জুমবাংলা ডেস্ক : ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদহার নয়-ছয় খুবই একটি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এটি করা না হলে খেলাপি ঋণের অঙ্ক আরও বেড়ে যেত। পরে ব্যাংকিং খাত খুঁজে পাওয়া যেতে না। পাশাপাশি শেষ হয়ে যেত বড় ও ছোট সব শিল্পগুলো। এতে মানুষের খাবার দাবারেও বড় ধরনের সমস্যা হতো।
রোববার সর্বজনীন পেনশন স্কিমের তহবিল ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অপরদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর বলেছেন, ব্যাংক ঋণের সুদ হার নয়-ছয় করার সিদ্ধান্তটি ছিল রাজনৈতিক। সেটি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করালে মন্ত্রী বলেন, এটি গভর্নরের ব্যক্তিগত মত। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিতে প্রতিটি উপকরণ পরিবর্তনশীল। এটি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় না। কোন দেশ ৫ বছরের অর্থনীতির বিষয়গুলো একসঙ্গে চূড়ান্ত করে না। গভর্নর যদি মনে করেন এটি সঠিক হয়নি। সেটি উনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রতিটি ব্যক্তির চিন্তা ভাবনা আলাদা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান খেলাপি ঋণ একটি সীমানার মধ্যে আছে। সেটি রাখা সম্ভব হতো না যদি সুদ নয়-ছয় কার্যকর করা না যেত। আর এটি বাস্তবায়ন না করার জন্য ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড চাপ দিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা প্রথমে সুদ হার ছয়-নয় এর বিপক্ষে ছিল। আমাকে করতে দিতে চায়নি।
প্রসঙ্গত, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রোববার পর্যন্ত ১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা চাঁদা জমা পড়েছে। এর থেকে ১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করে এ খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ওই ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সঠিক সময়ে আইএমএফ’র ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে।
সর্বজনীন পেনশন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সর্বজনীন পেনশন সফল হয়েছে। সেখানে এই পেনশন তহবিল ৭৫৮ বিলিয়ন ডলারের। সে জায়গায় যেতে বেশি দিন প্রয়োজন হয়নি।
আর বিশ্বেও অধিকাংশ উন্নত দেশগুলো পেনশন স্কিম থেকে পুঁজি সংগ্রহ করে। বিগত সময়ে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচুইটির আধুনিক প্রতিস্থাপন হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম। আমি মনে করি, দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারবে এই পেনশন স্কিম।
অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে অনেক বিষয় এখন অনাবিস্কৃত আছে। সেগুলো আবিস্কার করতে হবে। এর মধ্যে একটি পেনশন স্কিম ছিল। অনাবিস্কৃত বিষয়গুলো আবিস্কার করতে না পারলে বিশ্ব অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে সে তুলনায় আমরা পিছিয়ে পড়বো। আবিস্কারর ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরে বলা হচ্ছে, সমস্যা আছে সেগুলো কি প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন সমস্যাগুলো সমাধান করার কারণেই অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভাল আছে।
পেনশন স্কিম প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা প্রথম থেকেই এটি উ’সা নিয়ে কাজ করছি। বাজেট ঘোষণা সর্বজনীন পেনশন ঘোষণা দিয়ে খুশিই ছিলাম। তবে এখন একটি অখুশি। কারণ শুরুতেই যে ধরনের যন্ত্রপাতি ছিল না। শক্তিশালী ডিভাইস, প্রযুক্তি কাঠামো দরকার। তবে আমরা হারবো না।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে, খাদ্যের মূল্যও কমাতে হবে। এ কাজটি আমরা অবশ্যই করবো। আমাদেরও চিন্তা চেতনায় এটি আছে কিভাবে সেটি কমানো যায়।
শ্রীলঙ্কা ও ভারত মূল্যস্ফীতি কমিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পারছে না। সেদিক থেকে আপনি ব্যর্থ কিনা প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শ্রীলঙ্কা খুব বেশি কিছু পারেনি। শ্রীলঙ্কার অনেক কিছু আমাদের কাছ থেকে শেখার আছে। তবে সেখানে পর্যটন শিল্প আছে। যেটি আমার দেশে নেই। কয়েকদিন আগেও খুব খারাপ অবস্থা গেছে তাদের। পর্যটনের মাধ্যমে তারা ঘুরেও দাড়ানোর চেষ্টা করছে। আমাদের সে সুযোগ নেই। সামনে আমাদের হবে। এখন অভ্যন্তরীণভাবে পর্যটন শিল্প হচ্ছে। সেটি সামনে আরও সম্প্রসারিত হবে।
রির্জাভ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন ২০ বিলিয়নের কাছাকাছি আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথে এগোচ্ছে সেটি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বলেছে। তিনি আরও বলেন, সব সময় কোন না কোন কিছু লেগেই থাকে। যুদ্ধ, মহামরি এসবের কারণে আজ এ অবস্থা।
অনুষ্ঠানে অর্থ সচিব ড. মো: খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ব্যক্তি এ সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হয়েছে। ট্রেজারি বন্ড হল সবচেয়ে সুরক্ষিত বিনিয়োগ। এ খাতে পেনশন তহবিল বিনিয়োগ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগে বেসরকারি কর্মীদের পেনশনের বিষয়টি ছিল।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করেছে। আমি মনে করি এটি একটি যুগান্তকারী বিষয়। তিনি আরও বলেন, পেনশন তহবিল বিনিয়োগের বিধিমালা শিগগিরই জারি হবে।
শুরুতে এর ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। পরবর্তী মাস থেকে এর সাড়া কমছে, এর কারণ জানতে চাইলে অর্থসচিব বলেন, এর জন্য প্রচার প্রচারণা দরকার। প্রবাসীদের আগে ৫ ও ১০ হাজার টাকার দু’টি স্কিম ছিল। এখন ২ হাজার টাকার স্কিমও চালু করা হয়েছে। এটি যে ভাল জিনিস সেটি জনগণকে বোঝাতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা দরকার। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর মাধ্যমেও প্রবাসীদের যুক্ত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।