মাথায় মুকুট পরার চেয়ে খোলাটাই নাকি বেশি কষ্টের। ইতিহাস আর ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি। ক্ষমতা ছাড়তে কষ্ট হলেও সিঁড়ি দিয়ে নামার চেয়ে ওপরে উঠতেই বেশি কষ্ট হয়। কিন্তু কেন? এর পেছনে রয়েছে মাধ্যাকর্ষণ বল। পৃথিবী সবসময় তার কেন্দ্রের দিকে আমাদের টানছে। একেই বলে মাধ্যাকর্ষণ বল। এ বলের কারণে আমরা ঘূর্ণমান পৃথিবীর বাইরে ছিটকে পড়ছি না। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় এ মাধ্যাকর্ষণ বা মহাকর্ষ বলের বিপরীতে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। সে কারণে পায়ের পেশীগুলোকে কাজ করতে হয় তুলনামূলক বেশি। পায়ের পেশীতে অনেক বেশি রক্ত সরবরাহ করতে হয় হৃৎপিণ্ডকে। একই কারণে ফুসফুসকেও বেশি বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়, আর…
Author: Yousuf Parvez
১৯৯৩ সালে বিজ্ঞানী লিও লেডারম্যান প্রায় সাড়ে চারশ পৃষ্ঠার এক বই লিখেছিলেন। হিগস-বোসন কণা অনুসন্ধান কেন জরুরি, সেটা বোঝাতে বইটি লেখেন তিনি। তবে বইটির নামকরণ নিয়ে বেশ ভোগান্তিতে পড়েন। অনেক ভেবেচিন্তে কোনো নামই মনপূত না হওয়ায় অবশেষে বিরক্তি নিয়ে বইটির নাম রাখেন দ্য গড-ড্যাম পার্টিকেল। কিন্তু ওই নামও পছন্দ হলো না প্রকাশকের। নামটাকে আরও ছেঁটে ‘গড পার্টিকেল’ রাখার প্রস্তাব দিলেন তিনি। বইয়ের কাটতি বাড়াতে লেডারম্যান ওই নামেই রাজি হলেন। বইটির প্রভাবে বিজ্ঞানী মহলসহ সব জায়গায় হিগস-বোসন কণার নাম হয়ে গেল গড পার্টিকেল। বাংলায়—ঈশ্বর কণা। এ তো গেল নামকরণের গল্প। কিন্তু ঈশ্বর কণা আসলে কী? এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, তা অনেক…
গরম চা কীভাবে ঠান্ডা হলো? শুরুতে চায়ের ভেতর এমন একটা কিছু ছিল, যা এখন নেই, একে আমরা তাপ বলি। তাপ একধরনের শক্তি, অন্যভাবে বলা যায় শক্তির একটি রূপ হলো তাপ। আর ঠান্ডা বা গরমের যে অনুভূতি, তাকে বলি তাপমাত্রা। একটি বস্তু শূন্য কেলভিনের (প্রায় মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ওপর থাকলেই তাপ বিকিরণ করতে থাকে। এই বিকিরণের মাত্রা নির্ভর করে বস্তুর তাপমাত্রার ওপর, বস্তুর তাপের ওপর নয়। বিকিরণ করার মানে হলো, তাপ হারানো। কাপের চা তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে গেছে। বিকিরণ ছাড়াও একটি বস্তু আরও দুটি উপায়ে তাপ হারাতে পারে, যেগুলোকে পরিচলন এবং পরিবহন বলে। পৃথিবী কেন গরম, এর ব্যাখ্যার…
কোয়ান্টাম টানেলিং ঘটতে কতটা সময় লাগে, এটা নিয়ে এত দিন বিজ্ঞানীরা ঠিক নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু তিন বছরের দীর্ঘ এক গবেষণার পর ২০১৯ সালে এর জবাব খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল। হাইড্রোজেন থেকে নির্গত একটি ইলেক্ট্রনের টানেলিং করে দেখেছেন তাঁরা। বলতে গেলে ঘটনাটা প্রায় চোখের পলকেই ঘটে যায়। এ জন্য তাঁরা ব্যবহার করেছেন অ্যাটোক্লক নামে একধরনের অপটিক্যাল গণকযন্ত্র। যন্ত্রটি দিয়ে অতিক্ষুদ্র তরঙ্গের আয়নিত আলো ব্যবহার করা হয়। এই আলো ইলেকট্রনের নড়াচড়া অ্যাটোসেকেন্ডে মাপতে পারে। ১ অ্যাটোসেকেন্ড খুবই ক্ষুদ্র সময়। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এক সেকেন্ডের বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ হচ্ছে ১ অ্যাটোসেকেন্ড। বিজ্ঞানীরা করলেন কী, অ্যাটোক্লকের…
