লাইফস্টাইল ডেস্ক : বর্ষাকালে প্রকৃতি হয়ত স্বস্তির শ্বাস নেয়। তবে জলাশয় ও জলজ প্রাণী এই সময়ে দূষণের কারণে সামুদ্রিক খাবার খাওয়া বিপদজ্জনক হতে পারে।
কারণ পানিবাহিত রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি এই সময় বাড়ে।
বর্ষায় সামুদ্রিক খাবার খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হেল্থশটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নয়া দিল্লির ‘হেল্থ কেয়ার সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল’য়ের পুষ্টিবিদ ও খাদ্য পরিকল্পক আশিস রানি বর্ষাকালে সামুদ্রিক খাবার খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, “সামুদ্রিক খাবার পুষ্টিকর, প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর। এগুলো স্বাস্থ্য, মস্তিষ্ক, দৃষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে। কিন্তু বর্ষাকালে সামুদ্রিক খাবার বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।”
পানি দূষণ: বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি চারপাশ ধুয়ে নিয়ে নদী, খাল ও সমুদ্রে পড়ে। ফলে দেখা দিতে পারে পানি দূষণ। মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী এই সময়ে দূষিত হয় এবং মানুষ তা খাবার হিসেবে খাওয়ার ফলে ক্ষতিকারক উপাদান মানব দেহে প্রবেশ করে নানান রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
মার্কারি বা পারদ বিষাক্ততা: সামুদ্রিক খাবার খাওয়ার আরেকটি ঝুঁকির দিক হল পারদ বিষক্রিয়া। পারদ এমন একটা বিষাক্ত ভারী ধাতু যা মাছ ও সামুদ্রিক খাবারের কোষে জমা বাঁধে। বর্ষাকালে এর মাত্রা ওঠা-নামা করে। তাই এই মৌসুমে মাছ খাওয়ার বিষয়ে বাড়তি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
রানি বলেন, “দূষিত খাবার খাওয়ার ফলে দেহে টিউমার, মেজাজের পরিবর্তন, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও পেশির দুর্বলতা-সহ নানান রকমের বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।”
তাছাড়া, উচ্চ মাত্রায় পারদ গ্রহণ স্নায়ুবিক সমস্যা, বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের মাঝে দেখা দেয়।
পারিবেশিক দূষণকারী: পারদ ছাড়াও, সামুদ্রিক খাবার নানান রকম পারিবেশিক দূষণ যেমন- ‘পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইলস’য়ের মাধ্যমে দূষিত হতে পারে; যা মাছের কোষে প্রবেশের মাধ্যমে মানব দেহে যেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়।
অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া: অনেকের নির্দিষ্ট কিছু মাছ বা সামুদ্রিক খাবারে অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা থাকে। বর্ষায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল থাকায় এমন অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বেশি দেখা দেয়।
রানি বলেন, “সামুদ্রিক খাবারের অ্যালার্জি মৃদু থেকে গুরুতর হতে পারে। এর ফলে ‘হাইভস’, চুলকানি, র্যাশ, মুখ ঠোঁট জিহ্বা বা গলা ফোলা, শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি দেখা দিতে পারে।”
তাই অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে অ্যালার্জেন সমৃদ্ধ খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত।
পরজীবীর সংক্রমণ: বর্ষাকালে পরিজীবীর সংক্রমণ বাড়ে। ‘ট্যাপওয়ার্ম’, ‘রাউন্ডওয়ার্ম’ ও ‘ফ্লাক্স’য়ের মতো পরজীবী মাছ ও সামদ্রিক খাবারে সংক্রমণ বাড়াতে পারে। ফলে হজমে জটিলতা, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
সঠিক উপায়ে রান্না করা মাছ বা সামুদ্রিক খাবারে এর মাত্রা কিছুটা কম থাকে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
এসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াও নির্দিষ্ট সামুদ্রিক মাছ যেমন- টুনা, ম্যাকারেল ও মাহি মাহি মাছ উচ্চ হিস্টামিন সমৃদ্ধ যা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
হিস্টামিনের বিষক্রিয়ার কয়েকটি লক্ষণ হল- ঘাম, মাথা ব্যথা বা বুক ধড়ফড় করার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঝুঁকি কমানোর উপায়
বর্ষাকালে সামুদ্রিক মাছের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কমাতে বিশ্বস্ত উৎস ও উচ্চ মানের তাজা সামুদ্রিক খাবার বেছে নিতে হবে। ক্ষতির মাত্রা কমাতে ভালো মতো রান্না করতে হবে।
কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।