মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পৃথিবীর কক্ষপথে একটি ‘কৃত্রিম নক্ষত্র’ স্থাপন করবে বলে জানিয়েছে। গবেষণার প্রয়োজনে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাসা। ২০২৯ সালে এ নক্ষত্র মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। নতুন এই কৃত্রিম নক্ষত্র আসলে একটি স্যাটেলাইট। আকার অনেকটা জুতার বাক্সের মতো। এটি থাকবে পৃথিবীর কক্ষপথে। ঘুরবেও প্রায় পৃথিবীর সমান গতিতে। ফলে আকাশে এই নক্ষত্র বা স্যাটেলাইটকে মনে হবে স্থির। কিন্তু তাই বলে পৃথিবী থেকে একে খালি চোখে দেখা যাবে না। কারণ মানুষ খালি চোখে যতটা দেখতে পারে, এই নক্ষত্র হবে তারচেয়ে ১০০ ভাগ অস্পষ্ট। অবশ্য টেলিস্কোপে চোখ রেখে এর দেখা মিলবে। এই মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে ল্যান্ডোল্ট নাসা স্পেস মিশন।…
Author: Yousuf Parvez
নবম গ্রহটি সূর্য থেকে প্রায় ৪০০ সৌরজাগতিক একক দূরে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বকে বলা হয় এক সৌরজাগতিক একক বা অ্যাস্ট্রোনমিকেল ইউনিট। অর্থাৎ নবম গ্রহটি হবে পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব থেকে প্রায় ৪০০ গুণ দূরে। এখানে জানিয়ে রাখি, সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুন রয়েছে সূর্য থেকে ১৯ সৌরজাগতিক একক দূরে। মানে সূর্য থেকে নেপচুনের যে দূরত্ব, নবম গ্রহটি হবে তারচেয়েও ১৩ গুণ দূরে। পরে অবশ্য আরেকটা গবেষণায় দেখা গেছে, প্ল্যানেট নাইনের গড় দূরত্ব হতে পারে ৫০০ বা ৫৫০ মহাজাগতিক একক। টানা ৭৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরে একটা নভোযান নির্দিষ্ট লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছাবে, এটা অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে। কারণ, পৃথিবী থেকে সবচেয়ে…
মানবজাতি নিশ্চিত হতে পারবে আসলেই সৌরজগতে নবম গ্রহ নামে কিছু আছে কি না? খুব সম্ভবত ২০২৫ সালের শেষদিকেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, ২০২৫ সালের শেষদিকে অত্যাধুনিক ভেরা সি রুবিন অবজারভেটরি রাতের আকাশ জরিপ করা শুরু করবে। আর সেই জরিপ থেকেই খুঁজে পাওয়া যেতে পারে আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্ল্যানেট নাইন। এখন সত্যিই যদি প্ল্যানেট নাইন বা নবম গ্রহ ধরা দেয়, তাহলে নিশ্চয়ই সেখানে নভোযান পাঠাতে চাইবে অনেক দেশ। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, তাদের পরিচালিত দুটি নভোযান ভয়েজার ১ ও ২ এর আগে এর চেয়েও বেশি দূরত্ব পাড়ি দিয়ে সৌরজগৎ ছাড়িয়ে গেছে। তবে অন্য কোনো…
অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, কয়েক বছরের মধ্যে সৌরজগতের নবম গ্রহ আবিষ্কৃত হতে পারে। তাই যদি হয়, তাহলে অধরা সেই গ্রহে পৃথিবী থেকে নভোযান পাঠাতে কত বছর সময় লাগবে? সৌরজগতে গ্রহ কয়টি? আগ্রহীরা হয়তো মাথা চুলকে বলবেন, ৮টিই তো জানি। তাহলে নবম গ্রহের কথা আসছে কোত্থেকে? আর সেই গ্রহ না থাকলে সেখানে যাওয়ার কথাই-বা আসছে কেন? হ্যাঁ, এ কথা সত্যি যে এখনো নবম গ্রহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাহলে কেন নবম গ্রহ নিয়ে আলোচনা করছি? কারণ, কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, সৌরজগতের শেষ প্রান্তে লুকিয়ে আছে অধরা সেই নবম গ্রহ। আর সেই গ্রহটি খুঁজে পাওয়া থেকে আমরা মাত্র কয়েক বছর পিছিয়ে আছি। অবশ্য…
আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা কেবল একটি চাঁদ দেখতে পাই। অথচ সৌরজগতে চাঁদের সংখ্যা শুনলে চমকে যেতে পারেন আপনি। আমরা সেগুলোর কয়টির কথা জানি? ভবিষ্যতে কী আরও উপগ্রহ বা চাঁদ খুঁজে পেতে পারেন বিজ্ঞানীরা? আকাশে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কিছু উজ্জ্বল বস্তু, জ্বলজ্বল করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হলো চাঁদ। আপনার কাছে যদি কোনো টেলিস্কোপ না থাকে, তাহলে এটিই একমাত্র উপগ্রহ যেটা আপনি খালি চোখে দেখতে পাবেন। কিন্তু সৌরজগতে রয়েছে আরও অনেক চাঁদ, যেগুলো খালি চোখে পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। ঠিক কয়টি চাঁদ বা উপগ্রহ রয়েছে আমাদের সৌরজগতে? এককথায় এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া একটু কঠিন। কারণ, সৌরজগতে কয়েক ধরনের উপগ্রহ…
ছায়াপথ অতিক্রম করে মহাশূন্যে চলে যাওয়া বেশ সম্ভব। তবে সেখানে কিছু কিন্তু–যদি আছে। প্রথমে একটা ধারণা নিই। কত বড় আমাদের গ্যালাক্সি, যাকে বলি ছায়াপথ বা আকাশগঙ্গা? এটা এত বড় যে এর মধ্যে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি নক্ষত্র আছে। নক্ষত্র মানে এক একটা সূর্য। কোনো মহাকাশযানে এই ছায়াপথ পার হয়ে মহাবিশ্বের অন্য কোনো গ্যালাক্সিতে যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ লাখ আলোকবর্ষ। কোনো মানুষ যদি রওনা দেয়, তাহলে তার আয়ু তো শেষ হবেই, তার নাতি–পুতির কয়েক হাজার স্তর পর্যন্ত থাকবে কি না সন্দেহ। তারপর আছে গতির সমস্যা। ছায়াপথ পার হতে অতিক্রমণ–বেগ (এসকেপ ভেলোসিটি) লাগবে সেকেন্ডে ৫৫০ কিলোমিটার। এর মাত্র…
তাপ একটি গ্যাসের মাঝে গতিশক্তির একধরনের প্রকাশ হলেও তা একটি ঢিলের গতিশক্তি থেকে ভিন্ন। কারণ, গ্যাসের তাপমাত্রা থাকলেও একটি ঢিলের কোনো তাপমাত্রা নিয়ে আমরা চিন্তা করি না বা ধর্তব্যের ভেতর আনি না। সংখ্যার বিচারে ঢিলের মাঝে থাকা অণুর সংখ্যা গ্যাসের অণুর সংখ্যার কাছাকাছি। কিন্তু গতিশীল ঢিলের প্রতিটি কণার বেগ প্রায় একই দিকে, যেখানে গ্যাসের অণুগুলো বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন বেগে বিক্ষিপ্ত। তাই আমরা বলি গ্যাসের কণাগুলো ঢিলটির কণাগুলোর তুলনায় বেশি বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। এই বিশৃঙ্খলতাকে মাপার জন্য এনট্রপি নামের রাশিটি ব্যবহার করা হয়। এটার গাণিতিক প্রকাশ লেখা সহজ কিন্তু তার ব্যাখ্যা দেওয়া তার তুলনায় জটিল। তবে এটা বোঝা যায় যে আমাদের…