প্রাকৃতিক চারটি বল হলো বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল, শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল এবং মহাকর্ষ। প্রথম তিনটিকে ব্যাখ্যা করা হয় কণাপদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল দিয়ে। এ ত্রয়ী বলকে বলা হয় নন-গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স বা অমহাকর্ষীয় বল। আর শেষেরটি—মহাকর্ষ বা গ্র্যাভিটিকে ব্যাখ্যা করে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। আরও সঠিকভাবে বললে, সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। বিদ্যুৎ-চুম্বকীয়, শক্তিশালী ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বল ব্যাখ্যা করে পরমাণুর মতো অতিক্ষুদ্র জগৎ। অন্যদিকে মহাবিশ্বের বড় পরিসরের কাঠামো (যেমন গ্রহ, নক্ষত্র, কৃষ্ণগহ্বর ইত্যাদি) ব্যাখ্যা করে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। স্ট্যান্ডার্ড মডেলে তিনটি বলের ব্যাখ্যায় বলা হয়, এসব বলে বলবাহী অতিপারমাণবিক কণা বিনিময় হয়। বস্তুকণাদের একত্রিত রাখার পেছনে কাজ করে প্রকৃতির তিনটি মৌলিক বল। এরকম ব্যাখ্যায় স্ট্যান্ডার্ড…
২২ বছর বয়সে তিনি আবিষ্কার করেছেন একটি উপপারমাণবিক কণা বা সাবঅ্যাটমিক পার্টিকেল (প্রচলিত ‘ভুল’ বাংলায় যাকে বলে ‘অতিপারমাণবিক’ কণা)। তারপর পরিবারের জন্য ছেড়ে গেছেন গবেষণার জগৎ। তিনি ব্রিটিশ পদার্থবিদ রোজমেরি ফাউলার। প্রায় ৭৫ বছর পর সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছেন এই বিজ্ঞানী। কণাপদার্থবিজ্ঞানের আজব চিড়িয়াখানাটির নাম স্ট্যান্ডার্ড মডেল। এই মডেলে মৌলিক কণাগুলোকে সহজেই খুঁজে পাবেন আপনি। এতে আছে ছয় ধরনের কোয়ার্ক—আপ, ডাউন, টপ, বটম, চার্ম ও স্ট্রেঞ্জ; এবং ছয় ধরনের লেপটন—ইলেকট্রন, মিউওন, টাউ, ইলেকট্রন নিউট্রিনো, মিউওন নিউট্রিনো ও টাউ নিউট্রিনো। এসবই বস্তুকণা। পাশাপাশি বলের কণা হিসেবে পাবেন গ্লুয়ন, ফোটন, জেড বোসন, ডব্লিউ বোসন এবং সব কণার ভরের জন্য দায়ী হিগস বোসন।…
২০১২ সালে জেনেভার সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কলয়ডার (এলএইচসি) যন্ত্রে পাওয়া যায় হিগস-বোসন কণা। এ ঘটনা চমকে দেয় পুরো পৃথিবীকে। মহাবিশ্বের সব কণা ও তাদের আচরণ ব্যাখ্যার জন্য পদার্থবিজ্ঞানীরা যে স্ট্যান্ডার্ড মডেল ব্যবহার করে আসছেন, হিগস কণা ছিল এই স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ব্যাখ্যার সর্বশেষ অধরা কণা। তবে এখনো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সময় আসেনি। গবেষণায় পাওয়া নতুন কিছু তথ্য ধারণা দিচ্ছে, এই স্ট্যান্ডার্ড মডেলের বাইরে আরও কিছু কণা থাকতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানে এটা নতুন চ্যালেঞ্জ। হিগস কণা আবিষ্কার হয় এলএইচসির অ্যাটলাস এবং সিএমএস—এই দুই প্রজেক্ট থেকে। নতুন কণা আবিষ্কারের জন্য কাজ করছে এলএইচবি। কলয়ডারে বিউটি হ্যাড্রন কণার ভাঙন কীভাবে হয়, তার পর্যবেক্ষণ আর বিশ্লেষণ…
