প্রিয় ভ্রমণপিপাসু বন্ধুরা, ছোট্ট এই পৃথিবীর বুকে নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতি আর অজানা রাস্তার টানে আমাদের মন কতবারই না উড়াল দিয়েছে! কে না চায় আল্পসের তুষারাবৃত চূড়া দেখতে, সাহারার রহস্যময় বালুরাশির বুকে দাঁড়াতে, কিংবা ইউরোপের জাদুকরী শহরগুলোর রাস্তায় হারিয়ে যেতে? কিন্তু এই স্বপ্নযাত্রাকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলেই সামনে আসে নানা প্রশ্ন, কিছুটা দুশ্চিন্তা। মনে হয় না কি – পাসপোর্ট ঠিক আছে তো? ভিসা কীভাবে পাব? অসুস্থ হলে কী করব? টাকা নিয়ে কীভাবে যাব? বিদেশ ভ্রমণের আগে করণীয় বিষয়গুলো জানা না থাকলে এই উত্তেজনা সহজেই পরিণত হতে পারে উদ্বেগে। চিন্তা করবেন না, আজকের এই গাইড আপনাকে নিয়ে যাবে সেই জরুরি প্রস্তুতির ভেতর দিয়ে, যেখানে প্রতিটি ধাপ পরিষ্কার, প্রতিটি পরামর্শ নির্ভরযোগ্য। এই লেখাটি শুধু তথ্য দেবে না, আপনার সেই স্বপ্নের যাত্রাকে করবে আরও নিশ্চিন্ত, আরও আনন্দময়।
বিদেশ ভ্রমণের আগে করণীয়: অপরিহার্য কাগজপত্রের প্রস্তুতি (ভিসা, পাসপোর্ট ও অন্যান্য)
বিদেশ ভ্রমণের আগে করণীয় এর তালিকায় প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ব্যবস্থা করা এবং সেগুলো যাচাই করে নেওয়া। এই কাগজপত্র ছাড়া আপনি বিমানবন্দর থেকেই ফিরে আসতে বাধ্য হতে পারেন। মনে রাখবেন, ভুল বা অসম্পূর্ণ ডকুমেন্টেশনের কারণে আপনার পুরো ট্রিপটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- পাসপোর্ট: আপনার বিশ্ব পরিচয়পত্র: এটি আপনার ভ্রমণের ভিত্তিপ্রস্তর। নিশ্চিত করুন:
- মেয়াদ: পাসপোর্টের মেয়াদ ভ্রমণ শেষে ফেরার তারিখের কমপক্ষে ছয় মাস অবশিষ্ট আছে কিনা। অনেক দেশই এই নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলে। (উৎস: বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিস)
- ফাঁকা পৃষ্ঠা: ভিসা স্ট্যাম্প এবং ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্পের জন্য পর্যাপ্ত ফাঁকা পৃষ্ঠা (সাধারণত কমপক্ষে ২-৪টি) আছে কিনা দেখুন।
- অবস্থা: পাসপোর্টটি কোনোভাবে ছেঁড়া, পানিতে ভিজে নষ্ট, বা গুরুত্বপূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নয় তো? এমন হলে অবিলম্বে নবায়ন করুন।
- ফটোকপি ও ডিজিটাল ব্যাকআপ: পাসপোর্টের তথ্য পাতা এবং বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ভিসা পৃষ্ঠার কয়েক সেট ক্লিন ফটোকপি তৈরি করুন। একটি সেট নিজের ব্যাগে (পাসপোর্টের থেকে আলাদা স্থানে), একটি সেট আপনার বাড়িতে রেখে দিন এবং একটি সেট বিশ্বস্ত কোনো আত্মীয়ের কাছে রাখুন। পাসপোর্টের স্ক্যান কপি নিজের ইমেইলে সংরক্ষণ করুন এবং ক্লাউড স্টোরেজে (Google Drive, iCloud) আপলোড করুন। হারিয়ে গেলে এটি অত্যন্ত সহায়ক হবে।
- ভিসা: প্রবেশের চাবিকাঠি: আপনার গন্তব্য দেশে প্রবেশের অনুমতিই হলো ভিসা। বিদেশ ভ্রমণের আগে করণীয় এর মধ্যে এটি সবচেয়ে সময়সাপেক্ষ এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটি।
- ভিসার ধরন নির্ধারণ: আপনি কী উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন? পর্যটন, ব্যবসা, পড়াশোনা, চিকিৎসা নাকি কাজ? প্রতিটি উদ্দেশ্যের জন্য আলাদা ভিসা প্রয়োজন হয়। সঠিক ভিসার জন্য আবেদন করুন।
- আবেদন প্রক্রিয়া: অধিকাংশ দেশের ভিসা আবেদন এখন অনলাইন ভিত্তিক। সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ আবেদন পদ্ধতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা, ফি এবং প্রক্রিয়াকরণের সময় জেনে নিন। যেমন: ইউরোপের Schengen ভিসার জন্য VFS Global Bangladesh বা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের সাইট। সাবধান! ফিশিং বা প্রতারণামূলক ওয়েবসাইট থেকে দূরে থাকুন। সবসময়
.gov
বা.org
