চট্টগ্রামে বিএনপির চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনি প্রচারণার সময় প্রকাশ্যে গুলি করে সরোয়ার হোসেন বাবলা হত্যা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত করেছে, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে নিহত বাবলার বাবা আব্দুল কাদের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী বা বড় সাজ্জাদকে, যিনি মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সাতজনকে নাম উল্লেখসহ আরও ১৪–১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুই যুগ ধরে বিদেশে বসে বড় সাজ্জাদ চট্টগ্রামের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে। তার নির্দেশে চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক আধিপত্য, ভবন নির্মাণে প্রভাব বিস্তারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। রায়হান বর্তমানে বড় সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সব অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
র্যাব শুক্রবার ভোরে চান্দগাঁও থানার হাজীরপুল এলাকা থেকে আলাউদ্দিন ও হেলাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশও ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত দুজন ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে, তবে মামলার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।
বাবলার মৃত্যু নিশ্চিত করতে ৭.৬২ বোরের বিদেশি পিস্তল ব্যবহার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, বাবলাকে খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। প্রথম তিনটি গুলির পর বাবলা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, এরপর আরও কয়েক রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, সরোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, কিলিং মিশনে জড়িত চারজনের নাম: রায়হান (পূর্ব রাউজান), মোবারক হোসেন ইমন (ফটিকছড়ি), বোরহান (খুলশী সিডিএ), মো. খোরশেদ (রাউজান)।
গণসংযোগ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হওয়া এরশাদ উল্লাহকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার বুকের ডানপাশ ও পায়ে গুলি লাগে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত এবং উন্নত চিকিৎসা চলছে।
বিএনপি বলছে, সরোয়ার তাদের কেউ নন। জনসংযোগে শত শত লোক অংশ নেন। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাঁর প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনকে গুলি করা হয়।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগের সময় সেখানে শত শত লোক অংশ নেন। ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় প্রাইভেট কারে থাকা দুজন ঘটনাস্থলে মারা যান। সেদিন প্রাইভেট কারে সরওয়ার থাকলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। পরে এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে ও পুলিশকে জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে বাবলাকে গুলি করা হয়।
সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত সরোয়ার বাবলা গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিয়ে করেন। তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ, আবু সুফিয়ানসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের ছবি এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। দীর্ঘদিন সন্ত্রাসী তকমা নিয়ে থাকা বাবলা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায় সরোয়ারকে।
এর ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেন সরোয়ার। তবে মাগরিবের নামাজের পরপর এলোপাতাড়ি গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে নগরের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



