লাইফস্টাইল ডেস্ক : ছোট ভাই ফয়সাল আহমেদের নিমন্ত্রণে তাদের এলাকায় ডাহুকের ছবি তুলতে গেলাম। বেশ বড়সড় পুকুরের যে দিকটায় বাসা হবার সম্ভাবনা তার উল্টো দিকে গিয়ে অবস্থান নিলাম। বার্ডিং সম্বন্ধে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। আমি ভাবলাম ওরা সাঁতার কেটে আসবে আমার দিকে, আর আমিও কিছু অসাধারণ ছবি নেবো! এরা যে একেবারেই সাঁতার কাটবে না তা জানতাম না।
অনেক্ষণ অপেক্ষার পরও তারা বের হলো না। তারপর আমরা একটা টেকনিক এপ্লাই করলাম জীবনে প্রথম বারের মতো। এক গুরু বার্ডারের মুখে শুনেছিলাম এর ব্যাপারে। প্রায় সাথে সাথেই টেকনিক কাজে দিলো! প্রচণ্ড ডাকাডাকি করতে করতে ডাহুক দম্পতি বের হয়ে এলো! ডাহুক যে তার territory’র ব্যাপারে এতোটা possessive হয়, এটা দেখে অবাক হয়ে গেলাম আমরা দুইজন! প্রচণ্ড ডাকাডাকি করছে।
আমাদের দুইজনেরই কেনো যেন মনে হলো পুরুষ পাখিটা সন্দেহ করছে নারীটাকে! দুজনের মধ্যে একটা সন্দেহর ভাব ছিলো প্রথমে! একটু যেন মান অভিমান! তারপর আবার নিজের territory পুরোটা পাহারা দেয়ার মতো করে একসাথে হেঁটে বেড়ানো! তারপর দু’জন দুজনার কাছাকাছি হওয়া! It was a complete love story! ছবিগুলো sequence অনুযায়ী দেখতে story পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়ে যাবে!
অনেক দূর পুকুরের অপর পাড় থেকে মুগ্ধ হয়ে দেখলাম দুই ভাই! এতো দূর থেকে যা পারি ছবি নিলাম! আর অসাধারণ এক সকাল উপহার দেবার জন্য আল্লাহ্ সুবহা’নাহু ওয়া তাআ’লাকে ধন্যবাদ জানালাম!
কথাগুলো বলছিলেন প্রকৃতি প্রেমী ও শৌখিন ফটোগ্রাফার তারিক হাসান। খুব ভালো মনের মানুষ তারিক হাসান সময় পেলেই বেরিয়ে পড়েন ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে বিভিন্ন লোকেশনে ছবি তোলার জন্য। পেশা শিক্ষকতা হলেও প্রকৃতি ও প্রকৃতির জীব বৈচিত্রের প্রতি রয়েছে তার অঢেল ভালোবাসা। রয়েছে ছবি তোলার প্রতি তার স্বভাব দুর্বলতা। প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং জীব বৈচিত্রের ছবি তুলেন তিনি মনের আনন্দে, মনের মতো করে। সময় সময় এসব ছবিগুলো আপলোড করেন সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নিজের ফেসবুকের ওয়ালে।
তিনি জানান, ডাহুক পাখিটি দেখতে অনেকটা মুরগির মতো। শুধু আকারে খানিকটা ছোট। আর পা কিছুটা লম্বা। লেজটা অধিকাংশ সময় খাড়া থাকে। হাঁটার সময় লেজটাকে নাচিয়ে হাঁটে। জলাধারে কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে এলাকায় বেশি দেখা যায় ডাহুককে। খাবারের খোঁজে অনেক সময় মানুষের কাছাকাছি চলে আসে এই পাখিটি। এটি মুরগির মতো অনেকগুলো ডিম দেয়। সেগুলোকে পালাক্রমে তাপ দেয় ডাহুক দম্পতি। জলাশয়ে এক সাথে বাচ্চারা বিচরণ করে। অত্যন্ত চতুর এ পাখিটির সব চেয়ে দুশমন হচ্ছে দাঁড়াশ সাপ। পাখিটি যখন ডাকাডাকি করে তখন সাপ তাদের অবস্থান জানতে পারে সহজে। অনেক সময় ডাহুকের বাচ্চারা সাপের খাবারে পরিনত হয়। তবে এগুলো অনেক সাহসী এবং চতুর প্রজাতির পাখি।
তিনি বলেন, এ পাখিটিকে চেনেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই আছেন আমাদের দেশে, পরিচিতি লাভের অবশ্য একটা কারণও আছে। সেটি হচ্ছে- এদের নিয়ে বেশ কিছু কবিতা রচিত হয়েছে বাংলা সাহিত্যে। যেমন : কবি জীবনানন্দ দাশ রচনা করেছেন ‘ডাহুকী’ কবিতা। অপরদিকে কবি ফখরুল আহমেদ রচনা করেছেন ‘ডাহুক’ কবিতটি। বলা যায়- বাংলা সাহিত্যে এ পাখির বেশ কদর রয়েছে।
জানাযায়, ডাহুক এর (ইংরেজি নাম White-breasted Waterhen), (বৈজ্ঞানিক নাম: Amaurornis phoenicurus), এরা Rallidae গোত্র বা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়।
ডাহুক পাখিগুলোর দেহ কালচে এবং মুখমণ্ডল, গলা, বুক ও পেট সম্পূর্ণ সাদা। উপরের ঠোঁটের গোড়ার দিকের কিছুটা অংশ লাল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ সম্পূর্ণ কালো। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি একই রকম দেখতে। অন্যান্য পাখির তুলনায় এরা বেশ সাহসী থাকায় মানববসতির আশেপাশে এদের প্রায়ই দেখা যায়। প্রজননকালীন সময়ে বিশেষ করে বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে এরা উচ্চস্বরে বার বার ডাকে।
ডাহুক পাখির প্রধান খাবার জলজ পোকামাকড়, ছোট মাছ, জলজ উদ্ভিদের কঁচি ডগা, ধান ইত্যাদি। পোষা ডাহুক চাল, ভাত খায়। এদের প্রজনন সময় আষাঢ় থেকে শ্রাবণ মাস। বাসা বাঁধে জলার ধারে ঝোপ-জঙ্গলে কিংবা জলদামের ওপর অথবা বাঁশঝাড়ে। ডিম পাড়ে ৭-১০টি। স্ত্রী-পুরুষ মিলে ডিম তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন।
ডাহুক পাখিটি একটানা দীর্ঘক্ষণ ডাকতে পারে, রাত-বিরাতেও ডাকে। বিশেষ করে সূর্যাস্তের পর বিরতিহীন ডাকতে থাকে এ পাখিটি। ডাহুকের ডাক নিয়ে গ্রাম-বাংলার মানুষের ভেতরে কিছুটা কৌতূহল রয়েছে। অনেকেই মনে করেন ডাহুকের ডাক মানুষকে বিপদ সংকেত দেয়। আসলে এসবের কোনো ভিত্তি নেই। শুধু ওদের প্রজনন সময় ঘনিয়ে এলে প্রেমিক পাখিটি এমনভাবে আর্তনাদ করে প্রিয়াকে মজাতে চেষ্টা করে। এরা ভালো পোষ মানে। শিকারিরা পোষাপাখি দিয়ে এ প্রজাতির বুনোপাখি শিকার করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।