বিংশ শতাব্দীর তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার কোয়ান্টাম মেকানিকস। শতাব্দী প্রাচীন ক্ল্যাসিক্যাল মেকানিকস পরমাণু ও পরমাণুর চেয়ে ছোট অতিপারমাণবিক কণার গতিপ্রকৃতি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। পরমাণুর গঠন ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে নতুন নতুন ধারণা তৈরি হবার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য একটা নতুন গাণিতিক প্রক্রিয়ার যে ভীষণ দরকার, তা বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ম্যাক্স প্ল্যাংক, ম্যাক্স বর্ন, নীলস বোরসহ যে কজন বিজ্ঞানীর হাতে কোয়ান্টাম মেকানিকসের জন্ম ও বেড়ে ওঠা, পল ডিরাক তাঁদের অন্যতম। কোয়ান্টাম মেকানিকসের দুটো প্রধান সমীকরণের একটি হলো শ্রোডিঙ্গার সমীকরণ এবং অন্যটি ডিরাক সমীকরণ। কোয়ান্টাম মেকানিকসে আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটির প্রয়োগ করে…
কৃষ্ণগহ্বরকে প্রায়ই নেতিবাচক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কৃষ্ণগহ্বরের কী কোনো উপকার নেই? কৃষ্ণগহ্বর সবকিছু গ্রাস করে নেয়, এমন কি আলোও ওখান থেকে বের হতে পারে না, এরকম ধারণা থেকে কৃষ্ণগহ্বরকে নেতিবাচক বলে বিবেচনা করা হয়। আসলে কৃষ্ণগহ্বর অতটা নেতিবাচক নয়। স্টিফেন হকিং প্রমাণ করে দিয়েছেন যে কৃষ্ণগহ্বর থেকেও বিকিরণ নির্গত হয়- যাকে আমরা হকিং রেডিয়েশান বলে জানি। মহাবিশ্বকে ভালোভাবে জানার জন্য এবং মহাবিশ্বের অনেক মৌলিক নীতি পরীক্ষা করে দেখার জন্য, বিশেষ করে আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতার সার্বিক তত্ত্ব, কোয়ান্টাম মেকানিকস, এবং মহাবিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ব বা কসমোলজির তত্ত্ব পর্যবেক্ষণের জন্য কৃষ্ণগহ্বর খুবই উপকারি ভূমিকা রাখছে।
ফটোসিনথিসিস শব্দটার মধ্যেই তোমার প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। ফটো মানে আলো। আলোর সাহায্যে গাছের খাদ্য তৈরি করাই হলো সালোকসংশ্লেষণ। আলো ছাড়া সালোকসংশ্লেষণ হতে পারে না। সূর্যের আলোতে সালোকসংশ্লেষণ সবচেয়ে ভালোভাবে ঘটে। এখন প্রশ্ন হলো সেই আলো কি শুধু সূর্যেরই হতে হবে? না, ঘরের বাতির আলোতেও চলে। তবে সেটা হতে হবে সালোকসংশ্লেষণের জন্য উপযুক্ত। গাছের সবুজ পাতায় থাকে ক্লোরোফিল। মাটি থেকে পানি, বাতাস থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড ও সূর্যের আলো থেকে শক্তি নিয়ে গাছ তার খাদ্য তৈরি করে। সূর্যের আলোয় প্রচুর হলুদ রং থাকে। সেখানে সাত রঙের চমৎকার সমন্বয় ঘটে। এতে গাছের বৃদ্ধি ঘটে এবং গাছ ফুলে–ফলে শোভিত হয়। কৃত্রিম আলোয় যদি লাল…
