বিশ্বের সবচেয়ে বিরল রক্ত: প্রতি ১০ লক্ষে একজনের শরীরে!

লাইফস্টাইল ডেস্ক : রক্তদান একটি মহৎ কাজ। তবে রক্তদানের আগে নিজের রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত আমরা এ, বি, এবি ও ও পজিটিভ ও নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের নাম জানি। কিন্তু এমন একটি রক্তের ধরন রয়েছে, যা এতটাই বিরল যে প্রতি ১০,০০০ ভারতীয়ের মধ্যে মাত্র একজনের শরীরে এটি পাওয়া যায়। এর নাম ‘বম্বে ব্লাড গ্রুপ’।

সম্প্রতি, এক ৩০ বছর বয়সী ভারতীয় নারীর কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তাঁর রক্তের গ্রুপ নিয়ে। তাঁর রক্তের ধরন ছিল ‘hh’, যা বম্বে ব্লাড গ্রুপ নামে পরিচিত। ১৯৫২ সালে মুম্বইতে প্রথম এই গ্রুপ আবিষ্কৃত হয় এবং সেখান থেকেই এর নামকরণ হয় “বম্বে ব্লাড গ্রুপ”।

এই বিরল রক্তের গ্রুপে শরীরে H অ্যান্টিজেন অনুপস্থিত থাকে। ফলে শরীর A বা B অ্যান্টিজেন তৈরি করতে পারে না। এই কারণে এই গ্রুপের রক্তধারীরা শুধুমাত্র HH গ্রুপের মানুষের কাছ থেকে রক্ত নিতে পারেন। তারা O-, A, B বা AB কোনও সাধারণ রক্তগ্রুপ গ্রহণ করতে পারেন না।

এই গ্রুপ এতটাই বিরল যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.০০০৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৪০ লক্ষে একজন এই গ্রুপের অধিকারী। ইউরোপে প্রতি ১০ লক্ষে একজন এবং মুম্বইতে প্রতি ১০ হাজারে একজনের মধ্যে এই গ্রুপ দেখা যায়। এত অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে এই গ্রুপ থাকায় রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, রক্ত পরীক্ষার সময় এটি সাধারণত O গ্রুপ হিসেবে ধরা পড়ে, কারণ এতে A বা B অ্যান্টিজেন থাকে না। তবে ক্রস-ম্যাচিংয়ের সময় স্পষ্ট হয় এটি কোনও সাধারণ গ্রুপ নয়।

বিশ্বে আরও একটি অত্যন্ত বিরল ব্লাড গ্রুপ রয়েছে ‘Rh Null’, যা ‘গোল্ডেন ব্লাড’ নামেও পরিচিত। বিশ্বের ৮০০ কোটির বেশি মানুষের মধ্যে মাত্র ৪৫ জনের শরীরে এই রক্ত পাওয়া গেছে। এই গ্রুপে Rh ফ্যাক্টর একেবারেই অনুপস্থিত।

Rh Null রক্তের ক্ষেত্রে RBC-র পৃষ্ঠে কোনো Rh প্রোটিন থাকে না, ফলে এই রক্ত প্রায় সকলের সঙ্গেই মিলিয়ে ব্যবহার করা সম্ভব। তাই একে বলা হয় ‘গোল্ডেন ব্লাড’। তবে এই রক্ত সংরক্ষণ ও পরিবহন অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়বহুল।

সাধারণত এটি ভবিষ্যতে সেই ব্যক্তিকেই দেওয়ার জন্য সংরক্ষণ করা হয়। এই বিরল গ্রুপের রক্তধারীরা প্রায়ই রক্তাল্পতার সমস্যায় ভোগেন, এবং তাঁদের আয়রনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।