জুমবাংলা ডেস্ক : বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম ছিলেন পুলিশের কনস্টেবল। তার চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট মো. সজিব হোসেন। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল কোন এক সন্তান পুলিশের বড় অফিসার হবে। এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে যে ১০০ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) তারমধ্যে সজিবের অবস্থান ৭৯তম।
বিসিএসে নিজ ও পরিবারের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পর সজিব তার ফেসবুকে পাঁচ বছর আগে তোলা একটি ছবি পোস্ট করেছেন। লিখেছেন, ‘সেদিন বলেছিলাম পুলিশ ক্যাডার না হলে আপলোড দিবো না। আল্লাহ আপলোড করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী।’
শুক্রবার সকালে সজিবের সাথে যখন মুঠোফোনে কথা হয় তখন তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার নিজ এলাকায়। বর্তমানে সেখানে সোনালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুঠোফোনে জানান, তার বিভাগের বড় ভাই ৩৪তম বিসিএসের একজন পুলিশ কর্মকর্তা ক্যাম্পাসে গাড়ি নিয়ে আসার পর ছবিটি তুলেছিলেন। আর চিন্তা করে রেখেছিলেন পুলিশ ক্যাডার হতে পারলেই ছবিটি ফেসবুকে প্রকাশ করবেন।
এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া মো. সজিব হোসেন ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থী, থাকতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে। ৪০তম বিসিএসেও তিনি নন ক্যাডার পেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার আশায় ওই সময় চাকরিতে যোগদান করেননি। এরপরের বিসিএসেই তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়।
বলেন, ‘আমার বাবা পুলিশ কনস্টেবেল ছিলেন। এক বড় ভাই পুলিশের এএসআই। তাই পরিবারের ইচ্ছা ছিল আমি পুলিশের বড় অফিসার হবো। বিশেষ করে আমার মায়ের ইচ্ছাটা অনেক বেশি ছিল। আমার বাবা যখন এসপি (পুলিশ সুপার) বাংলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন, তখন থেকেই চাইতেন তার কোন একজন সন্তান যেন এমন বড় অফিসার হতে পারে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, আল্লাহ আমার ও পরিবারের সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন।’
এক্ষেত্রে মা-বাবা, বড় দুই ভাইয়ের পাশাপাশি তার স্ত্রী অনেক সাহায্য করেছেন বলেও জানান জাবির সাবেক এই শিক্ষার্থী। বলেন, ‘আমি বেকার অবস্থায় বিয়ে করেছিলাম। এরপর আমার পরিবার ও স্ত্রীর যে সাপোর্ট পেয়েছি সেই ঋণ শোধ করা কষ্টকর।’
নিজের প্রস্তুতি সম্পর্কে সদ্য বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত সজিব বলেন, “আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না। ক্যাম্পাসে ভর্তির পর থেকেই টিউশনি করাতাম। চতুর্থ বর্ষ থেকে বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করি। পাশাপাশি আমি নিজেই বিসিএসের একটি গ্রুপ তৈরি করি যার নাম ‘মিশন বিসিএস রিটেন এক্সাম’। এখানে আমার বন্ধুরাসহ সিনিয়র-জুনিয়র ছিল। সবাই সবাইকে হেল্প করতে থাকে।”
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হ্যান্ডবল দলের অধিনায়ক ছিলেন সজিব। দলকে নেতৃত্ব দিয়ে করেছেন চ্যাম্পিয়ন, নিজে অর্জন করেছেন অসংখ্য পুরস্কার। পাশাপাশি বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা, টিউশনি, আবার করেছেন চাকরির পড়াশোনা। সবদিক সমানতালে রক্ষা করে খুব দ্রুতই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন তিনি। বলেন, ‘আমি দেখেছি, যারা খেলাধুলা করতো তারা চাকরির বাজারেও ভালো করতো। আমারও ইচ্ছা ছিল পুলিশে যাওয়ার। সেখানে খেলাধুলারও সুযোগ থাকবে। ফলে সবমিলে প্রস্তুতি নিতে থাকি।’
‘আমি হল থেকে ফজরের নামাজ পড়ে লাইব্রেরিতে সিট রেখে এরপর মাঠে খেলতে যেতাম। বিকেলে টিউশনি করিয়ে একদম রাতে হলে ফিরতাম। আমার রুটিন ছিল খুবই কঠিন। আমার মনে পড়ে না অযথা সময় নষ্ট করেছি। আমি এখনও ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমার দৈন্দন্দিন কাজে লেগে যাই’- যোগ করেন সজিব।
এখনও কুষ্টিয়া থেকে অনলাইনে নিজের সেই কোচিং চালু রেখেছেন তিনি। প্রতিদিন নিয়ম করে নেন ক্লাস-পরীক্ষা। বলেন, ‘চার বছর ধরে কোচিং চালাই, এখনও চালাচ্ছি। ফজরের নামাজ পড়ে ওই কোচিং এর খাতা মূল্যায়ন এবং প্রশ্ন তৈরি করি। আর অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যায় ক্লাস নিই। এখান থেকে আমি, আমার বন্ধুরাসহ অনেকেই বিভিন্ন ক্যাডার ও অন্য চাকরিতে যোগদান করেছি। গ্রুপ স্টাডি খুব ভালো ফল দেয়।’
ভবিষ্যতে মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ওষুধশাস্ত্রে পড়াশোনা করা সজিব হোসেন বলেন, আমরা কষ্ট করেই বড় হয়েছি। আমার বাবা সৎ কনস্টেবল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি মিথ্যার সাথে কোনদিন আপস করে নাই। দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার শিক্ষাটা পরিবার থেকেই পেয়েছি। আমিও পোশাকের সুনাম অক্ষুন্ন রেখেই কাজ করবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।