১৯৬০-এর দশকের প্রথম দিকে মারে গেল-মান তাঁর অষ্টাঙ্গিক পন্থা অবলম্বন করে প্রোটন ও নিউট্রনের অভ্যন্তরে কোয়ার্ক নামের ভগ্নাংশ তড়িৎ আধানের মৌলিক কণার ভাবীকথন করেছিলেন। তাঁর পদ্ধতি আপ (u, ওপর), ডাউন (d, নিচ) এবং স্ট্রেঞ্জ (s, অদ্ভুত) কোয়ার্কের অস্তিত্ব নির্দেশ করে। এর আগে আমরা বিজ্ঞানচিন্তায় মারে-গেলমানের এই পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছিলাম। ছবি ১-এ সেই অষ্টাঙ্গিক পন্থা বর্ণিত হয়েছে। মোট তিনটি অক্ষ দিয়ে কিছু কণার বৈশিষ্ট্য দেখানো হয়েছে। এই অক্ষগুলো হলো I3 (আইসোস্পিন), S (স্ট্রেঞ্জনেস, strangeness) এবং Q (তড়িৎ আধান)। যেমন প্রোটন দুটি u এবং একটি d কোয়ার্কের সমষ্টি, সেটির স্ট্রেঞ্জনেস হলো ০, আইসোস্পিন হলো ১/২ এবং তড়িৎ আধান +১। অন্যদিকে Ξ–…
পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখ জ্বালা করে আর পানি আসে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই আছে। কিন্তু এই ঝাঁজ আসে কোথা থেকে? পেঁয়াজ, রসুন প্রভৃতির গাছ মাটি থেকে সালফার গ্রহণ করে। পেঁয়াজ কাটার সময় অ্যালিনাস জাতীয় এনজাইম নিঃসৃত হয়, যা অ্যামিনো এসিড সালোক্সাইডকে ভেঙে ফেলে। এ সময় ১- প্রোপেনসালফেনিক এসিড নামে একটি যৌগ তৈরি হয়। এই যৌগটি থেকে পর্যায়ক্রমে সিনপ্রোপানেথিয়াল-এস-অক্সাইড নামে একটি গ্যাস তৈরি হয়। পেঁয়াজের কোষ কাটার ৩০ সেকেন্ডের মাঝেই গ্যাসটি সর্বোচ্চ পরিমাণে তৈরি হয়। এই উদ্বায়ী গ্যাসটি যখন চোখের ভেতরের ভেজা অংশের সংস্পর্শে আসে, তখন চোখের সিলিয়ারি স্নায়ুর মাধ্যমে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। চোখের পাতার ওপরের দিকে থাকে একধরনের গ্ল্যান্ড বা…
প্রথমে একটু অবাক লাগে। কৃত্রিম সূর্যগ্রহণ আবার কীভাবে সম্ভব! পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চাঁদ এলে তবেই না সূর্যগ্রহণ, তাই না? তাহলে এখানে কৃত্রিম কিছু কীভাবে সম্ভব? কিন্তু কল্পনা করুন, আমরা একটা কৃত্রিম চাঁদ আকাশে ছাড়লাম। এটা মাঝেমধ্যেই সূর্যকে ঢেকে ফেলবে। তাহলে? সূর্যগ্রহণে সমস্যা কোথায়? হ্যাঁ, এটা ঠিক। কিন্তু এতে লাভ? কেন এত খরচ করে কৃত্রিম সূর্যগ্রহণ দরকার? হয়তো অনেকে বলবেন, গবেষণা করা, সূর্য সম্পর্কে আরও জানাবোঝার জন্য তো লাগতেই পারে এ রকম সূর্যগ্রহণ। তবে এর চেয়েও বড় একটি প্রয়োজনের কথা আমরা ভাবতে পারি। গত ১১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে সূর্যগ্রহণের সময় কয়েক ডিগ্রি তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল। সূর্য ঢেকে যাওয়ায় সৌরশক্তি পৃথিবীতে পৌঁছাতে…
