জুমবাংলা ডেস্ক : দিনের বেলা সুনসান নীরবতা সন্ধ্যা হলেই পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠে হাওর পাড়ের একটি বাড়ি। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখলে মনে হবে এ যেন পাখিদের স্বর্গরাজ্য। পাখির কিচিরমিচির আর কলকাকলিতে মুখর এ বাড়িটিতে সন্ধ্যা নামতেই দেখা মেলে নানান প্রজাতির পাখি। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখিপ্রেমীরা। বলা হচ্ছে, মৌলভীবাজার জেলার কাউয়াদীঘি হাওর পাড়ের বড়কাপন এলাকার মাহমুদ রহমানের বাড়ির কথা।
সরজমিনে পাখির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নানান প্রজাতির পাখি ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে বাড়ির গাছ-গাছালির এক ঢাল থেকে অন্য ঢালে। সকাল-সন্ধ্যা ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কোলাহল মুগ্ধতা ছড়ায় চারিদিকে। এসব পাখি সকাল হলেই বেড়িয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে আবার সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে আসে তাদের আপন কুটির সেই পাখির বাড়িতে।
বাড়ির মালিক মাহমুদ জানান, ২০০৭ সালের মার্চ মাস থেকে এ বাড়িতে আসা শুরু করে দেশি-বিদেশি নানান প্রজাতির পাখি। স্থানীয়দের ভালোবাসায় পাখিগুলো রীতিমতো নিজেদের অভয়াশ্রমে পরিণত করেছে বাড়িটিকে। সেখানে নেই কোনো পাখি শিকারিদের উৎপাত। কোনো ডানপিটে ছেলে ঢিল ছুঁড়ে মারে না পাখির বাসায়। বরং তারা আপন করে নিয়েছে পাখিদের। বাড়ির লোকজন ও গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে পাখির স্থায়ী বাসস্থান। শীতের শুরুতে তাদের আনাগোনা বাড়লেও বর্ষা আসলেই কিছু দিনের জন্য অন্যত্র চলে যায়। বক, শালিক, ময়না, ঘুঘু, চড়ুই, পানকৌড়ি বালিহাস নানান প্রজাতির পাখির বাস এ বাড়িতে।’
বাড়িটির গৃহিণী আসমা বেগম বলেন, ‘সকালে পাখিগুলো খাবারের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে। আবার সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই ঝাঁকে ঝাঁকে দলবেঁধে ফিরে আসে এ বাড়িতে। গাছ-গাছালির আধিক্য থাকায় গ্রামের অন্যান্য বাড়ি থেকে এ বাড়ির পরিবেশ আলাদা। সেজন্যই পাখিরা এ বাড়িতে বাসা বেঁধেছে।’
স্থানীয় সমাজকর্মী মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মাহমুদ রহমানের পাখির বাড়ি ছাড়াও বড়কাপন এলাকার সর্বত্র পাখিদের অভয়ারণ্য। বাড়িটি দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই পাথির আনাগোনায় মুখর থাকে। পাখির কিচিরমিচির আর কলকাকলি শুনতে বেশ ভালোই লাগে। এ গ্রামে কেউ পাখি শিকার করে না। কেউ পাখিদের বাসা ঢিল ছুঁড়ে বিরক্তও করে না। নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ছুটে আসে অসংখ্য পাখি। মাঝে মাঝে পরিযায়ী পাখিরও দেখা মেলে।’
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘সরকারি উদ্যোগে পাখির সুরক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। বড়কাপন এলাকার মাহমুদ মিয়ার বাড়িটিকে পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। যা পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
সিলেট বিভাগীয় বন্যপ্রাণী কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে ওই বাড়িটি ও আশেপাশের এলাকা পাখির অভয়ারণ্য এবং নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে হিসেবে গড়ে উঠবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।