লাইফস্টাইল ডেস্ক : অতীতে, বিয়ে আকর্ষণীয়, আনন্দময় এবং সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতিনীতির অংশ ছিল। তবে আজকের দিনে, ভালোবাসা এবং সম্পর্কের পাশাপাশি একটি বিয়ের পেছনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্বও বাড়ছে। বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি কেন, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা যে বিষয়টিকে সামনে আনব তা হলো, এটি শুধু স্বাস্থ্যগত বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মানসিক, সামাজিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। বিয়েটে দুইজন মানুষের জীবন একত্রিত হয়, তাই তাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Table of Contents
বিয়ের প্রস্তুতি যখন শুরু হয়, তখন স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই স্বাস্থ্যের কথা ভাবা উচিত। শারীরিক, মানসিক এবং আবেগীয় দিকগুলো একত্রিত হওয়ার ফলে একজনের স্বাস্থ্য কিভাবে অন্যদের উপর প্রভাব ফেলে, তা বোঝা খুবই জরুরি। বিয়ের পরবর্তী সময়ে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জীবনে দীর্ঘকাল ধরে থাকবেন, তাই সম্পর্কটি যেন স্বাস্থ্যকর হয়, সেই দিকেও নজর রাখা উচিত।
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি কেন
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব অনেক গুণ। প্রথমত, স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করে যে উভয় পক্ষের শারীরিক স্বাস্থ্যের অবস্থা কী। কিছু রোগ যেমন হেপাটাইটিস, সিফিলিস এবং অন্য যৌন সংক্রমণজনিত রোগের জন্য স্ক্রীনিং করা হয়। এগুলি যদি এক ব্যক্তির মধ্যে থাকে, তবে তা সহজেই অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি।
দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেবল শারীরিক রোগ নির্ধারণের জন্য নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করা হয়। মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য যদি খানিকটা বিঘ্নিত হয়, তবে তা সম্পর্কের পরিবেশকে বিপদে ফেলতে পারে। উভয় পক্ষের মধ্যে পরস্পরের অনুভূতি ও চিন্তা বুঝতে সক্ষম হওয়া এবং একে অপরের সমর্থনে থাকা, একজন অন্যজনের মনের অবস্থার ওপরে জানান দিতে সক্ষম হয়।
শারীরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা
শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু রোগ যা সাধারণত খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা এবং পারিবারিক ইতিহাসের উপর নির্ভর করে, সেগুলি বিয়ের আগে পরীক্ষা করা উচিত। এই করোনাভাইরাসের যুগে আমাদের জন্য বিষয়গুলো আরো বেশি গুরুত্ব বহন করছে। যদি একজন ব্যক্তির রোগ নিশ্চিত হয়, তবে বিষয়টি অন্যের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করে।
বিয়ের আগে কী কী পরীক্ষা করা উচিত তা নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
রক্তের পরীক্ষা: নারীর জন্য রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়, যা পরবর্তী গর্ভাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষের জন্যও রক্তের সমস্যা নির্ধারণ করা দরকার যাতে তিনি তাঁর স্ত্রী বা সন্তানকে অতিরিক্ত ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে।
যৌন সংক্রমণজনিত রোগ তদন্ত: সিফিলিস, এইচআইভি এবং এনজিইটিভ পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। কেননা এসব রোগ পরবর্তীতে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হতে পারে।
সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা: সাধারণ শারীরিক পরীক্ষায় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বা হৃদরোগের সম্ভাবনা সবকিছু চিহ্নিত করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রত্যেকেই নিজেকে সুস্থ রাখতে সচেতন হতে পারে।
- মেটাবোলিক স্বাস্থ্য: ওজন, শারীরিক গঠন এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে আসা স্বাস্থ্য সমস্যা গুলো জানার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার।
এছাড়াও, অন্যান্য বিষয়গুলোর ওপর নজর দিতে হবে। যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে কোনো ব্যক্তির পরিবারে যদি ইতিমধ্যে ইতিহাস থাকে, তবে সেই সম্পর্কিত পরীক্ষাগুলো করাতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং বিয়ে
শারীরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক সমস্যার মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ, এবং সম্পর্কের সমস্যা প্রকাশ পায়। বিয়ের আগে একজনের মানসিক স্বাস্থ্য কেমন সেটা নিশ্চিত করা দরকার।
বর্তমানকালে, মানসিক স্বাস্থ্যকে অনেক মানুষ মনে করে অপ্রয়োজনীয় কিছু। কিছু মানুষ মনে করে যে এটি শুধুমাত্র দুর্বলতার চিহ্ন। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ব অংশ। একটি সম্পর্কের মধ্যে যদি একজন মানসিক ভাবে সুস্থ না থাকে, তবে সেটি অপেক্ষাকৃত সম্পর্কের মাঝে সমস্যা সৃষ্টি করবে।
একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সেবা নেওয়া, কাউন্সেলিং করানো এবং সম্পর্কের সমর্থণ চাওয়া উচিত। একটা সঠিক সঙ্গীর কাছে যখন একজন উদ্বেগের মধ্য দিয়ে যায়, তখন সে একজনের মানসিক অবস্থার ওপরে প্রভাব ফেলতে পারে এবং মোট ভুল ধারণার উন্মোচন ঘটে।
সামাজিক দিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার অন্যান্য একটি দিক হলো সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব। অনেক সময়, একটি স্বাস্থ্য সমস্যা অর্থনৈতিক বোঝা হতে পারে, যা বিয়ের পরবর্তী সাংসারিক জীবনে বিঘ্ন ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ, যেকোন অর্থনৈতিক সমস্যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের মানসিক অবস্থার ওপর আঘাত করতে পারে।
অর্থনৈতিক সুবিধা: বিয়ের পরে যদি কোনও একজনের শারীরিক সমস্যা হয় তবে চিকিৎসা খরচ, ঔষধের খরচ এবং অন্যান্য ব্যয়বহুল চিকিৎসার ঝুঁকি থাকে। এর ফলে স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং যোগাযোগের অভাব দেখা দেয়।