ডোমেইন বা দূতাবাসের সরাসরি লিঙ্ক ব্যবহার করুন। - প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: সাধারণত প্রয়োজন হয়:
- ভর্তি হওয়া আবেদন ফর্ম
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি
- বৈধ পাসপোর্ট (মেয়াদসহ)
- ফ্লাইট বুকিং (কখনো কখনো টিকিট না, শুধু রাউন্ড ট্রিপ বুকিং)
- হোটেল বুকিং বা থাকার ঠিকানা প্রমাণ
- আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, পে-স্লিপ, আয়কর রিটার্নের কপি)
- কর্মসংস্থান বা ছাত্রত্বের প্রমাণপত্র (নিয়োগপত্র, ছুটির অনুমতিপত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র)
- ভ্রমণ বীমা (বিশেষ করে ইউরোপের Schengen এরিয়ার জন্য বাধ্যতামূলক)
- সাক্ষাৎকার: কিছু দেশের জন্য ভিসা সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন হয়। প্রস্তুত হয়ে যান, সৎ ও আত্মবিশ্বাসী উত্তর দিন। আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করুন।
- প্রক্রিয়াকরণের সময়: ভিসা পেতে অন্তত ১৫ থেকে ৪৫ দিন, কখনো কখনো আরও বেশি সময় লাগতে পারে। তাই যথাসম্ভব আগে আবেদন করুন। শেষ মুহূর্তের আবেদন চাপ বাড়ায় এবং প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ভিসা পাওয়ার পর: ভিসা স্টিকার বা ই-ভিসা পেয়ে গেলেই শুধু খুশি হবেন না। সতর্কতার সাথে সব তথ্য (নাম, পাসপোর্ট নম্বর, ভ্রমণের তারিখ, ভিসার মেয়াদ) ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করুন। সামান্য ভুলও বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।
- অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র:
- আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট (IDP): যদি আপনি বিদেশে গাড়ি চালানোর পরিকল্পনা করেন, তাহলে বাংলাদেশ অটোমোবাইল সমিতি (বিআরটিএ) থেকে আইডিপি সংগ্রহ করুন। আপনার বাংলাদেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স অবশ্যই বৈধ থাকতে হবে।
- জন্ম সনদ/বিবাহ সনদ: পরিবারের সাথে ভ্রমণ করলে, বিশেষ করে সন্তানদের সাথে, তাদের জন্ম সনদ এবং আপনার সাথে সম্পর্ক প্রমাণের জন্য বিবাহ সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়) ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোটারাইজড কপি সঙ্গে রাখুন। ইমিগ্রেশনে জিজ্ঞাসা করা হতে পারে।
- হোস্টের আমন্ত্রণপত্র: যদি বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়িতে থাকেন, তাহলে তাদের কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র এবং তাদের পরিচয়পত্র/নাগরিকত্বের কপি সঙ্গে রাখুন।
- ভ্রমণ ইতিবৃত্তান্ত (Itinerary): আপনার ফ্লাইট, হোটেল, ট্যুর বুকিং, ভ্রমণ পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ ছাপিয়ে নিন বা ডিজিটালি সংরক্ষণ করুন। এটি ইমিগ্রেশন অফিসারকে বুঝতে সাহায্য করবে আপনি সত্যিই পর্যটক।
📌 অভিজ্ঞতা থেকে বলছি: একবার ইতালির বিমানবন্দরে দেখলাম, এক ভাইয়ের পাসপোর্টের মেয়াদ ফেরার তারিখের মাত্র ৫ মাস ২০ দিন বাকি ছিল। Schengen নিয়ম অনুযায়ী ৬ মাস বাধ্যতামূলক। তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে শেষ পর্যন্ত ফেরত পাঠানো হলো। হাজার টাকার টিকিট, হোটেল বুকিং, স্বপ্নভঙ্গ – শুধু একটি ছোট্ট ভুলের কারণে। তাই এই ধাপগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা কখনোই ফেলো না।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বীমা: অসুস্থতার সময় যেন আর্থিক বা শারীরিক বিপদ না আসে
বিদেশ ভ্রমণের আগে করণীয় এর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো আপনার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রস্তুতি। বিদেশে অসুস্থ হওয়া বা দুর্ঘটনার শিকার হওয়া কারও কাম্য নয়, কিন্তু প্রস্তুতি না থাকলে এই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