আমরা অবশ্য এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। চাঁদ ঘুরছে পৃথিবীর চারদিকে, এটাই শুধু আমরা জানি, দেখি ও বলি। পূর্ণিমা-অমাবস্যা, জোয়ার-ভাটা এসবই চাঁদের ব্যাপারে আমাদের মূল বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু পৃথিবী যে বছরে একবার সূর্যের চারদিক ঘুরে আসছে আর সেই সঙ্গে চাঁদও সূর্য প্রদক্ষিণ করছে, সেটা আমরা সাধারণত মনে রাখি না। তাই এককথায় বলা যায়, চাঁদও সূর্য প্রদক্ষিণ করছে। তবে একটু বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে। পৃথিবী যেমন মসৃণ গতিতে ঘুরছে, ঠিক সেইভাবে নয়। চাঁদের সূর্য প্রদক্ষিণ একেবারে নিস্তরঙ্গ নয়। মোটামুটি মাসে একবার চাঁদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু তার কক্ষ-প্রদক্ষিণ গতি কম। পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ দূর থেকে সে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে। এ…
ধরা যাক, পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়েছে। ঘটনাক্রমে এ সময় আপনি চাঁদে বেড়াতে গেছেন। সেখান থেকে আপনি পৃথিবীকে কেমন দেখবেন? এটা যদিও অনেকটা কল্পিত একটি অবস্থান। কিন্তু এটা তো আমরা ভাবতেই পারি, চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ থেকে পৃথিবী কেমন দেখায়? আমরা তো পৃথিবী থেকে দেখি, চাঁদ ধীরে ধীরে ঢেকে যাচ্ছে। পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে গ্রাস করছে। আর সেই সময় চাঁদ থেকে পৃথিবীকে একটি অন্ধকার গোলকের মতো দেখা যাবে। সেই গোলকের চারপাশে উজ্জ্বল লাল-কমলা রঙের আভার বিচ্ছুরণ ঘটবে। যেমন ঘটে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময়। ফলে চাঁদ থেকে পৃথিবীকে দেখাবে লালাভ রশ্মিঘেরা একটি কালো থালার মতো। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সব সময় সূর্যরশ্মি বিক্ষিপ্ত (স্ক্যাটারিং) করে। ফলে…
বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, আমেরিকায় আয়োডিনযুক্ত লবণ সাধারণ দোকানে পাওয়া যায় না। সেখানে লবণে আয়োডিন যুক্ত করা হয় না। তাদের দরকারও হয় না। একজন প্রবাসী বাঙালি এতে অবাক হন। অনেক খুঁজে এক দোকান থেকে বেশি দামে আয়োডিনযুক্ত লবণ কেনেন। কিন্তু খেতে বিস্বাদ। যেহেতু বাংলাদেশে আমাদের আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হয়, তাই তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু পরে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় (২১ জুলাই ২০১৭) এ বিষয়ে একটি লেখা পড়ে জানলেন, কেন ইউরোপ-আমেরিকায় লবণে আয়োডিন লাগে না। তাহলে বাংলাদেশে কেন লাগে? লাগে, কারণ আমাদের দেশে বন্যা হয়, আমেরিকা-ইউরোপে এই দুর্যোগ খুব কম। প্রশ্ন হলো বন্যার সঙ্গে আয়োডিনের সম্পর্ক কী? আয়োডিনের অভাব হলে…
এই সংখ্যাটি গণিতের জন্য নিবেদিত। তাই গণিতের কয়েকটি কার্যকারণ সমস্যার কথা বলি। যেমন ধরুন তরুণ শিক্ষার্থীদের এক গণিত অনুশীলন অনুষ্ঠানে গিয়েছি। সবাই সমস্বরে চেঁচিয়ে বলল, একটা মজার ধাঁধা চাই। আমি চট করে বললাম, সবাই খাতা-কলম নিয়ে লেখো। প্রথমে যার যার জন্ম সাল লেখো। এর নিচে তোমাদের ছোট ভাই বা বোনের জন্ম সাল লেখো। এর নিচে তোমাদের যার যার বয়স লেখো। তারপর লেখো তোমাদের ভাই বা বোনের বয়স। এবার রহস্য করে বললাম, তোমাদের প্রত্যেকের বয়স ও জন্ম সাল আলাদা, ঠিক কি না? তোমাদের ভাই ও বোনদের বয়স ও জন্ম সাল আলাদা, ঠিক কি না? এবার তাদের বললাম, সবাই সংখ্যা চারটির যোগফল…