আলো কণা হলে আমরা যদি একটি বদ্ধ পাত্রে আলো রাখি, তখন তো আলোর কণাগুলো ওই জায়গায় আটকে থাকার কথা। ফলে ওই জায়গা আলোকিত দেখার কথা। কিন্তু দেখি না কেন? অথবা সূর্যের আলোর কণাগুলো পৃথিবীতে থেকে যায় তখনো, তো পৃথিবী আলোকিত হওয়ার কথা। কিন্তু আলোকিত হয় না কেন? আলোর কণা (ফোটন) ও ইলেকট্রন কণার মধ্যে একটা বিশেষ পার্থক্য আছে। মোট আলোর কণার সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। এ জন্য তোমার প্রশ্নে লেখা ‘আলোর কণাগুলো ওই জায়গায় আটকে থাকে’—এটা ঠিক নয়। অ্যাটম বা পরমাণু থেকে যে আলোটা বের হয়, সেটা তাহলে কোথা থেকে আসে? আলোকে মার্বেলের মতো…
পৃথিবীর ঠিক কাছের নীল আকাশ যেন জলাভূমির ওপরে ভোরের কুয়াশার মতো। আর নীল আকাশটা যেমন ভাবা গিয়েছিল মোটেই তেমন পুরুও নয়—মাত্র ৩০ কিলোমিটার। তাকে বিঁধানো আদৌ কঠিন নয়। তবে কি না কোনো ফুটোও থাকছে না। তা ধোঁয়া বা কুয়াশার মধ্যে ফুটো থাকেই বা কী করে? তাহলে দাঁড়াচ্ছে এই যে আকাশ আছে দুটো—দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। একটা নীল, যেটা আমাদের কাছাকাছি, আরেকটা কালো, ওই আকাশের পেছনে, ‘দ্বিতীয় সারিতে’। অথচ আমরা কিনা ভেবেছিলাম একই ‘ছাদ’ দিনে আর রাতে রং বদলায়। দেখা যাচ্ছে কালো ‘ছাদটা’ দিনের বেলায়ও কালো। সেটা দিন-রাত সব সময়ই নিজের জায়গায় আছে। তারাগুলোও তার গায়ে সবসময় জ্বলে। কেবল দিনের বেলায়…
মহাকাশে প্রথম যান ইউরি গ্যাগারিন। ১৯৬১ সালে। তারপর থেকে বেশ কিছু সোভিয়েত ও মার্কিন নভোচারী মহাকাশে গেছেন। কিন্তু এ রকম বিপদসঙ্কুল যাত্রায় মানুষকে পাঠানোর আগে মহাকাশ সম্পর্কে অন্তত কিছু জানা দরকার ছিল। রাতের কালো আকাশ কী, চন্দ্র-সূর্য-তারা কী—মানুষ পৃথিবীতে বসে এসব কী করে জানল? কেননা আকাশের দিকে যতক্ষণ খুশি চেয়ে দেখ না কেন, এমনকি যদি সারা রাত ধরেও চেয়ে দেখ, তবু আকাশকে তোমার মনে হবে যেন একটা ছাউনি। সূর্য আর চাঁদ, জ্বলজ্বলে চ্যাপ্টা তাওয়া আর তারাগুলো নিছক কতকগুলো উজ্জ্বল বিন্দু। কীভাবে ওদের আরও ভালো করে নিরীক্ষণ করা যায়? আসল কথা হলো, সূর্য আমাদের অনেক কাছে। তাই তাকে বড় মনে হয়।…
দক্ষিণ মেরুর বরফের মাঝে এক মাইলেরও বেশি গভীর গর্ত খুঁড়ে বিভিন্ন যন্ত্র বসাতে হবে। সাধারণ টেলিস্কোপের মতো এখানে কোনো লেন্স বা আয়না নেই। বর্তমানে এতে বাস্কেটবল আকারের গোল কাচের আবরণে মোড়া ছিয়াশি কিলোমিটার লম্বা লাইট ডিটেক্টরের স্ট্রিং রয়েছে (পরবর্তীতে এটি আরও বাড়ানো হতে পারে)। এসব কাচ আবার যেনতেন কাচ না, বরফের চাপ নিতে পারবে, এমন। সায়েন্টিফিক আমেরিকান একবার আইসকিউব অবজারভেটরির কথা বলতে গিয়ে লিখেছিল, আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার সাত আশ্চর্যের হিসেব করা হলে এটি হবে এদের মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত জিনিস। এই মানমন্দিরের সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, অন্যান্য টেলিস্কোপের মতো এটি ওপরের দিকে তাক করা নেই, বরং এর চোখ বরফের মধ্য দিয়ে নিচে…
