আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চার বছর স্বেচ্ছায় নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আদালত থেকে শাস্তি মওকুফ হওয়ার পাশাপাশি রাজনীতিতে ফেরার সব বাধাও দূর হয়েছে। গতকাল শনিবার দেশে ফেরার কয়েক ঘণ্টা পরেই লাহোরে এক বিশাল জনসমাবেশে যোগ দেন নওয়াজ শরিফ।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমাবেশে নিজের শাসনামলে তাঁর সরকারের অর্জনের কথা তুলে ধরেন পাকিস্তানের তিনবারের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যের ফাঁকে একটি ‘গোপন তথ্য’ ফাঁস করেছেন নওয়াজ শরিফ। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন সম্পর্কে এমন এক তথ্য তিনি দিয়েছেন, যা আগে কখনো সামনে আসেনি।
নওয়াজ শরিফ বলেছেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তাঁকে ৫০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়ে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার ‘উপযুক্ত জবাব’ দিয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছায় চার বছর নির্বাসনে থাকার পর ৭৩ বছর বয়সী নওয়াজ শরিফ গতকাল দুবাই থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে পাকিস্তানে ফিরেছেন। নিজের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) নেতৃত্ব দিতে ও জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো লড়তেই তিনি দেশে ফিরেছেন।
গতকাল স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে নওয়াজ শরিফ একটি হালকা নীল রঙের কুর্তা পায়জামা, কালো কোট ও মেরুন রঙের মাফলার পরিধান করে ‘উমিদ-ই-পাকিস্তান’ চার্টার্ড বিমানে ইসলামাবাদের উদ্দেশে দুবাই ছাড়েন।
ইসলামাবাদে ঘণ্টা দুয়েক অবস্থান করেই যাত্রা করেন লাহোরে। সেখানে একটি বিশাল জনসমাবেশে বক্তব্য দেন। লাহোরকে বলা হয় পিএমএল-এনের শক্ত ঘাঁটি।
সমাবেশে উল্লসিত জনতার উদ্দেশে নওয়াজ বলেন, ‘আমি আজ অনেক বছর পর আপনাদের মাঝে ফিরলাম। তবে আপনাদের সঙ্গে আমার ভালোবাসার সম্পর্কে একটুও চিড় ধরেনি, বরং আগের মতোই রয়েছে। আমি আপনাদের চোখেমুখে যেই ভালোবাসা দেখছি, তাতে আমি গর্বিত।’
সমাবেশে তিনি ১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার জবাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত বাতিলে আন্তর্জাতিক পরাশক্তির চাপের বিষয়ে মুখ খোলেন।
নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের জন্য ক্লিনটন আমাকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এটা ১ বিলিয়ন ডলারও হতে পারে, ঘটনাটি ১৯৯৯ সালের। পররাষ্ট্র দপ্তরে এসবের রেকর্ড আছে। কিন্তু আমি পাকিস্তানের মাটির সন্তান, তাই দেশের স্বার্থ পরিপন্থী কাজ আমি প্রত্যাখ্যান করেছি।’
এ সময় তিনি নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খানকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘আপনারা আমাকে বলুন, যদি আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকত, আপনারা জানেন তিনি কে। তিনি কি আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সামনে এই কথা বলতে পারতেন?’
মিনার-ই-পাকিস্তানে নিজ দলের সমাবেশে নওয়াজ শরিফ প্রায় ৬০ মিনিট বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিলাম এবং ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলাম। এই কারণেই কি আমাদের বিরুদ্ধে আদালতের রায় ঘোষণা করা হয়েছিল?’
উল্লেখ্য, পাকিস্তান প্রথম প্রকাশ্যে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় ১৯৯৮ সালের ২৮ মে। বেলুচিস্তান প্রদেশের চাগাই জেলার রাস কো পাহাড়ে চাগাই-১ নামের ওই বোমা ভূগর্ভে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই বছরের ১১ ও ১৩ মে পাঁচটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় ভারত।
এরপরই দুই দেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ কয়েকটি দেশ। প্রথম প্রকাশ্য পরীক্ষার পরই পাকিস্তান সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ১৯৯৮ সালের ৩০ মে দ্বিতীয় পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় পাকিস্তান।
প্রথম পরীক্ষাটি না চালাতে পাকিস্তানকে রাজি করানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালালে আঞ্চলিক অস্থিরতা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছাবে এবং এর জন্য পাকিস্তানকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্য দিতে হবে।
১৯৯৮ সালের ২৯ মে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে মার্কিন প্রশাসনের সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, ওই বছরের ১১ মে ভারত পারমাণবিক বোমার প্রথম পরীক্ষা চালানোর পর থেকেই পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিল ক্লিনটন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তিনি যদি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন তাহলে ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্ক ‘অন্য রকম’ হতে পারে। আরও ঘনিষ্ঠতা অর্থেই এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন ক্লিনটন। শুধু তা-ই নয়, পাকিস্তানকে ২৮টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ এবং সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তায় সব বাধা দূর করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তান এই বিমানগুলোর জন্য অনেক আগেই অর্থ পরিশোধ করেছিল।
সুস্মিতা সেনের পূজামণ্ডপে কোমরে শাড়ি বেঁধে নাচার ভিডিও ভাইরাল
১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ এবং উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র পেয়েছে পাকিস্তান। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে মুজাহিদিনদের বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইএ) সহায়তা করেছে পাকিস্তান। এসব অস্ত্র পাকিস্তান হয়ে অবৈধ পথে মুজাহিদিনদের হাতে পৌঁছাত।
কিন্তু ১৯৮৯ সালে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটলেও এ সহায়তা অব্যাহত থাকে। ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে জানায়, পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে, এটি তারা এক দশক আগে থেকেই জানত। জানার পরও এভাবে পাকিস্তানকে সহায়তা দিয়ে যাওয়া ওয়াশিংটনের ভুল ছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।