ফোবিয়া হলো একধরনের অযৌক্তিক ভীতি। যেমন লিফটে উঠতে ভয় ভয় লাগে। এর কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু কারও কারও মনের মধ্যে লিফটে ওপরে ওঠা বা নিচে নামার সময় মানসিক আতঙ্ক হয়। ফলে তাদের সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয়। কারও উচ্চতাভীতি থাকে। ১৫-২০ তলা ভবনে উঠলে মাথা ঝিমঝিম করে। ভয় লাগে। হয়তো তারা বোঝে যে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কিন্তু তারপরও ভয় দূর হয় না। এটা যুক্তির ধার ধারে না। মনের অজান্তেই ফোবিয়া মনকে আতঙ্কিত করে তোলে। এ ধরনের ফোবিয়া দূর করার জন্য মনে আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। বিজ্ঞানমনস্কতা এ ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করতে পারে। যুক্তি দিয়ে যদি বুঝতে পারি যে এ ধরনের…
মনে হয় মহাশূন্য একেবারে ফাঁকা। সেখানে অনেক দূরে দূরে গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে। বাকি অংশ হয়তো একেবারে শূন্য। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গাড়ির ধোঁয়া, ইট-পাথরে গড়া শহরের ধূলিকণায় বায়ুদূষণ ঘটে, সে কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মহাশূন্যে তো সেসব উপদ্রব নেই। তাই আমাদের সাধারণ ধারণা, মহাশূন্য একেবারে পরিষ্কার। কিন্তু মাঝখানে যে মহাজাগতিক ধূলিকণা (কসমিক ডাস্ট) রয়েছে, সে সম্পর্কে খুব বেশি চিন্তা করি না। এগুলো কী, কোথা থেকে আসে, এদের গঠনবৈশিষ্ট্য কী-এসব প্রশ্ন নাসার মহাশূন্য গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাদের গবেষণায় জানা গেছে, এই মহাবিশ্বে প্রচুর মহাজাগতিক ধূলিকণা আছে। এদের অনেক সময় স্টারডাস্ট বা নাক্ষত্রিক ধূলিকণা বলা হয়। কিন্তু শুধু নক্ষত্র নয়, ওগুলো ছড়িয়ে…
মানুষের চোখ স্টেরিওস্কোপিক দৃশ্য ধারণের উপযোগী বলে একই সঙ্গে দুই চোখে দুই দিকে দেখা সম্ভব হয় না। স্টেরিওস্কোপিক অর্থ হলো দুটি চোখ একই বস্তুর একটু ভিন্ন কোণ থেকে দেখে এবং স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে এমনভাবে সংযুক্ত থাকে যে দুই চোখে দেখা দৃশ্য সুসমন্বিতভাবে মস্তিষ্কে একটি দৃশ্য হিসেবে অনুভূত হয়। এর ফলে যেকোনো বস্তুর ত্রিমাত্রিক দৃশ্য আমরা দেখতে পাই। অর্থাত্ বস্তুর শুধু দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নয়, এর বেধ বা গভীরতাও বুঝতে পারি। পাখি, হাঁস, মুরগি প্রভৃতি প্রাণী এটা পারে না। তাদের দুই চোখ মাথার দুই দিকে থাকে। ফলে ওরা দুই চোখে দুই পাশ দেখতে পারে। যদিও আমাদের দুই চোখের পেশিতন্তু স্বাধীনভাবে কাজ করে…