বিয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিষ্ঠিত নিয়মগুলো মহানভাবে কাজ করতে পারে। আমাদের নিজেদের এবং আমাদের সঙ্গীর জীবনকে নিরাপত্তা প্রদান করার জন্যও স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। সম্পর্কটি ধারাবাহিকভাবে চলছে কিনা বা তা সঙ্কটের শিকার হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করাও জরুরি।
রোগের প্রতিরোধ ও পরিবার পরিকল্পনা
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা যদি সঠিকভাবে হয়েছে, তবে পরবর্তীকালে রোগ প্রতিরোধ ও পরিবার পরিকল্পনাতে বড় ভূমিকা নিতে পারে। পরিবার পরিকল্পনা বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়ে গেলে, পরিবার পরিকল্পনাগুলো সঠিকভাবে প্রণয়ন করা সহজ হয়, বিশেষ করে গর্ভধারণের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে।
মায়ের শরীরের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভূত প্রভাব ফেলে সন্তানদের স্বাস্থ্য। তাই, বীজতলা নেওয়ার আগে যদি মা এবং বাবা উভয়েই সঠিক প্রস্তুতি নেয় তাহলে সন্তানীর জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
দাম্পত্য জীবনে শিশুর আগমন আমাদের জীবনের একটি বিশাল পরিবর্তন। শিশুর স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা যে সমস্ত দিকগুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখতে চাই তা একই সাথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্ব সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
এটি স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, আমাদের প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিরাপদ।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার উপায়
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরাসরি মেডিকেল প্রতিষ্ঠানে যাওয়া এবং ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা অতি জরুরি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন, তার পেছনে গভীরতর গবেষণাও প্রয়োজন। কিছু প্রিয়জনদের সঙ্গে আলোচনা করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপকারিতা এবং সাফল্যের কাহিনীগুলো ভাগাভাগি করতে দ্বিধা বোধ করবেন না।
একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে জিনিসগুলো পরিকল্পনা করা উচিত।
মনোগ্রাহী ডাক্তার বেছে নেওয়া: হাসপাতালে যাওয়ার আগে একজন সুপরিচিত ডাক্তার বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সময়সূচী তৈরি করা: স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি একটি সময়সূচী তৈরি করুন এবং সেটি নিশ্চিত করুন, যেন অফসর না হয়।
রোগ নির্ধারণে সঠিক তথ্য: রোগ নির্ধারণে তথ্য দিতে ভুলবেন না।
- ফলাফল বিশ্লেষণ করা: স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ফলাফল নিয়ে ডাক্তার একজনকে বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করবে।
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব বুঝতে হলে, পরিবারের সদস্যদের এবং বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা উচিত। সঠিকভাবে তথ্য নিয়ে জ্ঞানী হওয়ার ফলে সফলতারও সম্ভাবনা বাড়ে।
সতর্কতা ও শেষ কথাগুলি
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা অন্যান্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া আমাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় এবং স্বাস্থ্যবান করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে বিয়ের পরে সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় যখন একজনের স্বাস্থ্য সর্বাধিক নিশ্চিত থাকে, তখন ভবিষ্যতে সন্তানদের স্বাস্থ্যও অনেকাংশে ভালো হয়।
সুতরাং, বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি কেন, তা বুঝতে আমাদের সময় মনে রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। ব্যর্থতা সব সময় খারাপ ফলাফল নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু সঠিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে জীবনকে নিরাপদ এবং সুখী করে তুলতে পারে।
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি কেন, এটি কেবল স্বাস্থ্যগত দিক নয় বরং একটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। সুতরাং, সবার উচিত জীবনের মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতনভাবে বিবেচনা করা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
জেনে রাখুন-
Q1: বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোথায় ব্যবস্থা করা যায়?
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে অথবা কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। অনেক ক্লিনিকও পরীক্ষার সেবা প্রদান করে।
Q2: স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কি কি বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত?
স্বাস্থ্য প্রতিবেদনের মধ্যে রক্তের পরীক্ষা, যৌন সংক্রমণজনিত রোগ, এবং শারীরিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
Q3: মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার প্রয়োজন কেন?
মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষণায় দেখা যায় যে একজনের মানসিক অবস্থা সম্পর্কের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, যা একটি সুস্থ সম্পর্ক তৈরির জন্য অত্যাবশ্যক।
Q4: স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সঠিক সময় কখন?
বিয়ের অনুষ্ঠানের সাধারণত ৩-৬ মাস আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উত্তম।
Q5: বিয়ের পরেও কি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়?
হ্যাঁ, বিয়ের পরেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষ করে নতুন সন্তান আসার আগে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা চিহ্নিত করতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।