জুমবাংলা ডেস্ক : শুধু দেশে নয়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে অনন্য নজির গড়েছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। যার স্বীকৃতি মিলেছে জাতিসংঘ থেকেও। সিয়েরা লিওনে দ্বিতীয় মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। শুধু নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছে। ঐ দেশগুলোর শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে ২৪৭ শান্তিরক্ষীকে। বাংলাদেশ বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।
এমন প্রেক্ষাপটে আগামীকাল মঙ্গলবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস। অন্যান্য বছরের মতো এবারও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হবে। এবার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ১১ জন শান্তিকালীন পদক পাচ্ছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর পাঁচ জন, নৌবাহিনীর তিন জন এবং বিমান বাহিনী তিন জন সদস্য রয়েছেন। তাদের ২০২২-২০২৩ সালের শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করা হবে। দেশের সকল সেনানিবাস, নৌ-ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেবেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২১ নভেম্বর একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তিন বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। সমন্বিত এই আক্রমণে একতাবদ্ধ হয় মুক্তিবাহিনী, বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যগণ ও দেশপ্রেমিক জনতা। পরাজিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। প্রতি বছর দিনটিকে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালন করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৮০ সাল থেকে ২১ নভেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এর আগে ২৫ মার্চ সেনাবাহিনী, ১০ ডিসেম্বর নৌবাহিনী এবং ২৮ সেপ্টেম্বর বিমান বাহিনী স্বতন্ত্রভাবে তাদের নিজস্ব বাহিনী দিবস পালন করত। কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে উদযাপন বাদ দিয়ে ১৯৮০ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে গোটা সশস্ত্র বাহিনীর যে অসাধারণ লড়াই আর ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে, তাকে স্মরণ রাখতে এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অবদানকে দেশের আপামর জনগণের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয়।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শান্তিরক্ষী মিশনে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। সিয়েরা লিওনে সাধারণ মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশের সরকারপ্রধান ড. আহমেদ তেজান বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। সেখানকার মানুষ এখনো বাংলায়ও কথা বলেন। জাতিসংঘ থেকে বারবার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কাজের প্রশংসা করা হয়েছে। অন্য দেশেও মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
দেশের পার্বত্য অঞ্চলেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় দিন-রাত কাজ করেছেন সেনাসদস্যরা। একসময় পার্বত্য এলাকা ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। সেনাসদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সেখানে এখন পাহাড়ি-বাঙালি একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। সরকারের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা সেখানকার উন্নয়নে যুগান্তকারী সব উদ্যোগ নিয়েছে। দুর্যোগের সময় পাশে থাকা এবং অসহায় মানুষের কাছে সেনাসদস্যরা মানবতার দূত হিসেবে হাজির হন। ফলে এখন পার্বত্য এলাকায় সংঘাত কমে গেছে, মানুষ শান্তিতে বসবাস করছেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ঐ দিন সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা ও তিন বাহিনী প্রধানরা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এবং বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পাঁচ জন সেনা, তিন জন নৌ এবং তিন জন বিমানবাহিনী সদস্যকে ২০২২-২০২৩ সালের শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করবেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঢাকা সেনানিবাসস্থ সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে তিন বাহিনী প্রধানরা নিজ নিজ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের অনুরূপ সংবর্ধনা প্রদান করবেন। ঢাকা ছাড়াও বরিশাল, কক্সবাজার, বগুড়া, সিলেট, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর ও খুলনা সেনানিবাস ও ঘাঁটিতে সংশ্লিষ্ট এরিয়া সদর দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
এদিকে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। ঢাকা, খুলনা, চাঁদপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনী জাহাজসমূহ সর্বসাধারণের দেখার জন্য নোঙ্গরকৃত অবস্থায় রাখা হবে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ঐ দিন রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর সশস্ত্র বাহিনীর পরিবেশনায় ‘বিশেষ অনির্বাণ’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। বাংলাদেশ বেতার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘বিশেষ দুর্বার’ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলা ও ইংরেজি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।