বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : এডউইন পাওয়েল হাবল। মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তালিকায় অন্যতম এক নাম। চটপটে, চতুর, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, সবল এবং সব্যসাচী খেলোয়াড়। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি ‘রোডস বৃত্তি’ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব গুণই ছিল যুবক হাবলের।
বৃত্তি লাভ করে তিনি অক্সফোর্ডের কুইন্স কলেজে তিন বছর সময় কাটিয়ে নিজের দেশে ফেরেন। তার আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই ১৯১২ সালে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। নিজ দেশে ফিরে ইন্ডিয়ানা হাই স্কুলে এক বছর স্প্যানিশ, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও বাস্কেটবল শিক্ষা দেন। বাবার বাধ্য ছেলে হিসেবে কিছুদিন আইনচর্চায়ও মন দিয়েছিলেন।
দুটি বিশ্বযুদ্ধেই এডউইন হাবল অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধের মাঝেও তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞানের খেয়াল থেমে ছিল না। কারণ তিনি ছিলেন মহাকাশপ্রেমী এক নিবেদিত মানব। জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল তাঁর প্রথম প্রেম।
তাইতো শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি সারতে আইনচর্চা ছেড়ে দেন। এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম—আমি দ্বিতীয় বা তৃতীয় যা-ই হই না কেন, জ্যোতির্বিজ্ঞান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
যদিও তিনি মোটেও দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন না। বরং তাঁর গবেষণা খুলে দিয়েছে মহাবিশ্বের জানালা। বিখ্যাত অধ্যাপক স্টিফেন হকিং তাঁর কাজে অভিভূত হয়ে মন্তব্য করেন— ‘২০ শতকের মহান বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব।
’ ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন ও প্যালোমারের টেলিস্কোপে কাজ করেছেন হাবল। হাবল প্রমাণ করেন মিলিয়ন মিলিয়ন ছায়াপথ আমাদের নিজস্ব ছায়াপথের চারপাশে বিচরণ করছে। বিজ্ঞানী হার্শেল এই বিষয়টি অনুমান করেছিলেন, হাবল তা প্রমাণ করেন। হাবল এসব ছায়াপথের আপাত আকার-আকৃতির পর্যালোচনা করেন। তিনি দেখান উপবৃত্তাকার, লেন্টিকুলার, কুণ্ডলিত ও অনিয়মিত—নানা রকম গ্যালাক্সি রয়েছে।
আকৃতির ওপর ভিত্তি করে হাবল গ্যালাক্সিগুলোর শ্রেণিকরণে মন দেন। শ্রেণিকরণের এই পদ্ধতির নাম ‘হাবল সিকুয়েন্স’ বা হাবল বিন্যাস। মহাজাগতিক লোহিত সরণ বা রেডশিফট (গ্যালাক্সি দূরে সরে যাচ্ছে বলে ছায়াপথ থেকে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বর্ণালিরেখার লাল প্রান্তের দিকে কিছুটা দীর্ঘ হয়)-এর সতর্ক-পরিমাপে এই সিদ্ধান্ত নিলেন, ছায়াপথগুলো একে অপর থেকে ক্রমাগত একটা ধ্রুবকের হারে দূরে সরে যাচ্ছে। যাকে আমরা হাবল ধ্রুবক বলছি। তিনি এই অবস্থাটিকে ‘দ্য রেডশিফট ডিসটেন্স ল অব গ্যালাক্সিস’ নাম দিয়েছিলেন। বর্তমানে এটি ‘হাবল’স ল’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে তিনি আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করেন— ছায়াপথ একে অপরের দূরে সরে যাচ্ছে মানেই মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। যা কিনা জর্জেস লেমেইটারের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে সমর্থন দেয়। এই গবেষণারে প্রচারিত হলে, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ১৯৩১ সালে হাবলের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। মূলত তাঁকে অভিনন্দন জানাতেই আইনস্টাইনের এই সফর। এডউইন হাবল জ্যোতির্বিজ্ঞানকে সৃষ্টিতত্ত্বে (কসমোলজি) পরিবর্তিত করেছেন। তাই তিনি ‘দূর নক্ষত্রের অগ্রদূত’ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন।
২০ নভেম্বর ১৮৮৯
ম্যানস্ফিল্ড, মিসৌরিতে জন্ম।
১৮৯৮
পরিবারসহ শিকাগোতে চলে যান।
১৯০৬-১৯১০
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত, বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন।
১৯১০-১৯১৩
রোডস বৃত্তির অধীনে অক্সফোর্ডের কুইন্স কলেজে আইন, সাহিত্য ও স্প্যানিশে পড়াশোনা।
১৯১৩
মার্কিন মুলুকে প্রত্যাবর্তন। আইনজীবী হিসেবে লুইসভিলে, কেনটাকিতে অল্প সময় কাটান।
১৯১৪-১৯১৭
‘ফোটোগ্রাফিক ইনভেস্টিগেশন্স অব ফেইন্ড নেবুলা’ শিরোনামে পিএইচডি গবেষণা করেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯১৭
পাসাডেনা, ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরির চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তালিকাভুক্ত সেনা হিসেবে যুক্ত হওয়ার জন্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।