আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউরোপে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, আধুনিক কুকুরের প্রজাতির মস্তিষ্ক প্রাচীন জাতের তুলনায় বড়। আধুনিক এবং প্রাচীন উভয় কুকুরের মস্তিষ্কের আকার নিয়ে গবেষণা করা হয়। এতে বলা হয়েছে, কুকুরের মস্তিষ্ক প্রজাতি ভেদে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে একটি নির্দিষ্ট জাতের কুকুর বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক সমাজের অংশ হতে পারে বলে ধারণা করছেন গবেষণা দলের সদস্যরা।
গবেষণা দলের ভাষ্যমতে, কুকুরের বিবর্তনীয় পরিবর্তন মূলত আধুনিক সামাজিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য। ফলে কুকুরের এই বিবর্তনের কৃতিত্ব আধুনিক কুকুরের বসবাসের জটিল সামাজিক পরিবেশ। মূলত মানুষের সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধির জন্য এমন ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা।
ইএলটিই ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজির ইথোলজি বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এনিকো কুবিনি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন: ‘গবেষণার ফলে দেখা যাচ্ছে, আধুনিক কুকুরের প্রজনন প্রাচীন জাতের তুলনায় মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে হয়েছে। তবে আমরা এর প্রকৃত কারণ জানতে পারিনি। আমরা এসব প্রজাতির কাজ বা জীবন ইতিহাসের বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর ভিত্তি করে এটি ব্যাখ্যা করতে পারিনি। তাই আমরা শুধু কারণগুলো সম্পর্কে অনুমান করতে পারি।’
অর্থাৎ মস্তিষ্ক বড় হওয়া নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনো গবেষকদের কাছে নেই। কিছু অনুমানের ভিত্তিতে এই পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করেছেন তারা।
কুবিনি আরো বলেন, আমাদের গবেষণায় এসেছে কুকুরের মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। কুকুর নেকড়ে বা এ জাতীয় প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে বলে মনে করা হয়। এ জন্য আমরা নেকড়ের মস্তিষ্কের সঙ্গে কুকুরের মস্তিষ্কের তুলনা করেও মস্তিষ্ক বৃদ্ধির প্রমাণ পেয়েছি।
গবেষণায় হাঙ্গেরি ও সুইডেনের একদল বিজ্ঞানী সিটি স্ক্যান করা ১৫৯ জাতের ৮৫০টি কুকুরের মস্তিষ্ক এবং সেগুলোর আকার পরীক্ষা করেন। এরপর সেগুলোকে ৪৮ প্রজাতির নেকড়ের মস্তিষ্কের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখেন। গবেষকেরা দেখতে পান, নেকড়ের সমান ওজনের একটি কুকুরের মস্তিষ্ক সেই নেকড়ের মস্তিষ্কের তিন-চতুর্থাংশ। এটি এখন পর্যন্ত অতীতের এক গবেষণার তথ্যের সত্যতা দেয়।
ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, গৃহপালিত হলে প্রাণীর মস্তিষ্কের আকার ২০ শতাংশ কমে। কারণ প্রাণীদের আর নিজের খাবারের জন্য শিকার করা বা শিকারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার প্রয়োজন হয় না। বন্য প্রাণীদের মতো ততটা বিপদের মুখোমুখি হতে হয় না। কিন্তু কুকুরের ক্ষেত্রে বরং উল্টো হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে গৃহপালিত হলেও নেকড়ে থেকে বিবর্তনের পর থেকে যত সময় গড়াচ্ছে আর যত প্রজনন হচ্ছে, ততই বড় হচ্ছে কুকুরের মস্তিষ্ক।
গবেষক এনিকো কুবিনি বলেন, জটিল সামাজিক পরিবেশ, নগরায়ন এবং আরও নিয়মের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বাধ্য হওয়া এই পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। সমস্ত আধুনিক জাতকেই বিষয়গুলো প্রভাবিত করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গবেষণায় বলা হয়েছে, মাথার খুলির আকৃতি, দীর্ঘায়ু কিংবা কুকুর ছানার আকারের সাথে আপেক্ষিক মস্তিষ্কের আকারের কোন সম্পর্ক নেই।
গবেষকেরা বিশ্বাস করেন, প্রাচীন কুকুর স্বাধীন ছিল এই তথ্যকে আরও জোরদার করেছে তাদের অনুসন্ধানের ফলাফল।
স্টকহোম ইউনিভার্সিটির নিকলাস কোলম বলেন, বিভিন্ন কুকুর পৃথক সামাজিক জটিলতার মধ্যে বাস করে এবং জটিল কাজগুলো সম্পাদন করে, যার জন্য সম্ভবত একটি বড় মস্তিষ্কের ক্ষমতা প্রয়োজন। অতএব, আমাদের ধারণা, কুকুরের প্রজাতির মধ্যে মস্তিষ্কের ওপর চাপ পরিবর্তিত হতে পারে। নেকড়ে থেকে তাদের বিবর্তনের সময়কাল কিংবা কাজ সম্পাদনের ভিন্নতার মধ্যে মস্তিষ্কের আকারের পার্থক্য থাকতে পারে।
সাধারণত, গৃহপালিত প্রাণীদের মস্তিষ্ক বন্য সমকক্ষের তুলনায় ছোট, কিন্তু আধুনিক কুকুররা সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে আনছে বলে ধারণা দিচ্ছে বিজ্ঞানীদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।