জুমবাংলা ডেস্ক : সম্প্রতি সৌদি আরব বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের জন্য ‘ব্লক ওয়ার্ক ভিসা’ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এই সিদ্ধান্তটি বিশ্বজুড়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে কাজ করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য এটি এক বড় ধাক্কা। কিন্তু, ব্লক ওয়ার্ক ভিসা কি? কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ? চলুন বিশদভাবে জানি।
Table of Contents
ব্লক ওয়ার্ক ভিসা কি এবং এর কার্যকারিতা
ব্লক ওয়ার্ক ভিসা হলো এমন একটি ভিসা প্রক্রিয়া যেখানে সৌদি আরবের কোনো নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি নির্দিষ্ট সংখ্যক বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের জন্য একটি কোটা অনুমোদন করে। এই প্রক্রিয়ায়, নিয়োগকর্তা আগে থেকেই নির্ধারিত পেশাগত প্রোফাইলে শ্রমিক নিয়োগের জন্য অনুমতি নিয়ে রাখেন। একবার এই কোটা অনুমোদিত হলে, কোম্পানিটি নির্ধারিত সংখ্যা অনুযায়ী শ্রমিকদের ওয়ার্ক এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারে। একে অনেক সময় গ্রুপ ভিসা বলেও ডাকা হয়।
এই কোটা সিস্টেমের মাধ্যমে বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প, কারখানা বা বিভিন্ন সেবা খাতে শ্রমিক সরবরাহের একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি হয়। এটি একদিকে যেমন নিয়োগদাতাকে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সাহায্য করে, অন্যদিকে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য সৌদি আরবে কাজের সুযোগও তৈরি করে।
সৌদির সাময়িক স্থগিতাদেশ: কী ঘটছে ২০২৫ সালে?
২০২৫ সালের মে মাসে সৌদি আরব এক সরকারি ঘোষণায় জানিয়েছে যে তারা ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, জর্ডান, আলজেরিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন ও মরোক্কোসহ মোট ১৪টি দেশের জন্য ব্লক ওয়ার্ক ভিসা কোটা স্থগিত করেছে। এই স্থগিতাদেশ আগামী জুন ২০২৫ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এই সিদ্ধান্ত সৌদির মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়েছে এবং এর মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আসন্ন হজ মৌসুম এবং অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষা। এটি মূলত সৌদির ভেতরে বাড়তি চাপ সামলাতে ও নিয়ন্ত্রক কার্যক্রমকে সুশৃঙ্খল রাখতে গৃহীত পদক্ষেপ।
বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রভাব
বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে প্রতি বছর হাজার হাজার শ্রমিক যায় কাজ করতে। এই অস্থায়ী স্থগিতাদেশ সরাসরি এই অভিবাসন প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কোনো ভিসা না থাকায় তাদের বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়া থমকে গেছে।
বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে এবং বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ করছে। তবুও, যারা ভিসা প্রক্রিয়ার মাঝপথে ছিলেন, তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
ব্লক ওয়ার্ক ভিসা সংক্রান্ত সাধারণ তথ্য
১. কত দিনের জন্য এই ভিসা অনুমোদিত থাকে?
সাধারণত ব্লক ওয়ার্ক ভিসা অনুমোদিত হওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যে এর ব্যবহার করতে হয়। নির্দিষ্ট কোম্পানি বা নিয়োগকর্তার চাহিদা অনুযায়ী এই মেয়াদ নির্ধারিত হয়।
২. কীভাবে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়?
নিয়োগকর্তা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দেশ থেকে প্রার্থী নির্বাচন করে এবং সে অনুযায়ী আবেদন করে। এটি কোনো খোলা আবেদন পদ্ধতি নয়; বরং একটি পূর্বনির্ধারিত নিয়োগ প্রক্রিয়া।
৩. ব্লক ওয়ার্ক ভিসা ও সাধারণ ওয়ার্ক ভিসার পার্থক্য কী?
ব্লক ওয়ার্ক ভিসা একটি কোটা-ভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতি, যেখানে একাধিক প্রার্থী একযোগে নিয়োগ পায়। সাধারণ ওয়ার্ক ভিসা ব্যক্তিগতভাবে একজন ব্যক্তির পক্ষে আবেদন করা হয়।
৪. এই ভিসার সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা কী?
- সুবিধা: দ্রুত নিয়োগ, নিয়োগদাতার জন্য সহজ নিয়ন্ত্রণ, নির্দিষ্ট পেশাগত প্রোফাইল।
- সীমাবদ্ধতা: নির্দিষ্ট কোটা ছাড়া আবেদন করা যায় না, সাময়িক স্থগিতাদেশে ব্যাপক প্রভাব।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের করণীয়
এই সাময়িক স্থগিতাদেশের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি শ্রমিকদের উচিত হালনাগাদ তথ্যের উপর নির্ভর করা এবং কোনো ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পড়া থেকে বিরত থাকা। সরকারি অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমেই আবেদন করা সর্বোত্তম।
এছাড়াও, যারা ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন বা মেডিকেল ও ইন্টারভিউ শেষ করেছেন, তাদের উচিত নিয়মিত ভিসা স্ট্যাটাস চেক করা এবং প্রয়োজনে দালালদের না জড়িয়ে সরাসরি তথ্য জানা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সচেতনতা এবং ধৈর্যই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
ব্লক ওয়ার্ক ভিসা কি — এই প্রশ্নের উত্তর এখন আরও জোরালোভাবে সামনে এসেছে। এর গুরুত্ব, প্রভাব এবং বর্তমান স্থগিতাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য অত্যাবশ্যক।
FAQs
১. ব্লক ওয়ার্ক ভিসা কি?
ব্লক ওয়ার্ক ভিসা হলো একটি কোটা-ভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থা, যা সৌদি আরবের কোম্পানিগুলোকে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের অনুমতি দেয়।
২. ব্লক ওয়ার্ক ভিসা স্থগিত হওয়ার অর্থ কী?
এটি অর্থ যে, নির্দিষ্ট কিছু দেশের নাগরিকরা সাময়িকভাবে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবে না। এতে নতুন নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়।
৩. কেন সৌদি আরব এই ভিসা স্থগিত করেছে?
হজ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ সহজ করতে এবং ভ্রমণ ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
৪. কারা এই ভিসা স্থগিতের আওতায় পড়েছেন?
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ মোট ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য এই স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে।
৫. পুনরায় কবে চালু হতে পারে?
বর্তমানে এটি ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত স্থগিত, তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী বর্ষার ওপর বর্বর হামলা, ছাত্রসমাজের জবাবদিহির ডাক
৬. ব্লক ওয়ার্ক ভিসা ছাড়াও অন্য ভিসা বন্ধ আছে কি?
হ্যাঁ, সাময়িকভাবে ওমরাহ, ব্যবসা এবং পারিবারিক ভিজিট ভিসাও স্থগিত করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।