- প্রয়োজনীয় টিকা (Vaccinations): বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন ধরনের টিকা বাধ্যতামূলক বা অত্যন্ত সুপারিশকৃত হয়। এটি শুধু আপনাকে সুরক্ষিত করবে না, অনেক দেশে নির্দিষ্ট টিকা ছাড়া প্রবেশই নিষিদ্ধ।
- সর্বজনীন: হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি, টাইফয়েড, টিটেনাস-ডিপথেরিয়া (Tdap), হাম-মাম্পস-রুবেলা (MMR) টিকা সাধারণত সব ভ্রমণকারীর জন্য আপডেট থাকা উচিত। (উৎস: CDC Travel Health)
- গন্তব্যভিত্তিক: ইয়েলো ফিভার (আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশের জন্য বাধ্যতামূলক), মেনিনজাইটিস (সৌদি আরব হজ/ওমরাহ যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক), জাপানিজ এনসেফালাইটিস, কলেরা, র্যাবিস (বিশেষ পরিস্থিতিতে) ইত্যাদি প্রয়োজন হতে পারে।
- কোথায় পাবেন: ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলার্স ক্লিনিক (মোহাম্মদপুর), আইইডিসিআর, বা বড় বড় প্রাইভেট হাসপাতালের ট্রাভেল ক্লিনিকে গিয়ে আপনার গন্তব্য দেশের জন্য প্রযোজ্য টিকার তালিকা জেনে নিন এবং সময়মত টিকা নিশ্চিত করুন। কিছু টিকার (যেমন ইয়েলো ফিভার) জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত “ইয়েলো ফিভার সার্টিফিকেট” দেওয়া হয়, যা সঙ্গে রাখতে হবে।
- করোনাভাইরাস (COVID-19): অনেক দেশ এখনও টিকার পূর্ণ ডোজ বা বুস্টার ডোজের প্রমাণ চায়। সংশ্লিষ্ট দেশের স্বাস্থ্যবিধি ও দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ নিয়ম জেনে নিন।
- ভ্রমণ স্বাস্থ্যবিমা (Travel Health Insurance): এটি কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একান্ত প্রয়োজন! বিদেশ ভ্রমণের আগে করণীয় এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর একটি। বিদেশে চিকিৎসার খরচ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হতে পারে। একটি ছোট অপারেশন বা দুর্ঘটনায় লাখ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।
- কেন প্রয়োজন?
- আকস্মিক অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার চিকিৎসা খরচ কভার করে।
- জরুরি মেডিকেল ইভাকুয়েশন (প্রয়োজনে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে বা উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর)।
- চিকিৎসাজনিত কারণে ভ্রমণ বাতিল বা বিলম্বের ক্ষতিপূরণ।
- দন্ত চিকিৎসার জরুরি খরচ (সীমিত)।
- মৃত্যু বা স্থায়ী পঙ্গুত্বের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ।
- কী দেখে কিনবেন?
- কভারেজের পরিমাণ: চিকিৎসা খরচের সর্বোচ্চ সীমা কত? কমপক্ষে ৫০,০০০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি কভারেজ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে।
- গন্তব্য দেশ: আপনার গন্তব্য দেশ পলিসিতে অন্তর্ভুক্ত কিনা নিশ্চিত করুন।
- পূর্ব-বিদ্যমান রোগ: আপনার যদি কোনো ক্রনিক রোগ (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অ্যাজমা ইত্যাদি) থাকে, তাহলে সেটা পলিসিতে ডিক্লেয়ার করুন এবং দেখুন তা কভার হয় কিনা। না ডিক্লেয়ার করলে ক্লেইম প্রত্যাখ্যাত হতে পারে।
- বীমার মেয়াদ: আপনার ভ্রমণের পুরো সময়কাল (দেশ ত্যাগ থেকে দেশে ফেরা পর্যন্ত) কভার করছে তো?
- দাবি প্রক্রিয়া: জরুরি অবস্থায় যোগাযোগের নম্বর, কীভাবে দাবি করতে হবে, প্রি-অথোরাইজেশন লাগে কিনা জেনে নিন।
- প্রদানকারী: বিশ্বস্ত এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বীমা কোম্পানি (যেমন: BIMA, Green Delta Insurance, Pragati, MetLife, Tune Protect) থেকে পলিসি কিনুন। তাদের ওয়েবসাইট বা এজেন্টের মাধ্যমে কিনতে পারেন। (উদাহরণ: BIMA Bangladesh Travel Insurance)
- পলিসি ডকুমেন্ট: বীমা পলিসির একটি হার্ড কপি এবং ডিজিটাল কপি সঙ্গে রাখুন। জরুরি হেল্পলাইন নম্বর ফোনে সেভ করে রাখুন।
- কেন প্রয়োজন?
- ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য প্রস্তুতি:
- চিকিৎসকের পরামর্শ: বিদেশ যাওয়ার আগে আপনার নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন, বিশেষ করে যদি কোনো ক্রনিক রোগ থাকে। তার কাছ থেকে আপনার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ (Medical Summary) এবং বর্তমান ওষুধের তালিকা ইংরেজিতে নিয়ে নিন।
- ঔষধের প্রস্তুতি: আপনি যেসব নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, পুরো ভ্রমণকালীন সময়ের চেয়ে কিছু অতিরিক্ত ওষুধ সঙ্গে নিন (যাতে হারিয়ে গেলে বা ভ্রমণ দীর্ঘায়িত হলে সমস্যা না হয়)। ওষুধের বাক্সে প্রেসক্রিপশন লেবেল থাকা উচিত। প্রেসক্রিপশন বা ডাক্তারের চিঠিও সঙ্গে রাখুন। কিছু দেশে নির্দিষ্ট ওষুধ নিয়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রিত (যেমন মাদকাসক্তি সংশ্লিষ্ট ওষুধ) – আগে জেনে নিন।
- প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স: ছোট একটি ফার্স্ট এইড কিট সঙ্গে রাখুন যাতে থাকবে: ব্যান্ড-এইড, অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম/লোশন, পেইন কিলার (প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন), পেট খারাপের ওষুধ, অ্যান্টিহিস্টামিন (অ্যালার্জির জন্য), মশা প্রতিরোধক ক্রিম/স্প্রে, সানস্ক্রিন, রি-হাইড্রেশন সল্ট (ORS) প্যাকেট, ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় ওষুধ (যেমন অ্যাস্থমা ইনহেলার)।
- স্বাস্থ্য সচেতনতা: গন্তব্য দেশের সাধারণ স্বাস্থ্য ঝুঁকি (খাবার-পানির পানি, স্থানীয় রোগ) সম্পর্কে জেনে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিন।
📖 তথ্যসূত্র ও কর্তৃত্ব: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা, এবং যুক্তরাষ্ট্রের CDC-এর ট্রাভেল হেলথ গাইডলাইনস এই বিভাগের তথ্যের ভিত্তি। সর্বশেষ আপডেটের জন্য এসব অফিসিয়াল সাইট চেক করুন।
অর্থ ও যোগাযোগ: টাকা ও কানেক্টিভিটির স্মার্ট সমাধান
বিদেশ ভ্রমণের আগে করণীয় এর তৃতীয় স্তম্ভে আমরা আলোচনা করব কিভাবে স্মার্ট উপায়ে টাকা ব্যবস্থাপনা করবেন এবং বিদেশে থাকাকালীন কীভাবে সহজে ও সাশ্রয়ীভাবে যোগাযোগ রক্ষা করবেন।
- টাকা ব্যবস্থাপনা: এক ডালে সব ডিম নয়:
- বিভিন্ন উৎস ব্যবহার করুন: সমস্ত অর্থ এক মাধ্যম (শুধু ক্যাশ বা শুধু কার্ড) বা এক জায়গায় (শুধু ওয়ালেটে) রাখা বিপজ্জনক। নিচের কম্বিনেশন ভালো:
- ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড: (Visa/Mastercard নেটওয়ার্কের) এটি সবচেয়ে সুবিধাজনক। ATM থেকে স্থানীয় মুদ্রা উত্তোলন এবং দোকানে পেমেন্টের জন্য ব্যবহার করুন। নিশ্চিত করুন: কার্ডটি বিদেশে ব্যবহারের জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল’ বা ‘অভ্রান্ত’ মোডে ‘অন’ আছে, PIN নম্বর মনে আছে, এবং মেয়াদ শেষ হচ্ছে না। কার্ড কোম্পানিকে ভ্রমণের তারিখ ও গন্তব্য দেশ জানিয়ে দিন (কার্ড ব্লক এড়াতে)। (উৎস: আপনার ব্যাংকের গ্রাহক সেবা)।
- ফরেক্স কার্ড (আন্তর্জাতিক প্রিপেইড কার্ড): এতে আগে থেকেই নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা লোড করা যায়। হারানো বা চুরি হলে মূল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ থাকে। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক ও ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন এটি দেয় (যেমন: Brac Bank Travel Card, Eastern Bank Travel Card, সিটি ব্যাংক ট্রাভেল কার্ড)।
- ক্যাশ (নগদ অর্থ): কিছু পরিমাণ স্থানীয় মুদ্রার নগদ সঙ্গে রাখা ভালো, বিশেষ করে ছোট খরচ, টিপিং, বা যেসব জায়গায় কার্ড নাও চলে। বাংলাদেশে বৈধ ফরেক্স এক্সচেঞ্জার থেকে গন্তব্য দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করুন। রসিদ রাখুন। সতর্কতা: বেশি ক্যাশ সঙ্গে রাখবেন না। হোটেল সেফ ব্যবহার করুন।
