিদ বলেন, ‘সুজন গোলদার ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমাদের এখান থেকে কুল চাষের ওপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এরপরে এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় তাকে আমরা সার, কীটনাশক ও চারা দিয়ে সহায়তা করেছি।’
বাগেরহাটে শখের বসে ভারত সুন্দরী ও বল সুন্দরী জাতের কুল চাষ করে সফল হয়েছেন সুজন গোলদার নামের এক কৃষি উদ্যোক্তা।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কচুয়া শাখায় কর্মরত সুজন ২০২১ সালে নিজ পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ২০টি বল সুন্দরী জাতের কুলের চারা রোপণ করেন। ভালো ফলন পাওয়ায় জমি ও গাছের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন তিনি। বর্তমানে তার পাঁচ বিঘা জমির তিনটি প্লটে ভারত সুন্দরী, বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি জাতের কুল গাছ রয়েছে ১ হাজার ৬০০টি। এখান থেকেই বছরে তিনি আয় করছেন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বিষখালী গ্রামে সুজন গোলদারের অ্যাগ্রো বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে রসালো মিষ্টি ভারত সুন্দরী, বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি আপেল কুলের। কুলের ভারে নুইয়ে পড়া প্রতিটি গাছে ধরে আছে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি করে কুল। তিনটি প্লটে প্রায় ৫ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের এই কুল চাষ করছেন সুজন গোলদার। বর্তমানে তার বাগানে কুল গাছ রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি। আর বাগানের পরিচর্যায় কাজ করছেন আটজন।
কৃষি উদ্যোক্তা সুজন গোলদার বলেন, ‘২০২১ সালে শখের বসে খুলনার পাইকগাছা থেকে বল সুন্দরী জাতের ২০টি চারা সংগ্রহ করি। এরপর পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য বসতবাড়ির আঙ্গিনায় চারাগুলো রোপণ করি। ভালো ফলন পাওয়ায় কচুয়া কৃষি অফিস থেকে কুল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং দুটি প্লটে প্রায় ৪ বিঘা জমিতে বল সুন্দরী ও ভারত সুন্দরী জাতের ১২০০ চারা রোপণ করি।
‘২০২২ সালে ভালো ফলন ও লাভ হওয়ায় জমি ও গাছের পরিমাণ আরও বাড়াতে থাকি। বর্তমানে আমার ৫ বিঘা জমির তিনটি প্লটে ভারত সুন্দরী, বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি জাতের কুল গাছ রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি। প্রতিদিন এই বাগান থেকে আমি ১০ থেকে ১২ মণ কুল সংগ্রহ করছি। এখান থেকেই বছরে আয় হচ্ছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ‘যার প্রতি মণ কুল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। আমার এখানে আটজন কর্মরত রয়েছেন। যারা গাছের পরিচর্যা থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ ও স্থানীয় হাট বাজারে বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলা থেকেও অনেক পাইকারি কুল ব্যবসায়ী আমার বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে থাকেন।’
বাগানে কর্মরত বিষখালি গ্রামের তপন মিস্ত্রি বলেন, ‘আমি গত এক বছর যাবত এই বাগানে কাজ করছি। আমাদের এখানে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী ও কাশ্মীরি জাতের তিনটি কুল রয়েছে। আমরা মূলত কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই শুধুমাত্র জৈব সার যেমন, সরিষা খৈল, ভার্মি কম্পোস্টসহ বিভিন্ন জৈব সার ব্যবহার করে গাছ তৈরি করেছি। এ কারণে আমাদের গাছে ভালো ফলনের পাশাপাশি ফলের সাইজও অনেক বড় হয়। এই ফলগুলো আমরা স্থানীয় বাধাল বাজারে বিক্রি করি। এ ছাড়া অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করেন।’
কচুয়া উপজেলার আন্দামানিক গ্রামের বাসিন্দা সুবীর মন্ডল বলেন, ‘আমি মূলত সুজনের বাগান দেখতে এসেছি। বাগানে ফল দেখে আসলেই আমি মুগ্ধ হয়েছি। প্রতিটা গাছে এত পরিমাণ ফল হয়েছে যে, ফলের ভারে গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। আমারও ইচ্ছা আছে এমন একটি বাগান করার। তাই সুজনের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ নিয়েছি।’
কচুয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মামুনূর রশিদ বলেন, ‘সুজন গোলদার ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমাদের এখান থেকে কুল চাষের ওপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এরপরে এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় তাকে আমরা সার, কীটনাশক ও চারা দিয়ে সহায়তা করেছি।
‘এ ছাড়া কচুয়াতে দিন দিন উচ্চ ফলনশীল জাতের বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী ও কাশ্মীরি জাতের কুল চাষের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আগ্রহী নতুন উদ্যোক্তা ও কৃষকদের কুল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা প্রদান করছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।