জুমবাংলা ডেস্ক : নির্দিষ্ট কর দিয়ে অবৈধ সম্পদ বৈধ করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেট প্রস্তাবে আগামী জুলাই মাস থেকে ১৫% কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে এক বছরের জন্য কালোটাকা সাদা বা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
আর এরপর থেকেই অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ তার অপ্রদর্শিত সম্পদ বৈধ করতে এ সুযোগ নিতে পারবেন কি-না।
রীতি অনুযায়ী প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডস এনবিআর। এ বছর এই সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে বেনজীরের প্রসঙ্গটি।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেট–উত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। তিনি জানতে চান—বেনজীরের মতো ব্যক্তিরা সম্পদে ১৫% কর দিলে তাদের আয় বা সম্পদ বৈধ হয়ে যাবে কি-না?
এই প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, “বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিষয়টি তো ফৌজদারি তথা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে গেছে। এক্ষেত্রে কর দিলে সম্পদ কীভাবে বৈধ হবে—সেটা তো আইনি প্রশ্ন। তবে এত ঢালাওভাবে আমরা এটাকে দেখতে চাই না। বিভিন্ন কারণে মানুষের অপ্রদর্শিত কিছু সম্পদ থাকতে পারে। এ ধরনের অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধভাবে দেখানোর সুযোগ দিতে আমরা এমন প্রস্তাব দিয়েছি।”
সংবাদ সম্মেলনে আরেক সাংবাদিক জানতে চান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সরকার ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তারা সরকারের গোয়েন্দা চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এমন পর্যায়ে গেলেন? এখন বেনজীরের মতো ব্যক্তিরা সম্পদে ১৫% কর দিলে তাদের সম্পদ বৈধ হবে কি-না।
এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, “বেনজীর আহমেদের বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে যে অধিকার তার (বেনজীর) পাওয়ার কথা, তাকে সেটা দেওয়া হবে।
বেনজীর আহমেদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে উল্লেখ করে মসিউর রহমান বলেন, “আপনারা কাগজে নিশ্চয়ই দেখেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধান শেষে প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতে বেনজীর আহমেদ সময় চেয়েছেন। তাকে সময় দেওয়া হয়েছে।”
মসিউর রহমান আরও বলেন, “এটা বলা হয়নি যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না; আবার এটাও আগাম বলা হয়নি যে তাকে আমরা জেলে নেব, ফাঁসি দেব। নাগরিক হিসেবে যে অধিকার তার পাওয়ার কথা, তাকে সেটা দেওয়া হবে।”
সম্প্রতি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি–অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক। সংস্থাটি এখন পর্যন্ত বেনজীর ও তার পরিবারের নামে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) খুঁজে পেয়েছে। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।