স্পোর্টস ডেস্ক : অধিনায়ক লড়লেন অধিনায়কের মতোই। কিন্তু ঠিক সঙ্গ পেলেন না কারোও। এক প্রান্ত ধরে রেখে ফিফটি হাঁকালেন সাকিব আল হাসান, কিন্তু লোয়ার অর্ডার নিয়ে আর কতক্ষণ!
শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিতে গিয়ে মারতে গেলেন আলজেরি জোসেফকে। মিসটাইমিং হয়ে লংঅনে ক্যাচ হলেন টাইগার দলপতি। ৬৭ বলে ৬ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় সাকিবের ৫১ রানের লড়াকু ইনিংসটি থামার দুই বল পরই অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ।
৩২.৫ ওভার ব্যাট করে ১০৩ রানে থেমেছে টাইগারদের প্রথম ইনিংস। সাকিব ছাড়া দুই অংকে পৌঁছতে পেরেছেন কেবল দুজন-তামিম ইকবাল (২৯) আর লিটন দাস (১২)।
শূন্য রানে আউট ছয় ব্যাটার-মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, নুরুল হাসান সোহান, মোস্তাফিজুর রহমান আর খালিদ আহমেদ। এটি একটি বিশ্বরেকর্ড। গত সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশই গড়েছিল ছয় শূন্যের বিশ্বরেকর্ড।
বোর্ডে ৪৫ রান উঠতেই ৬ ব্যাটার সাজঘরে। একের পর এক উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা বাংলাদেশ। চাপ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো ভীষণ কঠিন এক কাজই। তবে সাকিব আল হাসানের মাথায় যেন চাপ শব্দের জায়গাটাই নেই।
নতুন করে টেস্ট অধিনায়ক হয়েছেন। অধিনায়ক সাকিব রক্ষণাত্মক না হয়ে বেছে নিলেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। টেস্টটা ঠিক টেস্টের মতো খেলেননি। যখনই সুযোগ পেয়েছেন ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর চড়াও হচ্ছেন।
মেহেদি হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ৬৬ বলে ৩২ আর লোয়ার অর্ডারের এবাদত হোসেনকে নিয়েও ২৮ বলে ২২ রানের জুটি গড়েন সাকিব। সাহসী ক্রিকেট যাকে বলে। সাকিব এভাবে না খেললে একশ পার করাও কঠিন হয়ে যেতো।
অ্যান্টিগায় টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই বিপদে ছিল বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় পেসার কেমার রোচ ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আঘাত হেনেছেন। বাইরের বল অযথা খোঁচা দিয়ে স্লিপে ক্যাচ হয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয় (১ বলে ০)। টেস্টে ১১ ইনিংসে তার শূন্য এ নিয়ে ছয়টি।
এক ওভার বিরতি দিয়ে এসে রোচ তুলে নিয়েছেন টপঅর্ডারের আরেক ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তকেও। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হওয়া শান্তও করেছেন শূন্য, ৫ বল খেলে। ফলে ৩ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
এরপর ব্যাট করতে নেমে তামিমের সঙ্গে জুটি বাধার চেষ্টা করেছিলেন মুমিনুল হক। আশা ছিল, নেতৃত্বের ভারমুক্ত হওয়ার পর নিজেকে ফিরে পাবেন টেস্টে বাংলাদেশের সেরা এই ব্যাটার। কিন্তু, না। তিনি নিজেকে যেন হারিয়ে খুঁজছেন। কোনোভাবেই ফর্মে ফিরতে পারছেন না।
আজও সুযোগ ছিল তার সামনে নিজেকে মেলে ধরার। কিন্তু না, মাহমুদুল হাসান জয় আর নাজমুল হোসেন শান্তর দেখানো পথে হেঁটে তিনিও আউট হলেন শূন্য রানে। জেইডেন সিলসের ডেলিভারি তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন মুমিনুল। এ নিয়ে টানা আট ইনিংসে দশের নিচে আউট হলেন তিনি।
টাইগারদের আত্মাহুতির মিছিলে ভরসা হয়ে ছিলেন তামিম ইকবাল আর লিটন দাস। বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে একটি জুটিও গড়েছিলেন। কিন্তু ৫ বলের ব্যবধানে এই দুই ব্যাটারকে হারিয়ে আবারও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
তামিম-লিটন দুজনই ব্যাটিং লাইনআপে বড় আস্থার প্রতীক। ১৬ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে অনেকটা সময় দুশ্চিন্তামুক্তও রেখেছিলেন তারা। ৫৩ বলের জুটিতে আসে ২৫ রান।
এরপরই আবার বিপদ। আলজেরি জোসেফের লেগ সাইডের বল খেলতে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হয়েছেন তামিম। ৪৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ২৯ রান।
এর পরের ওভারে জোড়া আঘাত হানেন কাইল মায়ার্স। লিটন দাস ৩৩ বলে ১২ করে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষকের কাছে। ইয়াসির আলি রাব্বির বদলে সুযোগ পাওয়া নুরুল হাসান সোহান এক বল পরই হয়েছেন এলবিডব্লিউ (০)।
এরপর মেহেদিকে নিয়ে সাকিবের জুটি। মিরাজ অবশ্য নিজে রান করতে পারেননি। তবে অনেকটা সময় সাকিবকে সঙ্গ দিয়েছেন। ২২ বলে ২ করে আউট হন এই অলরাউন্ডার।
৬ উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। সাকিব ছিলেন তখন মাত্র ২৭ রানে। লাঞ্চের পর মিরাজও ফিরলে দ্রুত রান তোলায় মন দেন সাকিব। ২৯তম ওভারে জোসেফকে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৪৪ রানে পৌঁছান তিনি।
সঙ্গে তখন এবাদত হোসেন। এবাদত অনেকটা সময় পাশে থাকাতেই ক্যারিয়ারের ২৮তম ফিফটি তুলে নিতে পেরেছেন সাকিব। এবাদত অপরাজিত থেকে যান ১১ বলে ৩ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেইডেন সিলস আর আলজেরি জোসেফ নেন ৩টি করে উইকেট। দুটি করে উইকেট কেমার রোচ আর কাইল মায়ার্সের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।