স্পোর্টস ডেস্ক : ক্রিকেটের অনেক বিষয়ে জ্ঞান আমার নেই। তবে ক্রিকেট নিয়ে কখন কী হচ্ছে- আমি আপডেট রাখি। বিশেষ করে আমাদের দলের আপডেট। বিশ্বকাপ খেলার জন্য বাংলাদেশ দল দেশ ছাড়ার আগে দলের কোচ, তামিম ইকবালের খেলা না-খেলা নিয়ে যা ঘটছিল- সবই দেখেছি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মাশরাফির অন্ধ ভক্ত; সাকিব আল হাসানও আমার খুবই পছন্দের! বাকি খেলোয়াড়দের প্রতি চোখ বন্ধ করে নির্ভর করার মতো কিছু আমার মধ্যে তৈরি হয়নি। প্রথমে জানলাম তামিম ইকবাল বাদ পড়েছেন। সর্বশেষ শুনলাম তামিম ইকবাল খেলবেন- শুনে ভালো লাগছিল। কিন্তু পরে দেখলাম বিশ্বকাপ খেলতে সে যাচ্ছে না; এ ঘটনায় আমারও খারাপ লেগেছিল। তামিমের বিশ্বকাপে খেলা দরকার ছিল। বাইরে থেকে যারা খেলা দেখেন, তারা প্রত্যেকে এখন ক্রিকেটার। সবার মন্তব্য দেখে অন্তত তেমনটাই আমার মনে হয়। এ অবস্থা দেখে আমার মনে প্রশ্ন জাগে- যারা মাঠে খেলছেন, তারা কি বিষয়টা বুঝতে পারছেন না? দর্শকের কথা যদি খেলোয়াড়রা শুনতেন তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াতো! এ জন্য লোকজনের কথা আমি এখন কোনো ক্ষেত্রে আর গুরুত্ব দেই না। যারা মাঠে খেলেন তারা বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই খেলেন। সুতরাং তারা তাদের মতো করে ভালো খেলার চেষ্টা করবেন এটাই স্বাভাবিক। এর ফল কখনও ভালো হবে, কখনও কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না- এটা মেনে নিয়েই দলকে ভালোবাসতে হবে।
তামিম ইকবালকে বাদ দিয়ে খেলার পেছনে কী কারণ তা জানি না। তবে আমার খারাপ লেগেছে এ কথা শুরুতেই বলেছি। বিশ্বকাপে যখন বাংলাদেশ দল খারাপ খেলতে শুরু করলো, তখন নানাজন নানা কথা বলছিলেন- সবই দেখছিলাম। আমারও মনে হয়েছিল তামিম ইকবাল দলে থাকলেই পারতেন। আসলে এই সিদ্ধান্তটা কেমন হলো? এদিকে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের দ্বন্দ্বের একটা ব্যাপার উড়ছে। এ নিয়ে অনলাইনে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমি দ্বিধান্বিত। সাকিব-তামিমের মধ্যে সত্যি কি দ্বন্দ্ব আছে, নাকি এটা দর্শকদের সৃষ্টি; এটা নিয়েও আমার দ্বিধা আছে।
দলের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তো সাকিব আল হাসানই চূড়ান্ত নন, তার সঙ্গে কোচসহ আরো কিছু বিষয় জড়িত। ফলে এ ক্ষেত্রে শুধু সাকিবকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। তা ছাড়া সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব আছে কি না তাও নিশ্চিত নই। ফলে এ বিষয়ে মন্তব্য করাটাই ঠিক না। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে মানুষ নানা অভিযোগ করেন; কেউ কেউ তাকে ‘বেয়াদব’ বলেন। কিন্তু সব মানুষ তো একরকম নয়। সাকিবের কাছ থেকে মাশরাফির মতো ব্যবহার আশা করলে তো হবে না। এর আগে শিশিরকে বিয়ের পরও নানারকম কথা হয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে আমি সাকিবের পক্ষই নিতাম। কয়েক দিন আগে শুনলাম, বিশ্বকাপে দল খারাপ করার কারণ খুঁজে বের করা হবে। সুতরাং কারণ খুঁজে বের না করা পর্যন্ত কাউকে একা দোষারোপ না করাই ভালো।