বরফের বুকে বসানো হয়েছে টেলিস্কোপ। ভূতুড়ে কণা নিউট্রিনোর খোঁজ করে চলেছে। বিজ্ঞানের সপ্তম আশ্চার্যের একটি বলে একে আখ্যা দিয়েছে সায়েন্টিফিক আমেরিকান। নিউট্রিনো নামে একধরনের কণা আছে, যারা সাধারণ কণার সঙ্গে খুব সামান্য মিথষ্ক্রিয়া করে। এদের কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক চার্জ নেই, ভরও প্রায় নেই বললেই চলে। ইংরেজিতে এগুলোকে বলে ঘোস্ট পার্টিকেল, বাংলায় বলা যায় প্রেতাত্মা-কণা! একটু ওভারড্রামাটিক হয়ে গেল বোধ হয়। তবে প্রচলিতভাবেও এদের ‘ভুতুড়ে কণা’ বলা হয়। এমনটা বলার পেছনে কারণও আছে। এরা কোনোভাবেই ধরা দিতে চায় না। যে ধরা দিতে চায় না, তাকে নিয়ে এত চিন্তা কেন? বলছি। সে জন্য শুরুটা করতে হবে সূর্য থেকে। সূর্যের কেন্দ্রে প্রতি মুহূর্তে ঘটে…
টলেমি সঠিক ধরেছিলেন যে পৃথিবী একটি গোলক, এর চারপাশে মহাশূন্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে গেল, প্রাচীন গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাজের কথা লোকে ভুলে গেল, হারিয়ে গেল তাঁদের লেখা; আবার লোকে ভাবতে শুরু করল যে পৃথিবী চ্যাপ্টা আর ধর্মভাবাপন্ন ভূগোলবিদরা মৃত সন্তদের স্থান হিসেবে স্বর্গ বসাল মানচিত্রে। স্বর্গ জায়গাটা তারা নির্দিষ্ট করল এশিয়া মাইনরে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যে। পনেরো শতকের শেষার্ধে সমুদ্রপথে দীর্ঘ যাত্রা শুরু হলো লোকের। প্রথম সব সমুদ্রযাত্রীদের শুনতে হলো যে তাদের এ সব পরিকল্পনা পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। জোর দিয়ে তাদের বোঝানো হলো যে পৃথিবী চ্যাপ্টা, ওসেনাস নদী পৃথিবীর প্রান্তদেশ ঘিরে বিরাট একটা জলপ্রপাতে পড়েছে অতল গহ্বরে। পৃথিবীর…
স্কুলের ছেলেমেয়ে সবার জানা পৃথিবী গোল, চেহারাটা বলের মতো, আর মহাশূন্যে তার সফরের পথটা কেমন। অনেক দিন আগে লোকে ভাবত, পৃথিবী আকারে চ্যাপ্টা চাকতির মতো বা একটু উত্তল (প্রাচীন যোদ্ধাদের বর্ম গোছের), কিছু একটার ওপর ভর করে আছে। কীসের ওপরে ভর করে আছে, তা নিয়ে নানা মুনির ছিল নানা মত। প্রাচীন ভারতের লোকেরা ভাবত পৃথিবী একটা গোলার্ধ। পৃথিবী টেবিলের ওপরের মতো চ্যাপ্টা, অনেক দিন যে লোকে এটা ভাবত, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অবাক হওয়ার কথা হলো, মানুষ নিজের বুদ্ধির সাহায্যে আমাদের গ্রহের সত্যিকার আকার বের করতে পারে। অবশ্য এটা করতে হাজার হাজার বছর কেটে যায়, লোকে যখন সমুদ্রে এবং…
সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের করা গবেষণায় এমন কিছু বেরিয়ে এসেছে, যা একটু গোলমেলে। একে সঠিক হিসাবে ধরে নিলে উন্মুক্ত মহাবিশ্ব সম্পর্কে এখানে যে ধারণা দেওয়া হয়েছে তাতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। পদার্থের অন্যতম গাঠনিক উপাদান প্রোটন। এরা পরমাণুর মধ্যে একত্র অবস্থায় থাকে। পদার্থবিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, অতি দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রোটন স্থায়ী নয়, ভারসাম্যহীন। পদার্থবিজ্ঞানীদের এই অনুমান সত্য হলে এটা মেনে নিতে হবে যে একসময় না একসময় প্রোটনগুলো পরস্পর থেকে বিশ্লিষ্ট হয়ে যাবে। সব প্রোটন যদি আলাদা হয়ে যায়, তাহলে তা মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতিতে প্রভাব রাখবে। প্রোটনগুলো একত্রে না থেকে আলাদা হওয়ার মানে হচ্ছে অণু-পরমাণুর রূপ পাল্টে যাওয়া। তেজস্ক্রিয় ভারী মৌলে প্রোটনগুলো দুই দলে…
মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করার সময় মানবজাতি, মানব সভ্যতা ও প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা চলে আসে। উন্মুক্ত মহাবিশ্বে অতি বৃহৎ সময়ের প্রেক্ষাপটে মানুষের ভবিষ্যৎ কী? সুদূর ভবিষ্যতে প্রাণ ও সভ্যতা কীভাবে নিজেদের টিকিয়ে রাখবে? টিকে থাকার জন্য জীবন্ত প্রাণেরা কোন প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেবে, তা বলা মোটামুটি অসম্ভব। তবে প্রাণ ও সভ্যতার টিকে থাকা নির্ভর করে শক্তির উৎসের ওপর। যেমন পৃথিবীর ক্ষেত্রে শক্তির উৎস হচ্ছে সূর্য। পৃথিবীর সব প্রাণ ও সভ্যতা পুরোপুরি নির্ভর করে আছে সূর্যের ওপর। সূর্য না থাকলে কোনো প্রাণও টিকে থাকতে পারত না, কোনো সভ্যতারও জন্ম হতো না। আগামী ১০১০০ বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণ শক্তির…
মৃত পর্যায়ে চলে গেলে নক্ষত্রের মধ্যে সামান্যতম কোনো পরিবর্তন ঘটতেও ১০ বিলিয়ন বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগে। আসলে সময়ের ব্যবধান যখন কয়েক বিলিয়ন বছর হয়, তখন চূড়ান্ত অবস্থার মধ্যেও কমবেশি পরিবর্তন সম্পন্ন হয়। ব্ল্যাকহোল সাধারণত সবকিছু নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে ধীরে ধীরে ভারী হয়। কিন্তু বিলিয়ন বিলিয়ন বছর সময়ের ব্যবধানে বিবেচনা করলে দেখা যাবে মৃত ব্ল্যাকহোলও বিকিরণ করতে করতে ধীরে ধীরে ভর হারাতে থাকে। এই ধীর প্রক্রিয়ায় বিকিরণের মাধ্যমে আস্ত ব্ল্যাকহোলও নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। হোক সেটা অসীমতুল্য সময়, কিন্তু তারপরও এটি নিঃশেষ হবে। সূর্যের ভরের সমান কোনো ব্ল্যাকহোল এই প্রক্রিয়ায় ১০৬৫ বছরের ভেতর নিঃশেষ হয়ে যাবে (সূর্যের সমান ভরের নক্ষত্র…
মহাবিশ্ব যদি উন্মুক্ত হয়, তাহলে অতি দীর্ঘ সময় পর গ্যালাক্সিগুলোর কী পরিণতি হবে? একটি সাধারণ (Typical) গ্যালাক্সির কথা বিবেচনা করি। এ ধরনের একটি গ্যালাক্সি মূলত অনেকগুলো নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি নক্ষত্রই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। সময় শেষ হলে, আয়ু ফুরিয়ে গেলে সেসব নক্ষত্র মারাও যায়। এটাকে বলা যায় ‘নক্ষত্রের চূড়ান্ত পর্যায়’। এই পর্যায়ে পৌঁছার পর নক্ষত্রের মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। যা হয়, তা খুবই সামান্য। এই সামান্যটুকু হতেও অতি বিশাল সময়ের প্রয়োজন হয়। কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন বছর লাগে। তিন উপায়ে নক্ষত্রের মৃত্যু হতে পারে। শ্বেত বামন, নিউট্রন নক্ষত্র ও ব্ল্যাকহোল। এই তিন পর্যায়ে নক্ষত্রের উপাদানগুলো অত্যন্ত ঘনীভূত…
গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই বলা যায় মহাবিশ্ব স্থির অবস্থায় নেই। গতিশীল বা চলমান অবস্থায় আছে। গ্যালাক্সিগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, এর মানে হলো মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। গ্যালাক্সিগুলো যেহেতু একটি নির্দিষ্ট হারে একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তাই সেখান থেকে অনুমান করা হয়, অনেক অনেক আগের কোনো একসময় এসব গ্যালাক্সি নিশ্চয়ই একত্র অবস্থায় ছিল। ওই সময়ে কল্পনাতীত বিশাল এক বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়। ওই বিস্ফোরণে একত্রে পুঞ্জিভূত থাকা মহাবিশ্বের সব পদার্থ প্রচণ্ড বেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে এসব পদার্থ আলাদা আলাদাভাবে ঘনীভূত হয়। গ্যালাক্সি হিসেবে বর্তমানে আমরা যাদের দেখতে পাই, তারা সবাই আসলে সেসব ঘনীভূত পদার্থের…
আমরা জানি, অক্সিজেন ছাড়া আগুন জ্বলে না। তাহলে সূর্যে আগুন জ্বলে কীভাবে? সেখানে তো কোনো অক্সিজেন নেই, ব্যাপারটা কী? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে বলা দরকার যে আমরা যেভাবে আগুন জ্বলতে দেখি, সূর্য কিন্তু সেভাবে জ্বলে না। কাঠ বা কয়লা পুড়তে অক্সিজেন লাগে, এটা ঠিক। কিন্তু সূর্য অথবা কোনো নক্ষত্র তাদের কেন্দ্র থেকে যে শক্তি বিকিরণ করে, এবং যাকে আমরা প্রজ্বলন হিসেবে দেখি, সেটা কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতির প্রজ্বলন নয়। সূর্যের এই প্রজ্বলন ঘটে হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে রূপান্তরের মাধ্যমে। সূর্যের কেন্দ্রে অক্সিজেন নেই সত্য, কিন্তু হাইড্রোজেন আছে। সেই গ্যাস ব্যবহার করেই সূর্য তাপ বিকিরণ করে। অবশ্য চলতি ভাষায় একেই আমরা বলি, সূর্য হাইড্রোজেন…
গিরগিটির ত্বকের কোষের ভেতর বিভিন্ন রঙের কণা থাকে। চারপাশের পরিবেশের রং অনুসারে নির্দিষ্ট রঙের কণা কোষের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং তখন গিরগিটির রংটিও সেই কণার রং ধারণ করে। ফলে শিকার বা শিকারির পক্ষে তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। ফলে টিকে থাকার এটা বাড়তি সুবিধা গিরগিটির জন্য। এই বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। ওপরের ব্যাখ্যাটা চমত্কার। কিন্তু বাস্তব তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে এর অধিকাংশই মেলে না! তবে কিছুটা মেলে। ১৯০৩ সালে ফ্রাংক কার্লটন নামে হার্ভার্ডের একজন প্রাণিবিজ্ঞানী একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, গিরগিটিসহ রং পরিবর্তনকারী বিভিন্ন প্রাণীর ত্বকে একধরনের রঞ্জক কোষ পেয়েছেন। বলে রাখা ভালো, গিরগিটি বলতে Chamaeleonidae গোত্রভুক্ত যেকোনো প্রজাতিকে…
মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি কী এটা নিয়ে তাঁর আগে অন্য কোনো বিজ্ঞানী সেভাবে ভাবেননি। এ বিষয়ে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে জামাল নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন বিশ্ব বিখ্যাত এক বই- দ্য আল্টিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স। সেই বইয়ের একটা অংশ অনুবাদ করা হলো পাঠকদের জন্য। অন্তিম পরিণতিতে এই মহাবিশ্বের ভাগ্যে কী ঘটবে? বুদ্ধিমত্তা বিকাশের পর থেকেই এই প্রশ্ন আন্দোলিত করেছে এক মানুষ থেকে আরেক মানুষের মন। এই প্রশ্ন থেকে মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে আরও কিছু প্রশ্ন। এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কী? কিংবা এই মানবজাতির ভবিষ্যৎ কী? বর্তমানে প্রশ্নগুলো খুব সহজ মনে হলেও অনেক কাল পর্যন্ত এদের কোনো বিজ্ঞানসম্মত ও গ্রহণযোগ্য উত্তর ছিল না। এ…
বিজ্ঞানী জোসেলিন বেল বেড়ে ওঠেন আরমাঘ শহরের লুরগানে এবং সেখানকারই একটি কলেজে ভর্তি হন। তবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান পড়তে দেওয়া হয়নি তাঁকে। মেয়েদের জন্য বিজ্ঞানের পরিবর্তে সেলাই ও রান্নার বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে কলেজ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন তিনি। পরে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভর্তি হন। সেখানে একজন পদার্থবিদ্যার শিক্ষকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন তিনি। পরে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পিএইচডি করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ১৯৬৯ সালে। পরে যুক্ত হন কেমব্রিজের সম্প্রতি আবিষ্কৃত কোয়েসার পর্যবেক্ষণ প্রকল্পের সঙ্গে। কর্মজীবনে তিনি সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, এডিনবার্গ রাজকীয় মানমন্দির এবং হাওয়াই মাউনাকে (Mauna Kea) জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপের প্রজেক্ট…
জোসেলিন বেল জন্মগ্রহণ করেন নর্দান আয়ারল্যান্ডে, ১৯৪৩ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্থপতি, যিনি আয়ারল্যান্ডের আরমাঘ প্লানেটরিয়ামের নকশা করেছিলেন। প্লানেটরিয়াম পরিদর্শনের সময় বেলকে জ্যোতির্বিজ্ঞান পেশা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল কর্তৃপক্ষ। ছোটবেলায় বাবার সংগ্রহে থাকা জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। বেল বেড়ে ওঠেন আরমাঘ শহরের লুরগানে এবং সেখানকারই একটি কলেজে ভর্তি হন। তবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান পড়তে দেওয়া হয়নি তাঁকে। মেয়েদের জন্য বিজ্ঞানের পরিবর্তে সেলাই ও রান্নার বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে কলেজ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন তিনি। পরে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভর্তি হন। সেখানে একজন পদার্থবিদ্যার শিক্ষকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন তিনি। পরে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ…