জুমবাংলা ডেস্ক : সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত নির্মাণশ্রমিক পাপ্পু দাস বলেন, ‘আমরা ৩০ জন সিলেট থেকে ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারে যাচ্ছিলাম। প্রতিদিন সকালে যাই, বিকালে ফিরে আসি। আমাদের পিকআপটি নাজিরবাজার যাওয়ার পর হঠাৎ বিপরীত থেকে একটি ট্রাক ডান পাশে চলে আসে। এটা দেখে আমাদের চালক রাস্তার উল্টো পাশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন ট্রাক আবার বাঁ পাশে চলে এলে দুই গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বিকট শব্দের পর কিছ বুঝতে পারি নাই। এরপর সারা শরীরে তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম। এরপর দেখি গাড়ির আশপাশে খালি রক্ত আর মানুষ। কে জীবিত আর কে মারা গেছে, কিছু বোঝার উপায় নাই।’
বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উপজেলার নাজিরবাজারের কুতুবপুরে বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে একটি পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। নিহত সবাই নির্মাণশ্রমিক। আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে এ ভাবেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন আহত পাপ্পু দাস।
আহত অন্য শ্রমিকরা জানান, তারা নগরের আম্বরখানা বড়বাজারের একটি মেসে থাকেন। প্রতিদিন ঠিকাদারদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সাইটে গিয়ে ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করেন। প্রতিদিনের মতো আজও পিকআপে করে গোলায়াবাজারে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজে যাচ্ছিলেন তারা। দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারের কুতুবপুরে এলে বিপরীত থেকে আসা বালুবাহী দ্রুতগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তবে শ্রমিকরা গোয়ালাবাজার এলাকায় কোনো সাইটে বা কোনো ঠিকাদারের অধীনে কাজে যাচ্ছিলেন কি না, তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
আহত শ্রমিকদের ধারণা, উল্টো দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ট্রাকটির চালক সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাই ট্রাকটি একবার রাস্তার ডানে ও আরেকবার বাঁয়ে আসছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যেই ট্রাকটি শ্রমিকবাহী পিকআপ ভ্যানটির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা খায়।
দুর্ঘটনার মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে চিকিৎসাধীন শ্রমিক পল্লব বলেন, ‘আমরা নগরীর আম্বরখানা বড়বাজারে থাকি। প্রতিদিন সকালে আমাদের পিকআপে করে সাইটে নিয়ে যাওয়া হয়। কাজ শেষে আবার পিকআপে করে ফিরিয়ে আনা হয়। ট্রাকের চালক সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিল। ট্রাকটি একবার রাস্তার ডান দিকে যায়, আবার বাঁ দিকে আসে। এতে আমাদের চালকও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল।’
কান্নাভেজা গলায় তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের অনেক সহকর্মী আর ফিরতে পারলেন না।’
দুর্ঘটনায় নিহতদের দেহ ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছেন হতাহতদের স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে পুরো এলাকায় নেমে আসেছে শোকের আবহ। কেউ স্বামী, কেউ ভাই হারিয়ে বিলাপ করছিলেন। এ ছাড়া জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষায় রয়েছেন ভর্তি থাকা আহতদের উদ্বিগ্ন স্বজনরা।
ওসমানী হাসপাতালের মর্গের সামনে দায়িত্বরত সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মরদেহ আনা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।