জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশ ও ভারত অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রমণ ও বাণিজ্য প্রটোকল (পিআইডব্লিউটিটি) এর আওতায় আজ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জে ‘সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল’ এবং ‘সুলতানগঞ্জ-মায়া’ নৌপথে নৌযান যাত্রার উদ্বোধন করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ এবং বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা উপস্তিত ছিলেন।
এ উপলক্ষ্যে সুলতানগঞ্জ হাই স্কুল মাঠে আয়োজিত এক সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিচ্ছে বলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যদি না হতো তাহলে আমরা সুলতানগঞ্জে আসতে পারতাম না, বাংলাদেশের মানুষ আতঙ্কে থাকতো, উন্নয়নের চাকা ৭৫ এর মত উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিত। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অর্থবহ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে।দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অকুন্ঠ সমর্থনের কারণে শেখ হাসিনার হাত আরো শক্তিশালী হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আগামী দিনে দেশি-বিদেশী সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, শেখ হাসিনার ডাইনামিক নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা নির্মিত হয়েছে। কারো সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্ব এ নীতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় চলে গেছে । বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশকে উন্নয়নের মাধ্যমে বদলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকে বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। সৌদিআরবসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য একটি মহল তৎপর ছিল। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় চলে গেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী এবং বিআইডব্লিউটিএ’র সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালন) মোঃ সেলিম ফকির।
সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলাধীন সুলতানগঞ্জ মৌজাভূক্ত পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত।
‘সুলতানগঞ্জ-মায়া’ ২০ কিলোমিটার দূরত্বের সুলতানগঞ্জ-মায়া প্রটোকল রুটে সারাবছরই স্বল্প নাব্যতার নৌযান দ্বারা উভয় দেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য পরিচালনা করা সম্ভব হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলোর নির্মাণ কাজে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় পাথরের চাহিদা রয়েছে।
নির্মাণাধীন এসব প্রকল্পগুলোর জন্য আরিচা-রাজশাহী-গোদাগাড়ী-সুলতানগঞ্জ-মায়া-ধুলিয়ান রুটের একাংশ অর্থাৎ মাত্র ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথটি চালু হলে দু’দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাণিজ্য প্রসারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
দু’দেশের বাণিজ্য প্রসারের বিষয়টি বিবেচনায় এনে গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌ-প্রটোকল রুটটি স্বল্প নাব্যতা সম্পন্ন নৌযানের পরীক্ষামূলক যাত্রা আজ শুরু করা হলো। সুলতানগঞ্জ হতে সড়ক পথে রাজশাহীর দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ হতে সমগ্র উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর এবং পশ্চিম-দক্ষিণ বঙ্গের ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, যশোর এর সাথে সড়ক পথে সরাসরি সংযোগ রয়েছে।
ভারতের মায়া পোর্ট অব কল এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানীকৃত সকল ধরণের পণ্য/মালামাল অনায়াসেই উল্লিখিত জেলাগুলোতে পৌঁছানো সম্ভব হবে এবং অনুরূপভাবে উল্লিখিত জেলা হতে বড় বড় কনসাইনমেন্টের বাল্ক কার্গো/মালামাল সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল এর মাধ্যমে ভারতে রপ্তানী করাও সম্ভব হবে।
সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল চালু হওয়ার পরে সুলতানগঞ্জ এলাকায় পদ্মা নদীর তীরে মালামাল পরিবহণ, সংরক্ষণ এবং স্থানান্তরের জন্য জেটি/গ্যাংওয়ে, গোডাউন, ডাম্পিং এরিয়া, পার্কিং এরিয়া এবং আধুনিক মালামাল হ্যান্ডলিংয়ের ক্রেন, কনভেয়ার বেল্ট ইত্যাদি অবকাঠামো গড়ে উঠেবে। গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী রাজশাহী এলাকায় ব্যাপক নৌ-বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে।
আজ প্রথম দিন বাংলাদেশ থেকে ‘সাইফ-সিয়াম-সাফিন-১’ নামক একটি কার্গো সাড়ে ১১ মেট্রিক টন গার্মেন্টস ওয়েস্ট নিয়ে সুলতানগঞ্জ থেকে রওনা দিয়ে মায়াতে পৌঁছায়। মায়া থেকে ১০০ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে পাথর ‘দেশবাংলা’ নামক একটি কার্গো মায়া থেকে সুলতানগঞ্জ এসে পৌঁছায়।
বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা ও কূটনৈতিক সফলতার নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ অতিক্রমণ ও বাণিজ্য প্রটোকল (পিআইডব্লিউটিটি) ১৯৭২ সন হতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলমান রয়েছে। গোদাগাড়ী/সুলতানগঞ্জকে পোর্ট অব কল নৌপথ শুল্ক স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।