মাওলানা শামসুল আরেফীন : নবীজী (সা.) অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতেন। হাদিস ও সিরাতের কিতাবে এর বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। নামাজে, নামাজের বাইরে, রাতের আঁধারে, দিনের আলোতে সর্বাবস্থায় তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতেন।
উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন, নামাজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নবীজী (সা.) এত দীর্ঘ সময় তিলাওয়াত করতেন যে, তার পা মুবারক ফুলে যেত। (সহিহ মুসলিম, হাদীস ২৮১৯, ২৮২০)
এছাড়াও রমজান মাসে হজরত জিবরীলকে (আ.) নবী কারিম (সা.) পূর্ণ কুরআন শোনাতেন এবং জিবরীল (আ.) থেকেও পূর্ণ কুরআন শুনতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬)
রাসুল (সা.) যেভাবে নিজে কুরআন তিলাওয়াত করতেন তেমনি সাহাবীদের থেকেও কুরআন তিলাওয়াত শুনতেন। একবার নবী কারিম (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদকে (রা.) বললেন, তুমি আমাকে একটু তিলাওয়াত করে শোনাও তো। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাব? আপনার উপরই তো কুরআন নাযিল হয়েছে!
প্রিয় নবি বললেন, আমার মনে চাচ্ছে, কারো থেকে একটু তিলাওয়াত শোনি! এ শুনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সুরা নিসা তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন। পড়তে পড়তে যখন এ আয়াত পর্যন্ত আসলেন—সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক) সেই দিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি আপনাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব। (সূরা নিসা : ৪১)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন-যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পড়ল তার জন্য রয়েছে একটি নেকী। আর একটি নেকী দশ নেকী সমতুল্য। নবীজী বলেন, আমি বলছি না যে, আলিফ লাম মীম- একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। (জামে তিরমিযী, হাদিস নং: ২৯১০)
কুরআন শরীফ আমাদের ঘরের বুক সেলফের এক কোণে মলাটবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকে। তা খুলে দেখার সময় আর আমাদের আর হয়ে ওঠে না। অথচ কুরআনের হক হচ্ছে তা পাঠ করা।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন — যে ব্যক্তি ইহকালীন জীবনে কুরআনে কারীমকে নিজের সঙ্গী বানাবে কিয়ামতের দিন কুরআন তাকে ভুলবে না। কিয়ামতের সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে কুরআন তাকে সঙ্গ দেবে এবং তার জন্য সুপারিশ করবে।
আবু উমামা বাহেলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন-তোমরা কুরআন পড়। কেননা কিয়ামতের দিন কুরআন তার ‘ছাহিবের’ জন্য সুপারিশ করবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৮০৪)
সুতরাং কিয়ামতের দিন সুপারিশ পাওয়ার জন্য বেশি পরিমাণে কুরআন পড়ার বিকল্প নেই।
হাদিস শরিফে আরও বিবৃত হয়েছে যে, যাদেরকে হাদিসের ভাষায় আল্লাহ তায়ালার পরিবার- পরিজন বলে অভিহিত করা হয়েছে—আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কতক লোক আল্লাহর পরিবার-পরিজন।
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! তারা কারা? তিনি বললেন কুরআন তিলাওয়াতকারীরাই আল্লাহর পরিবার-পরিজন এবং তার বিশেষ বান্দা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২১৫)
লেখক: শিক্ষক, প্রাবন্ধিক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।