- ট্রাভেলার্স চেক: আগে জনপ্রিয় ছিল, এখন তুলনামূলক কম ব্যবহৃত হয়।
- বাজেট তৈরি করুন: ভ্রমণের আনুমানিক খরচ (বাসস্থান, খাবার, পরিবহন, এন্ট্রি ফি, শপিং) হিসাব করুন এবং তার চেয়ে ১০-১৫% বেশি টাকার ব্যবস্থা রাখুন জরুরি প্রয়োজনের জন্য। ট্র্যাকিং অ্যাপ (যেমন TrabeePocket, Tripcoin) ব্যবহার করে খরচের হিসাব রাখতে পারেন।
- অতিরিক্ত জরুরি তহবিল: পরিবারের কারো কাছ থেকে বা নিজের অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে জরুরি অবস্থায় দ্রুত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা রাখুন (যেমন Western Union, MoneyGram, বা ব্যাংক ওয়্যার ট্রান্সফার)। এই তথ্যগুলো (রিসিভারের নাম, ঠিকানা, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট) সঙ্গে রাখুন।
- বিভিন্ন উৎস ব্যবহার করুন: সমস্ত অর্থ এক মাধ্যম (শুধু ক্যাশ বা শুধু কার্ড) বা এক জায়গায় (শুধু ওয়ালেটে) রাখা বিপজ্জনক। নিচের কম্বিনেশন ভালো:
- যোগাযোগ: কানেক্টেড থাকুন:
- মোবাইল ফোন:
- রোমিং: বাংলাদেশী সিম দিয়ে বিদেশে রোমিং চালু করা খুবই ব্যয়বহুল। শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনের জন্য বিবেচনা করুন।
- স্থানীয় সিম কার্ড: সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকরী সমাধান। গন্তব্য দেশের বিমানবন্দর বা শহরে পৌঁছে স্থানীয় অপারেটরের প্রিপেইড সিম কার্ড কিনুন। পাসপোর্ট লাগতে পারে। ডাটা প্যাকেজ নিলে Google Maps, অনুবাদ অ্যাপ, যোগাযোগ – সবই সহজ হবে। (যেমন: থাইল্যান্ডে AIS/DTAC/True, মালয়েশিয়ায় Celcom/Digi, তুরস্কে Turkcell/Vodafone TR)।
- ইন্টারন্যাশনাল eSIM: যদি আপনার ফোন eSIM সাপোর্ট করে (নতুন iPhone, Samsung, Pixel মডেলগুলো), তাহলে Airalo, Holafly, Nomad এর মতো অ্যাপ থেকে গন্তব্য দেশের জন্য ডাটা প্ল্যান কিনে ভার্চুয়াল সিম (eSIM) অ্যাক্টিভেট করে নিতে পারেন। বিমানবন্দরেই ডাটা পেয়ে যাবেন! খুবই সুবিধাজনক। (উদাহরণ: Airalo)
- Wi-Fi Calling: যদি আপনার ফোন এবং বাংলাদেশী অপারেটর Wi-Fi Calling সাপোর্ট করে, তাহলে বিদেশে Wi-Fi থাকলে বাংলাদেশী নম্বরেই (অতিরিক্ত খরচ ছাড়া) কল রিসিভ ও মিস কল দেখতে পাবেন। কিন্তু আউটগোয়িং কল বা এসএমএস খরচ পড়তে পারে। সেটিংস চেক করুন।
- ইন্টারনেট ও অ্যাপস:
- অফলাইন ম্যাপ: Google Maps-এ গন্তব্য শহরের অফলাইন ম্যাপ আগেই ডাউনলোড করে রাখুন। ইন্টারনেট না থাকলেও নেভিগেট করতে পারবেন।
- অনুবাদ অ্যাপ: Google Translate অ্যাপ ডাউনলোড করুন। অফলাইন ভাষা প্যাক ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। রিয়েল-টাইম ক্যামেরা ট্রান্সলেশন খুব কাজের!
- যোগাযোগ অ্যাপ: WhatsApp, Viber, Messenger, Skype – এই অ্যাপগুলো দিয়ে ফ্রি বা স্বল্প খরচে কল/ভিডিও কল/মেসেজ করা যায়। পরিবারের সবার সাথে আগেই কোন অ্যাপে কানেক্ট থাকবেন ঠিক করুন।
- ভ্রমণ অ্যাপ: Google Trips (বা Google Travel), TripIt – এগুলোতে ভ্রমণ ইতিবৃত্তান্ত, বুকিং, গুরুত্বপূর্ণ নোট সংরক্ষণ করা যায়।
- জরুরি যোগাযোগ তথ্য:
- বাংলাদেশ দূতাবাস/হাইকমিশন: গন্তব্য দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস বা হাইকমিশনের ঠিকানা, ফোন নম্বর, জরুরি হেল্পলাইন নম্বর নোট করুন। (উৎস: বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়)।
- ভ্রমণ বীমা জরুরি হেল্পলাইন নম্বর।
- স্থানীয় জরুরি নম্বর (পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস – যেমন ইউরোপে 112, আমেরিকায় 911)।
- পরিবারের সদস্য/বন্ধুর যোগাযোগের নম্বর (স্থানীয় ও বাংলাদেশী উভয়টি)।
- মোবাইল ফোন:
💡 টিপ: একটি ছোট নোটবুক বা ফোনের নোটস অ্যাপে সব জরুরি নম্বর, ঠিকানা, পলিসি নম্বর, পাসপোর্ট নম্বরের শেষ চার ডিজিট লিখে রাখুন। ফোন হারিয়ে গেলেও এই তথ্যগুলো হাতে থাকবে।
নিরাপত্তা, প্যাকিং ও শেষ মুহূর্তের চেকলিস্ট: শান্তিতে যাত্রা শুরু করুন
বিদেশ ভ্রমণের আগে করণীয় এর চূড়ান্ত ধাপে আমরা আপনাকে নিয়ে যাব নিরাপত্তা সচেতনতা, স্মার্ট প্যাকিং এবং সেই অতি জরুরি শেষ মুহূর্তের চেকলিস্টে, যাতে কোন কিছুই বাদ না পড়ে।
- নিরাপত্তা সতর্কতা: সচেতনতাই সুরক্ষা:
- গন্তব্য দেশ সম্পর্কে জানুন: যাচ্ছেন সেই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অপরাধ প্রবণতা, সাধারণ প্রতারণার পদ্ধতি (পিকপকেটিং, ট্যাক্সি স্ক্যাম, ফোন স্ক্যাম), কোন এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে, স্থানীয় আইন ও রীতিনীতি (পোশাক, আচরণ) সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি এবং যুক্তরাজ্যের FCDO ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি চেক করুন।
- দুর্গম এলাকা: বিশেষ করে একা ভ্রমণকারী নারী বা পরিবার হলে, রাতের বেলা বা জনবিরল/অপরিচিত এলাকায় যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- মূল্যবান জিনিস: মূল্যবান গহনা, অতিরিক্ত নগদ টাকা, অযথা মূল্যবান ডকুমেন্ট (মূল শিক্ষাগত সনদ, জমির দলিল) সঙ্গে নেবেন না। যা নেবেন, তা হোটেল সেফে রাখুন। পাসপোর্টের ফটোকপি সাধারণত যথেষ্ট।
- পিকপকেটিং: ভিড়ের মধ্যে সতর্ক থাকুন। ব্যাকপ্যাক সামনে নিয়ে হাঁটুন। মানিব্যাগ প্যান্টের সামনের পকেটে রাখুন। চেইন/ক্লিপ লাগানো মানিব্যাগ ব্যবহার ভালো।
- ডকুমেন্টের কপি: সব গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের (পাসপোর্ট, ভিসা, বীমা, আইডি) ফটোকপি বা স্ক্যান কপি সবসময় সঙ্গে রাখুন। মূল ডকুমেন্ট নিরাপদ স্থানে রাখুন।
- স্থানীয়দের সাথে আচরণ: বন্ধুত্বপূর্ণ কিন্তু সতর্ক থাকুন। অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না। অপরিচিত কারো দেওয়া খাবার/পানীয় সাবধানে গ্রহণ করুন।
- স্মার্ট প্যাকিং: হালকা এবং কার্যকরী:
- বৈধ ওজন ও সাইজ: আপনার এয়ারলাইনের কেবিন ব্যাগ ও চেকড ব্যাগের অনুমোদিত ওজন ও সাইজের সীমা জেনে নিন। ওভারওয়েটের জন্য প্রচুর জরিমানা দিতে হতে পারে। (উদাহরণ: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ব্যাগেজ পলিসি)।
- প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা: আগে থেকেই একটি তালিকা তৈরি করুন। ঋতু ও গন্তব্য অনুযায়ী পোশাক নিন। ভুলে যাবেন না:
- জুতা (আরামদায়ক হাঁটার জুতা অত্যাবশ্যক)
- টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, প্রয়োজনীয় টয়লেট্রিজ (ছোট সাইজে/ট্রাভেল সাইজে)
- পাওয়ার অ্যাডাপ্টার (গন্তব্য দেশের সকেট টাইপের সাথে মিলছে কিনা দেখুন, যেমন ইউরোপে Type C/F, UK তে Type G)
- পাওয়ার ব্যাংক (ফ্লাইটে কেবিন ব্যাগে রাখুন, চেকড ব্যাগে নয়)
- রেইন জ্যাকেট/ছাতা
- রি-ইউজেবল ওয়াটার বোতল
- সানগ্লাস, টুপি/ক্যাপ
- ছোট তোয়ালে (কিছু হোস্টেলে দেওয়া হয় না)
- ছোট তালা (হোস্টেল লকারের জন্য)
- কী প্যাক করবেন না:
- তরল, জেল, এরোসল (১০০ml এর বেশি কেবিন ব্যাগে নেওয়া যায় না, সব চেকড ব্যাগে দিতে হবে)। সুরক্ষা বিধি জেনে নিন।
- ধারালো জিনিসপত্র (ছুরি, কাঁচি – চেকড ব্যাগে দিতে হবে)।
- অবৈধ বা নিষিদ্ধ দ্রব্য (স্থানীয় আইন চেক করুন)।
- অপ্রয়োজনীয় ভারী আইটেম।
- লেবেল লাগান: ব্যাগের বাইরে ও ভেতরে আপনার নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ও বাংলাদেশের ঠিকানা লিখে রাখুন।
- বিদেশ যাওয়ার আগের দিন ও বিমানবন্দরে করণীয় (চেকলিস্ট):
- ভ্রমণের ২৪ ঘণ্টা আগে:
- অনলাইন চেক-ইন (Web Check-in): বিমান কোম্পানির ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে অনলাইনে চেক-ইন করে বোর্ডিং পাস প্রিন্ট করে নিন বা মোবাইলে সেভ করুন। সিট নির্বাচন করে নিলে সুবিধা হয়। (যেমন: emirates.com, biman-airlines.com).