আমরা বেঁচে থাকার জন্য বায়ু থেকে অক্সিজেন নিই। কিন্তু বায়ুতে তো আরও অনেক বিষাক্ত গ্যাস যেমন—কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি থাকে। এগুলো কি আমাদের শ্বাস গ্রহণে আসে? শ্বাস গ্রহণের সময় তো অবশ্যই ধুলাবালুসহ অন্য সব গ্যাস আমরা গ্রহণ করি। সাধারণ হিসাব অনুযায়ী বাতাসের শতকরা প্রায় ৭৮ ভাগ নাইট্রোজেন। এটি একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এরপরই অক্সিজেন। শতকরা প্রায় ২১ ভাগ। আর রয়েছে সামান্য পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড, নিয়ন, হিলিয়াম, হাইড্রোজেন প্রভৃতি গ্যাস। এর মধ্যে শুধু অক্সিজেন গ্রহণ করে আমাদের রক্ত পরিশোধিত হয় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শরীর থেকে বের করে দেয়। আমরা নিশ্বাসে যে বাতাস গ্রহণ করি তাতে ধুলোবালিসহ সব গ্যাসই থাকে।…
সাধারণত আমরা খুব স্বাভাবিক বলে ধরে নিই। বলি, আলো সূর্য দেবে না তো কে দেবে? সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকত না। প্রায় সাড়ে চার শ কোটি বছর ধরে সূর্য জ্বলছে। কিন্তু এটা ঠিক কাঠ পোড়ানোর মতো নয়। সূর্যের মহাকর্ষ বল (গ্র্যাভিটি) তার সব ভর ভেতরের দিকে টেনে রাখছে। ফলে সৃষ্ট প্রচণ্ড চাপ ও তাপ হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোকে একত্র করে পারমাণবিক বিক্রিয়া ঘটায়। অনেকটা নিউক্লিয়ার বোমার মতোই। এখানে সৃষ্ট তাপ থেকে ইনফ্রারেড রশ্মি, আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ও দৃশ্যমান আলোকরশ্মিসহ আরও অনেক ধরনের আলোক রশ্মি বের হয়। মাইক্রো ওয়েভ, রেডিও ওয়েভ, এক্স-রে প্রভৃতিও সূর্য থেকে আসে। কিন্তু সূর্যের কেন্দ্রের এই পারমাণবিক বিক্রিয়া…
মশার জ্বালায় সবাই অস্থির। সিটি করপোরেশন তো রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ির ভেতরে পর্যন্ত ওষুধ স্প্রে করেও কূলকিনারা পাচ্ছে না। বাসায় মশার কয়েল জ্বালাই। কত ধরনের স্প্রে করি। তাতে মশার উপদ্রব কমে বটে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ফিরে আসে। তাই মশার হাত থেকে বাঁচার একটি সাধারণ ব্যবস্থা হিসেবে আমরা নিজের গালে, হাতে, মুখে চাপড় মারি। কিন্তু মশা তার আগেই চম্পট দেয়। তবে আমরা যদি সব সময় হাত দিয়ে মশা তাড়াই, তাহলে মশারাও কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়। যে ব্যক্তি বেশি হাত নেড়ে মশা মারার চেষ্টা করেন, মশারা টের পেয়ে যায় যে তিনি সাংঘাতিক লোক। তাই তাঁকে এড়িয়ে চলে। আমরা যেমন বিপদ এড়িয়ে চলি, মশারাও তেমনি…
আমরা জানি π একটি অমূলদ সংখ্যা। আবার আমরা π কে ২২/৭ আকারে লিখি। π যদি অমূলদ সংখ্যা হয়, তাহলে তো তাকে ভগ্নাংশ আকারে লেখা যাবে না। ব্যাপারটা আসলে কী? আসলে π কে অনেক সময় ২২/৭ দিয়ে প্রকাশ করা হয় নিকটবর্তী মান হিসেবে। π-এর মান আসলে ২২/৭ নয়। কিন্তু বাস্তব জীবনে হিসাব-নিকাশ সহজে করার জন্য এই অনুপাতটি ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে π < ২২/৭। π = ৩.১৪১৫৯ (আসন্ন মান), কিন্তু ২২/৭ = ৩.১৪২৮৫৭ (আসন্ন মান)। π আসলে একটি অমূলদ সংখ্যা। একে দুটি সংখ্যার অনুপাত, ২২/৭ হিসেবে দেখানো চলে না। ৩৫৫/১১৩ = ৩.১৪১৫৯২৯ বরং π-এর আরও কাছাকাছি একটি অনুপাত সংখ্যা।