দলের কোচ এবং বিসিবির সভাপতির ভূমিকায় মানুষ বিরক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারলেও এ চিত্র দেখা যায়। এ বিষয়ে বিসিবির সজাগ হওয়া প্রয়োজন। ছেলেদের ক্রিকেট দলকে সরকার প্রচণ্ড সাপোর্ট দিচ্ছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তাদের খেলা দেখেন, ক্রিকেটারদের ফোন করেন, ভালো খেললে শুভেচ্ছা জানান। অর্থাৎ উনি এতটাই দেখভাল করছেন! সুতরাং বিসিবিকে ঠিকঠাক দায়িত্ব দিচ্ছেন না এটা বলা ঠিক না। ফলে দর্শক হিসেবে আমি এটা যাচাই করব না। এবার দল খারাপ খেলেছে- এ বিষয়ে বলব- খেলায় ভালো-মন্দ থাকবেই।
সময় স্বল্পতার কারণে বিশ্বকাপের সব খেলার পুরোটা দেখতে পারিনি। বিশ্বকাপে কেন বাংলাদেশ দল খারাপ করেছে তা বিশ্লেষণের জন্য সব খেলা পুরোটা দেখা প্রয়োজন। যেহেতু দেখতে পারিনি, সেহেতু বিশ্লেষণ করাটা কঠিন। তবে বাংলাদেশ দলের নতুন কয়েকজন ক্রিকেটার ভালো করছেন, দলও ভালো করছে। সেখানে বিশ্বকাপে গিয়ে কেন দল খারাপ করলো, তা ভাবা যায় না। এ জন্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আর সে কাজটি বিসিবি ও কোচের করা দরকার। কারণ দায়টা তাদেরই বেশি।
দলের খেলোয়াড়দের যদি ব্যক্তিগত রেষারেষি থাকে, রাজনৈতিক চাপ থাকে বা খেলোয়াড় নির্বাচনে কোনো স্বজনপ্রীতি থাকে, তবে সেসব নিরপেক্ষ জায়গা থেকে সমাধান হওয়া উচিত। একমাত্র ক্রিকেটের বদৌলতে বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের নাম জানেন। এই অর্জনটা আমাদের ধরে রাখা প্রয়োজন।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ খেলার যোগ্যতা অর্জনের দিনটির কথা এখনো আমার মনে আছে। আমি তখন ময়মনসিংহে ছিলাম। সারা বাংলাদেশে আনন্দ মিছিল হয়েছিল। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে কাদা মেখে আনন্দ-উল্লাস করেছিল। এই যে আনন্দ, একের পর এক দলের ভালো পারফরম্যান্সে আমরা ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিলাম। সময়ের সঙ্গে দলের আরো ভালো জায়গায় যাওয়ার কথা। কিন্তু কেন আমাদের এমনটা হবে? বিসিবি, দল সব কিছুর মধ্যে উশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দলে এ বিষয়গুলোর জায়গাই হওয়া উচিত নয়। এটা খেলা। এটা স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, ক্ষমতার ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। না হলে দল ধ্বংস হয়ে যাবে।
মেয়েদের ক্রিকেট দল ধারাবাহিকভাবে সফলতা এনে দিয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো পৃষ্টপোষকতা নেই। শুনলাম মেয়েদের বেতনও নাকি বাকি, ছেলে-মেয়েদের বেতন কাঠামোতেও নাকি অনেক বৈষম্য। এই যে মেয়েরা খেলছে তাদের কিন্তু সামাজিক চাপও আছে। মেয়েদের খেলতে যাওয়া মানেই একটা সংগ্রাম। অথচ তারা সব প্রতিকুলতা দূরে ঠেলে দিয়ে খেলায় ভালো করছে। কিন্তু সাপোর্ট পাচ্ছে না। এদিকে বোধহয় নজর দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্রিকেট খেলার এখন এমন অবস্থান, যেখানে একটি জাতি এক হয়ে যায়। সবাই বিশ্বাস করে, এটা আমাদের দেশ, আমাদের খেলা, আমাদের দল। আর এই ক্রিকেট দুনিয়াজুড়ে বাংলাদেশকে প্রমোট করে। আর কোনো বিষয়ে এতটা আগায়নি। এজন্য নিজেদের স্বার্থে এটাকে কোনোভাবেই নষ্ট করা ঠিক হবে না।
আমি চাই, নিরপেক্ষভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পুনরায় সুগঠিত হোক। বিসিবি, কোচ, দল— সবকিছু ঢেলে সাজানো উচিত। মাশরাফি, সাকিব, তামিমরা যেভাবে একসঙ্গে সুন্দরভাবে খেলতেন তেমনটা হোক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।