- ফ্লাইটের সময় ও টার্মিনাল: ফ্লাইটের সময়, টার্মিনাল নম্বর (ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নং বা ২ নং টার্মিনাল) ডাবল চেক করুন। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য সাধারণত অন্তত ৩ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হয়।
- ডকুমেন্টের পুর্নমিলন: পাসপোর্ট, ভিসা, বীমা, টিকিট, হোটেল বুকিং, টিকা সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য) – সব একসাথে গুছিয়ে রাখুন (একটি ফোল্ডারে/ডকুমেন্ট হোল্ডারে)। মূল ও ফটোকপি আলাদা।
- জরুরি নম্বর শেয়ার: পরিবারের সদস্যদের সাথে ফ্লাইট ডিটেইলস, হোটেলের ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর, বীমা তথ্য শেয়ার করুন।
- ব্যাগ প্যাকিং শেষ: ব্যাগ চেকলিস্ট মিলিয়ে শেষ করুন। ওজন মেপে নিন।
- ঘর সুরক্ষিত করুন: গ্যাস, পানির কল, বৈদ্যুতিক সুইচ বন্ধ আছে কিনা দেখুন। জানালা, দরজা ভালো করে লাগান। সম্ভব হলে বাড়ির চাবি বিশ্বস্ত কারো কাছে দিন।
- বিমানবন্দরে (হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর):
- সময়: ৩ ঘণ্টা আগে পৌঁছান। ভিড়, ট্রাফিক, সিকিউরিটি চেক – সময় নেয়।
- ডিপার্চার হল: আপনার ফ্লাইটের জন্য নির্ধারিত চেক-ইন কাউন্টারে যান (মনিটরে দেখুন)।
- চেক-ইন: পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট দেখিয়ে চেকড ব্যাগ জমা দিন। বোর্ডিং পাস নিন। চেকড ব্যাগের ট্যাগ চেক করুন (গন্তব্য ঠিক আছে তো?)।
- ইমিগ্রেশন: “ডিপার্চার” লাইনে দাঁড়ান। ইমিগ্রেশন অফিসারকে পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস দিন। কিছু প্রশ্ন (যাত্রার উদ্দেশ্য, থাকার ঠিকানা) জিজ্ঞাসা করতে পারেন। উত্তর দিন।
- সিকিউরিটি চেক: ব্যাগ স্ক্যান, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ব্যক্তিগত চেক। ইলেকট্রনিক্স (ল্যাপটপ, পাওয়ার ব্যাংক), বেল্ট, জুতা, জ্যাকেট আলাদা করুন। তরল (১০০ml এর ছোট বোতলে, স্বচ্ছ জিপলক ব্যাগে) বের করুন।
- ডিউটি ফ্রি: সময় থাকলে ব্রাউজ করুন। বাংলাদেশি টাকায় কেনাকাটা করতে পারেন (ডলার/ইউরোতে সাধারণত ভালো রেট)।
- বোর্ডিং গেট: মনিটরে আপনার ফ্লাইটের বোর্ডিং গেট নম্বর ও সময় দেখুন। নির্দিষ্ট সময়ে গেটে পৌঁছে বোর্ডিং পাস দেখিয়ে বিমানে উঠুন।
- ভ্রমণের ২৪ ঘণ্টা আগে:
🌐 অভিজ্ঞতা ও বিশ্বস্ততা: এই নির্দেশিকা তৈরি হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB), আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (IATA), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), এবং অসংখ্য অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীদের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে। তথ্যগুলো যতটা সম্ভব হালনাগাদ করা হয়েছে।
জেনে রাখুন (FAQs)
- প্রশ্ন: বিদেশ ভ্রমণের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কোনটি?
উত্তর: বিদেশ ভ্রমণের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (বৈধ পাসপোর্ট, সঠিক ভিসা) এবং পর্যাপ্ত কভারেজ সম্পন্ন ভ্রমণ স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিত করা। পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া আপনি প্রবেশই করতে পারবেন না। আর চিকিৎসা জরুরি অবস্থায় বীমা না থাকলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। এই দুটি জিনিস ঠিক থাকলে অন্য প্রস্তুতি অনেক সহজ হয়। - প্রশ্ন: ভিসা আবেদন করতে কত দিন সময় লাগে? আগে থেকে কী করণীয়?
উত্তর: ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় দেশভেদে ১৫ দিন থেকে ৬০ দিন বা তারও বেশি লাগতে পারে। Schengen ভিসা বা আমেরিকান ভিসার মতো কিছু ভিসার জন্য সময় বেশি লাগে। বিদেশ ভ্রমণের আগে করণীয় এর মধ্যে ভিসা আবেদনই সবচেয়ে আগে শুরু করুন। গন্তব্য দেশের দূতাবাস বা নির্ধারিত ভিসা প্রসেসিং সেন্টারের (যেমন VFS Global) অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের হালনাগাদ তালিকা ও আবেদন পদ্ধতি জেনে নিন। আর্থিক সামর্থ্য, থাকার ব্যবস্থা, বীমার প্রমাণপত্র আগে থেকেই গুছিয়ে রাখুন। শেষ মুহূর্তে আবেদন করা এড়িয়ে চলুন। - প্রশ্ন: বিদেশে সাশ্রয়ীভাবে ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উপায় কী?
উত্তর: বাংলাদেশী সিমের রোমিং খুবই ব্যয়বহুল। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো গন্তব্য দেশে পৌঁছে একটি স্থানীয় প্রিপেইড সিম কার্ড কেনা। বিমানবন্দরেই সাধারণত সিম বিক্রির কাউন্টার পাওয়া যায়। ডাটা সহ প্যাকেজ নিলে Google Maps, WhatsApp ব্যবহার করা সহজ হবে। আপনার ফোন eSIM সাপোর্ট করলে Airalo বা Holafly এর মতো সেবা থেকে ভার্চুয়াল সিম কিনে নিতে পারেন, যেটা বিমানবন্দরেই কাজ করা শুরু করবে। পাবলিক Wi-Fi ব্যবহারে সতর্ক থাকুন (ব্যক্তিগত তথ্য এড়িয়ে চলুন)। - প্রশ্ন: বিদেশে টাকা নিয়ে যাওয়ার সেরা উপায় কী? কত টাকা নেব?
উত্তর: একাধিক মাধ্যম ব্যবহার করুন। একটি ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড (Visa/Mastercard) এবং একটি আন্তর্জাতিক প্রিপেইড ট্রাভেল কার্ড মৌলিক চাহিদা মেটাবে। সঙ্গে কিছু স্থানীয় মুদ্রার নগদ রাখুন (জরুরি ও ছোটখাটো কাজের জন্য)। আপনার ভ্রমণের আনুমানিক ব্যয় (বাসস্থান, খাবার, চলাচল, এন্ট্রি ফি, শপিং) হিসাব করে তার চেয়ে ১০-১৫% বেশি টাকা বা সমতুল্য বিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থা রাখুন। সব টাকা এক জায়গায় বা এক ফর্মে রাখবেন না। - প্রশ্ন: বিদেশে অসুস্থ হলে বা জরুরি সমস্যায় কী করব?
উত্তর: প্রথমেই আপনার ভ্রমণ স্বাস্থ্যবিমা পলিসিতে দেওয়া জরুরি হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে নিকটস্থ স্বীকৃত হাসপাতাল/ক্লিনিকে পাঠাবে এবং প্রয়োজনে দাবি প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে। বাংলাদেশ দূতাবাস/হাইকমিশনের জরুরি যোগাযোগ নম্বরেও ফোন করতে পারেন। আপনার নিয়মিত ওষুধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ (ইংরেজিতে) সঙ্গে রাখুন। স্থানীয় জরুরি নম্বর (যেমন ইউরোপে ১১২) ডায়াল করুন। বীমা কোম্পানিকে প্রি-অথোরাইজেশন বা দাবি সম্পর্কে দ্রুত জানান। - প্রশ্ন: হজ বা ওমরাহ ভ্রমণের জন্য বিশেষ কী কী প্রস্তুতি নেব?
উত্তর: হজ বা ওমরাহ ভ্রমণে বাধ্যতামূলক টিকা (মেনিনজোকক্কাল মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন) প্রয়োজন এবং এর বৈধ সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বা হজ অফিস থেকে প্রাপ্ত গাইডলাইন ও নির্দেশিকা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। নির্ধারিত এজেন্টের মাধ্যমে ভ্রমণ নিশ্চিত করুন। প্রচণ্ড গরমের জন্য প্রস্তুতি (সাদা সুতির আরামদায়ক পোশাক, পানির বোতল, ছাতা, ORS) নিন। ধর্মীয় রীতিনীতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। বিশেষ হজ/ওমরাহ প্যাকেজের ভ্রমণ বীমা নিন। (উৎস: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ / বিমান বাংলাদেশ হজ ফ্লাইট)।
বিদেশ ভ্রমণ মানে শুধু বেড়ানো নয়, এটি নিজেকে চেনা, বিশ্বকে জানার এক অনন্য অভিযাত্রা। কিন্তু এই অভিযাত্রা তখনই সার্থক হয় যখন তা নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত হয়। আশা করি এই বিদেশ ভ্রমণের আগে করণীয় সংক্রান্ত জরুরি নির্দেশিকা আপনাকে সেই নিশ্চয়তা দেবে। মনে রাখবেন, পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ বীমা এবং স্থানীয় মুদ্রার নগদ বা কার্ড – এই চারটি জিনিস আপনার যাত্রার মূল ভিত্তি। একটু পরিকল্পনা, একটু সচেতনতা আর এই গাইডে দেওয়া ধাপগুলো অনুসরণ করলেই আপনি ঝামেলামুক্ত, আনন্দঘন সেই স্বপ্নযাত্রা উপভোগ করতে পারবেন। এবার নিশ্চিন্তে টিকিট কাটুন, ব্যাগ গোছান এবং অপেক্ষা করুন সেই মুহূর্তের, যখন আপনি নতুন এক দেশের মাটিতে পা রাখবেন। শুভ যাত্রা!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।