মো. জাকির হোসেন : রমজানে পাকা কলার ব্যাপক চাহিদা। এই সুযোগ অসাধু আড়তদাররা বাড়তি মুনাফার লোভে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। কলা পাকাচ্ছেন বিষাক্ত কেমিক্যালের মাধ্যমে। টঙ্গীর খাঁ-পাড়া রোডের শরীফ কলার আড়ত ও চেরাগ আলী আড়তে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়েছে।
বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো কলা সরবরাহ করা হচ্ছে টঙ্গীর বিভিন্ন হাটবাজার, ফুটপাতের দোকান, স্কুল-কলেজের পাশের দোকানসহ নানাস্থানে।
এছাড়া এসব বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো কলা ভ্যানে করে বাসা বাড়ির সামনে বিক্রি করা হচ্ছে। কলায় হাত দিয়ে পাকা মনে হলেও উপরে চামড়া হলুদ কিন্তু ভেতরে কাঁচা থেকে যাচ্ছে। এসব বিষাক্ত কলা খেয়ে শিশু ও বৃদ্ধসহ সব শ্রেণির মানুষ দিন দিন বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত কলা মানুষের কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গের মারাত্বক ক্ষতি করছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন কিংবা প্রশাসন এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
কলার আড়তদারা অপরিপক্ক ও কাঁচা কলায় ‘কপার সালফেট পেন্ট্রাহাইড্রেট’, ‘প্রোমেট’ নামক বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহারের ফলে কলার প্রকৃত স্বাদ ও উপকারের পরিবর্তে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ব্যাপক হারে বাড়ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিকাল ঘনিয়ে আসতেই খাঁ-পাড়া রোডের শরীফ কলার আড়ত ও চেরাগ আলী মোল্লা মার্কেটের পেছনে কলার আড়তে গণহারে কাঁচা ও অপরিপক্ক কলায় এসব বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানোর হিড়িক পড়ে যায়। মার্কেটের ১৫টি আড়তের মালিক কর্মচারীরা অপরিপক্ক কলায় সন্ধ্যায় কেমিক্যাল মিশিয়ে রাতারাতি পাকিয়ে ফেলাচ্ছেন কলা। পরে এসব কলা ভ্যানে করে পৌছে যাচ্ছে ক্রেতাদের হাতে।
খাঁ-পাড়া এলাকার কলার আড়তের মালিক শরিফ হোসেন কলায় বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানোর কথা অকপটে স্বীকার করে বলেন, সারাবছর তো আর ব্যবসা করা যায় না। তাই রমজানে কলার চাহিদা বেশি থাকে। কমসময়ের মধ্যে কলা পাকানোর জন্য কিছু কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।
চেরাগ আলী মার্কেটের কলার আড়তদার জাহাঙ্গীর আলম ও আফজাল হোসেন বলেন, রমজানে কলার চাহিদা বেশি হওয়ায় তাড়াতাড়ি কলা পাকাতে হয়। এজন্য কলা কেমিক্যালের পানিতে চুবিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়।
গাজীপুর জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. দিদার হোসেন বলেন, টঙ্গীর কলার আড়তগুলোতে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। কলায় কেমিক্যাল মেশানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কলায় ব্যবহৃত কপার সালফেট পেন্ট্রাহাইড্রেট, প্রোমেটসহ অন্যান্য যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় সেগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব কেমিক্যাল মানবদেহে প্রবেশের ফলে লিভার, কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে যেতে পারে। এছাড়া কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত কলা খেলে অন্ত্রের ও খাদ্যনালীর ক্যান্সার হতে পারে। -যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।